ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • পায়ের তলায় মরচে

    পৃথ্বী বসু (February 14, 2021)
     

    যতদূর মনে পড়ছে, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পে পড়েছিলাম, বেড়াতে না যাওয়া এক ভ্রমণকাহিনির কথা। দু’জন মানুষ নানান পরিকল্পনা করার পরেও, যাওয়ার দিন বাড়িতে বসে থাকে। আর শেষ পর্যন্ত কোথাওই যাওয়া হয়ে ওঠে না তাদের।

    ২০২০ সালের জীবনে, আমাদের অনেকেই, ওই দু’জন মানুষের মন বয়ে নিয়ে বেড়িয়েছি। স্বেচ্ছায় নয় যদিও, দায়ে পড়ে। অতিমারীর প্রকোপে যখন সবাই ঘরে বন্দি দিনের পর দিন, সেই সঙ্গে আই.আর.সি.টি.সি-র ট্রেন বাতিলের মেসেজ বানচাল করে দিল সমস্ত কিছু— তখন কোথায় রইল পাহাড়, কোথায়ই বা সমুদ্র! ডাকঘরের অমলের মতো জানলার ধারে চোখ রেখে শুধুই কাল্পনিক ভ্রমণ।

    হ্যাঁ, এই কাল্পনিক ভ্রমণই এখন আমাদের বেশির ভাগের কাছে প্রকৃত ভ্রমণ। যারা কথায় কথায় উইকএন্ডে দীঘা কিংবা মন্দারমণি গিয়ে নেশা করে ডিঙি নৌকার মতো ভেসে পড়ত, তাদের হল ঝক্কি। এবং যারা বছরে তিন-চার বার কম করেও এদিক-ওদিক যায়, তাদেরও। টানা সাত-আট মাস বাড়িতে থেকে থেকে এতদিনে নির্ঘাত তাদের পায়ের তলায় মরচে পড়ে গেছে। অবশ্য এখন পরিস্থিতি খানিক আলাদা। মরচে আমারও পড়ে যেত, যদি না গত বছরের শেষে একবার ঝাড়গ্রাম, আর একবার পুরুলিয়া থেকে ঘুরে আসতে পারতাম!

    নবমীর দিন গাড়ি ছুটল ঝাড়গ্রামের দিকে। আর এই প্রথম অনুভব করলাম, বেড়াতে যাওয়ার জন্য মূলে যা লাগে, তা টাকা নয়— সাহস। এই বিপুল পৃথিবীর কোথায় যে ভাইরাস আছে তা জানি না, অথচ আমাদেরই দায়: তাকে খুঁজে নিয়ে মেরে ফেলতে হবে। ভ্রমণ তো নয়, যেন হাল্লা চলেছে যুদ্ধে। ঢাল মাস্ক, সঙ্গে অস্ত্র স্যানিটাইজার। যাক সে কথা, ঝাড়গ্রামে ছিলাম মাত্র দু’দিন। দেখার বলতে, চিল্কিগড় রাজবাড়ি, কনকদুর্গার মন্দির আর ডুলুং নদী। ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি সে-সময়ে পর্যটকদের জন্য বন্ধ ছিল।

    চিল্কিগড় রাজবাড়ি

    চিল্কিগড় রাজবাড়ি যেতে হলে ঝাড়গ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৩/১৪ কিলোমিটার যেতে হয়। সামন্তরাজা গোপীনাথ সিংহের আমলে তৈরি এই বাড়ির বয়স তিনশো বছরেরও বেশি। তোরণদ্বার পেরিয়ে বিরাট খোলা মাঠের বাঁ-দিকে প্রাচীন একটা অশ্বত্থ গাছ, পাশে তিনটে মন্দির, আর ডানদিকে মূল রাজার বাড়ি। এই চিল্কিগড় থেকেই এক সময়ে ধল বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল। অদূরে যে কনকদুর্গার মন্দির, তাও রাজা গোপীনাথেরই আমলে তৈরি। অবাক হয়ে গেছিলাম এই মন্দিরে ঢুকে। সামনে একটা হাড়িকাঠ, চারদিক ঘেরা। জানা গেল, কিছু বছর আগেও এখানে নাকি নরবলি হত! এখন ওই প্রান্তিক অঞ্চলের লোকাচারের দায়িত্ব নিয়েছে রাষ্ট্র। ফলে মন্দিরে নরবলির ইতি। মন্দির-লাগোয়া বিরাট ভেষজের জঙ্গলও দেখবার মতো।

    কনকদুর্গার মন্দির

    পরের দিন সদর ছাড়িয়ে জঙ্গল-পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে প্রথমে ঢাঙ্গিকুসুম গ্রাম, পরে কাঁকড়াঝোর। এখনও চোখে লেগে আছে সেই দৃশ্য, একটা সাপ রাস্তা দু’ভাগ করে ঢুকে যাচ্ছে জঙ্গলের দিকে। বিকেল গড়িয়ে আকাশ লাল। আর আমার পাশে দাঁড়িয়ে শিল্পী সঞ্জীব চৌধুরী আমাকে ডেকে বলছে, ‘ভাবতে পারিস, এই সমস্ত অঞ্চলটাই একদিন সরকারি সিদ্ধান্তে রক্তে লাল হয়ে গেছিল…’

    কাঁকড়াঝোড় যাওয়ার পথে

    ঝাড়গ্রাম ফেরত কিছুদিন যেতে না যেতেই, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি একদিন, পুরুলিয়া থেকে রঞ্জনদার (আচার্য) ফোন, ‘পৃথ্বী, লিট্ল‌ ম্যাগাজিন মেলা করব ভাবছি, আসবি তো?’ আসব না মানে? মনে মনে কতবার যে ভেবেছি! ফলে লাফাতে লাফাতে ২৪ ডিসেম্বর রাতে কলকাতা থেকে পুরুলিয়ার বাস। দলে চারজন। নেশার চোখ কখন কী আবিষ্কার করে, আগে থেকে বলা মুশকিল। জানলার ধারে বসে হঠাৎ-হঠাৎ দেখে ফেলা চাঁদকে না হলে কেনই বা বাবার কড়া নজরের মতো মনে হবে? যেন একবার করে শুধু দেখে চলে যাচ্ছে। ঠান্ডা, অথচ তীব্র লাল চোখ। নেশা কেটে গেল পুরুলিয়ায়, ভোরে। বহু দিন পরে অনেকের সঙ্গে দেখা, আড্ডা। হইহই চলল টানা তিনদিন। এরই মাঝখানে একদিন ঘুরে এলাম তুংতা গ্রাম। পুরুলিয়া থেকে ঘন্টাখানেকের রাস্তা। দেউলঘাটার ঠিক পিছনে। তিরতির করে বয়ে চলেছে কাঁসাই নদী। চারপাশ ফাঁকা। কেন জানি না, পুরুলিয়ায় গেলেই মনে হয়, আমি বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর কোনও সিনেমার চরিত্র। আর ওই রুক্ষ নির্জনতার সৌন্দর্য আমাকে গিলে নেয়। উন্মাদ করে তোলে।

    পুরুলিয়া লিট্‌ল ম্যাগাজিন মেলা

    এখন আবার সেই ধোঁয়া-ধুলোর ঝঞ্ঝাটে পাক খাওয়ার দিন। সন্ধেয় মনে পড়ে, কবিতার সেই পংক্তি, যেখানে বলা হয়েছিল আলো দ্বারা শহরের ধর্ষিত হওয়ার কথা। রাতে স্বপ্ন দেখি, আবার সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে দ্রুত। মনে কোনো খচখচানি না রেখেই, নিয়মিত বেড়াতে যাওয়ার দিনগুলো আরও এগিয়ে আসবে কাছে।

    ছবি : লেখক

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook