ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • ‘ফুলে’ ও ব্রাহ্মণ্যবাদ

    সম্প্রীতি চক্রবর্তী (April 25, 2025)
     

    সম্প্রতি অনুরাগ কাশ্যপের একটি মন্তব্যে সোশ্যাল মিডিয়া বেশ সরগরম। ভারতীয় জাতব্যবস্থার শীর্ষে বসে থাকা ব্রাহ্মণদের নিয়ে কেন এমন মন্তব্য করলেন কাশ্যপ, সেই নিয়ে যতটা আলোড়ন তৈরি হয়েছে, তাতে ওঁর বক্তব্যের আগের ঘটনাগুলোকে বেশ লঘু করে দেখানো সম্ভব। অর্থাৎ, এক উচ্চবংশীয় সম্প্রদায়কে কটু কথা বলার জন্য যেভাবে মিডিয়া নিউজ ফ্ল্যাশ করছে, তার কিয়দংশ প্রচার যদি ‘ফুলে’ সিনেমার সেন্সারশিপের সময় হত, তাহলে কার্যকারণ পদ্ধতিতে কাশ্যপের রাগ বা কটুক্তিকে যথাযথভাবে বোঝা সম্ভব ছিল। ক্লিকবেট বা আজকের সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এইরকম ঝাঁঝালো মন্তব্য হয়তো বেশি নজর কাড়ে, তাই যে কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে খবরের শিরোনাম তৈরি হলে তার পিছনের আসল খবরটাকে একেবারে তলানিতে নিয়ে এসে পরোক্ষ কারণ হিসেবে দেখানো সম্ভব হয়।

    সংবাদের শিরোনাম কখনওই এই প্রশ্নকে গুরুত্ব দেয় না যে, ১১ এপ্রিল, জ্যোতিবারাও ফুলের জন্মদিনে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি, প্রাথমিকভাবে সেন্সর বোর্ডের সব পরীক্ষায় পাশ করলেও, শেষ মুহূর্তে এসে বাঁধার সম্মুখীন হল কেন? ‘অখিল ভারতীয় ব্রাহ্মণ সমাজ’ এবং ‘পরশুরাম আর্থিক বিকাশ মহামণ্ডল’, এই দুই প্রতিষ্ঠানের আপত্তিতে আটকে গেল সাবিত্রীবাই ও জ্যোতিবারাও ফুলের জীবন নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র। মহারাষ্ট্রের ব্রাহ্মণদের নেতিবাচক রূপে দেখানো হয়েছে, এই মর্মে ছবিটি নিয়ে আপত্তির ঝড়। অর্থাৎ, দলিতদের জীবন দেখানো যেতে পারে, কিন্তু তাতে ব্রাহ্মণদের নিয়ে কুৎসা করা যাবে না। মানে ধরা যাক, দীনবন্ধু মিত্রর ‘নীলদর্পণ’ দেখানো হবে, কিন্তু নীলকরদের নিয়ে সেখানে মন্তব্য করা নিষেধ।

    আরও পড়ুন : কেন বিতর্ক দানা বেঁধেছিল এই দক্ষিণ ভারতীয় ছবিটি?
    লিখছেন ভাস্কর মজুমদার…

    অত্যন্ত আপাতবিরোধী বা প্যারাডক্সের মতো শোনালেও, ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরোধিতা করলে আজকে যে দু’পা পিছিয়ে আসতে হবে, সেই নিয়ে খুব একটা সংশয় নেই। ক্ষত্রিয়দের শৌর্যবীর্যর ‘ছাবা’ থেকে শুরু করে পৌরুষত্বের লম্ফঝম্প ‘অ্যানিম্যাল’ অবধি সেন্সর বোর্ডের পরীক্ষা অনায়াসে অতিক্রম করতে পারে— তা নিয়ে অ্যান্টি-কাস্ট অ্যাক্টিভিস্ট বা মহিলা সুরক্ষা কমিশন গলা ফাটালেও কিছু পরিবর্তন হয় না। কিন্তু আজকের ভারতে সাবিত্রীবাই ফুলেকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র অনায়াসে বন্ধ করে দেওয়া যায়।

    প্রশ্ন জাগে, ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরোধিতা নিয়ে সর্বকালেই কি এই ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছিল? আম্বেদকর বা পেরিয়ারের কথা ইতিহাস বইয়ে পড়েছি, ক্লাসরুমে আম্বেদকরের মনুসংহিতা পোড়ানো বা পেরিয়ারের ‘anti brahmin’ অভিমতগুলো সূক্ষ্মভাবে পড়তে হয়েছে। পাঠ্য বই বা গবেষণামূলক প্রবন্ধ ছাড়াও ব্রাহ্মণ্যবাদ বিরোধিতার নজির কি আমরা আগে দেখিনি?

    ‘ফুলে’ ছবিতে প্রতীক গান্ধী ও পত্রলেখা

    শিল্প, সাহিত্য বা চিত্রকলায় ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরোধিতার প্রসঙ্গে অবশ্যই মনে পড়ে যায় গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যঙ্গচিত্র। ১৯১৭ সালের আঁকা তাঁর ১৬টি লিথোগ্রাফের মধ্যে একটি হল ব্রাহ্মণ পণ্ডিতকে কেন্দ্র করে। এই ব্যঙ্গচিত্রে দেখা যায় অস্বাভাবিক দেহের পৈতেধারী এক ব্রাহ্মণ একহাতে আধমরা মুরগি, অন্য হাতে ডিম, মদ এবং পিঠে এক মহিলাকে বসিয়ে রেখেছেন, যিনি আবার হুক্কা বাগিয়ে ঘরের জানলা দিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছেন বেদ-বেদান্তের পাতা। ব্যঙ্গচিত্রের নিচে লেখা ‘ব্রাহ্মণের অবিনাশী পবিত্রতা’। ১৯১৭ সালের এই ব্যঙ্গচিত্র আজ কতটা সর্বসমক্ষে আঁকা যেত, সেই প্রশ্ন করার আগে আমরা যদি ফিরে যাই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। 

    ভারতের ইতিহাসে এবং ঐতিহ্যে ‘blasphemy’ বা ধর্মনিন্দার সংজ্ঞাটা ঠিক কী? এই প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ইন্ডোলজিস্ট এবং আমেরিকান গবেষক Wendy Doniger জানাচ্ছেন যে, ভারতীয় কাব্য, এপিক বা স্মৃতিশাস্ত্র ঘেঁটে দেখলে বোঝা যায় যে, হিন্দু দেব-দেবীদের ঈর্ষা, ক্রোধ, ত্রুটিবিচ্যুতি বা সাময়িক ভুলকে কেন্দ্র করে কত পৌরাণিক গল্পই না রচিত হয়েছে! ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর— এরা কেউ-ই নিখুঁত নন, বরং রক্তমাংসের মানুষের মতোই তাদের ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকে, সেই ভুলের মাশুল দিতে গিয়ে কত নতুন গল্পের সৃষ্টি! তবে Doniger বলছেন যে, ভারতবর্ষে ধর্মনিন্দা (ব্লাসফেমি) বলতে যতটা না দেব-দেবীকে কটাক্ষ করা বোঝায়, তার চেয়েও বেশি প্রাধান্য রাখে উচ্চবংশীয় কোন ব্রাহ্মণকে অপমান করা হল কি না। যেমন, মনুস্মৃতিতে বলা হয়েছে যে, ব্রাহ্মণ-বিরোধিতা করলে, কোনওরকম ‘verbal abuse’-ও যদি হয়, তাহলে শাস্তি হিসেবে জিভ কেটে নেওয়ার নিদান আছে। প্রশ্ন এটাও থেকে যায় যে, এই স্মৃতিশাস্ত্রগুলি কিছু নিয়মের কথা বলে বটে, কিন্তু সেটা সমাজে আদৌ কতটা মানা হত? কোন রাজা কোন শাস্ত্রকে বেশি প্রাধান্য দেবে, সেই নিয়ে ঐতিহাসিক পর্যালোচনা চলতে থাকে।

    শিল্পে জাতপাতের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতে হলে উত্তর ভারতীয় সিনেমার পাশাপাশি দক্ষিণী চলচ্চিত্রের দিকে তাকানো প্রয়োজন। ১৯৫০-এর পর থেকে তামিল এবং মালায়ালম ইন্ডাস্ট্রিতে জাতপাত-সম্পর্কিত চলচ্চিত্র তৈরি হয়। কিন্তু প্রথম কয়েক দশকের সিনেমাগুলোতে দলিতদের শোষণের কথা বলা হলেও, ব্রাহ্মণদের সেখানে ‘সেভিয়র’ (saviour) রূপে দেখা যায়।

    ব্রাহ্মণ-বিরোধিতার ধারাবাহিক ইতিহাস যদি দেখতেই হয়, তাহলে আমাদের তাকানো উচিত রাজার দরবারে উপস্থিত বিদূষকের দিকে। আকবরের বিদূষক যেমন ব্রাহ্মণ, তেমন মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রর বিদূষক গোপাল ভাঁড়কে অনেকে ব্রাহ্মণ বলেন, আবার মতান্তরে তিনি নাপিত শ্রেণির প্রতিনিধি। গোপাল ভাঁড়ের গল্পগুলো উপকথা বা মৌখিক ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে। এই কাহিনিগুলোতে ব্রাহ্মণ-বিরোধিতা, এমনকী, জাতপাত-ধর্মের অনুশাসনে তৈরি খাবার ও ছোঁয়াছুঁয়ির বিভিন্ন বিধি-নিষেধকে কটাক্ষ করার প্রসঙ্গ এসেছে। একটি গল্পে গোপাল ভাঁড় ভোজ খেতে বসেছেন ব্রাহ্মণদের সঙ্গে, প্রথমেই তিনি অন্যদের খাবার ছুঁয়ে দিয়ে সমস্তটাই নিজের অধিকারে করে নিলেন। এতে ব্রাহ্মণবর্গ খানিক বিরক্ত হলেও, ভোজ ছেড়ে উঠে গেলে খাদ্যরসিক গোপাল সুস্বাদু সব পদ উদরস্থ করলেন আনন্দে। গোপাল ও তার পিসিমার গল্পে হিন্দু বিধবার খাবারে কুচো চিংড়ি মিশিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও লিঙ্গ ও ধর্মের অনুশাসনকে বিদ্রুপ করে। ব্রাহ্মণ-বিরোধিতার আজ যে চরম পরিণতি আমরা প্রত্যক্ষ করছি, বিভিন্ন শিল্পমাধ্যমে, সিনেমা, সাহিত্য বা নাটকে;  এই অসহিষ্ণুতা যদি গোপাল ভাঁড়ের সময় থাকত, তাহলে আজ আর বিদূষকের গল্প আমাদের কাছে এসে পৌঁছত না। 

    শিল্পে জাতপাতের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতে হলে উত্তর ভারতীয় সিনেমার পাশাপাশি দক্ষিণী চলচ্চিত্রের দিকে তাকানো প্রয়োজন। ১৯৫০-এর পর থেকে তামিল এবং মালায়ালম ইন্ডাস্ট্রিতে জাতপাত-সম্পর্কিত চলচ্চিত্র তৈরি হয়। কিন্তু প্রথম কয়েক দশকের সিনেমাগুলোতে দলিতদের শোষণের কথা বলা হলেও, ব্রাহ্মণদের সেখানে ‘সেভিয়র’ (saviour) রূপে দেখা যায়। অস্পৃশ্যতা, নির্যাতন বা দলিত মহিলাদের অত্যাচারের কথা বলা তো হচ্ছে, কিন্তু ব্রাহ্মণদের যেন তাতে কোনও দায় নেই।

    গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কার্টুনে বারবার উঠে এসেছে সমাজ-চিত্র

    পরিবর্তন আসে ১৯৮০-’৯০ এর পর থেকে। ‘কালা’ বলে একটি ছবি, যেখানে রজনীকান্ত অভিনয় করেন, বা ২০২৩-এর তামিল ছবি ‘মাম্মানান’— এই চলচ্চিত্রগুলোয় ‘সাভার্না গেজ’ বা উচ্চবংশীয় দৃষ্টিকোণ অনেকটাই কম। এখানে ব্রাহ্মণদের ত্রাণকর্তা হিসেবে দেখানো হয়নি। ‘কাস্ট’ নিয়ে কথা বলতে গেলে বা জাতপাতের বিরোধিতা করার ক্ষেত্রে আসলে একটা মাত্রাজ্ঞান কাজ করে সবসময়। দলিতদের জীবন, কাগজকুড়ানি মায়ের দুঃখ বা নর্দমা পরিষ্কার করা অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষের কথা শিল্পমাধ্যমে আনা যেতে পারে, কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত সেটি উচ্চবংশীয় মানুষের প্রিভিলেজ বা সুযোগ-সুবিধার কথা বলছে না, সেই অবধি দলিত-গাথাকে গ্রহণ করা হয়। একটি আপাদমস্তক অসম্পূর্ণ ইতিহাস, যেখানে শুধু নির্যাতনটা দেখানো হবে, কিন্তু তার কারণ খতিয়ে দেখা হবে না, বলা হবে না যে, দলিতদের অবস্থার জন্য উঁচু জাতই দায়ী, সেই ধরনের বয়ানকে মান্যতা দেওয়া যায়। অ্যান্টি-কাস্ট আন্দোলনকে অ্যান্টি-ব্রাহ্মণ সেন্টিমেন্টের থেকে বিযুক্ত করার প্রয়াস এক্ষেত্রে কাজ করে। 

    শিল্পমাধ্যমে জাতপাত-বিরোধিতা নিয়ে কথা বললে বাংলা ছবির কথাও ভাবি, দলিত সাহিত্য যেভাবে তৈরি হয়েছে গত কয়েক দশকে, দলিতদের নিয়ে বাংলা ছবি একেবারেই বিরল। ‘সদগতি’-র দুখীর মতো কোনও দলিত চরিত্র আমাদের কাছে ধরা দেয় না। ‘অশনি সংকেত’-এর গঙ্গাচরণ বা ‘পথের পাঁচালী’-র হরিহর রায় গরিব ব্রাহ্মণ, সেখানে দুর্ভিক্ষ, দারিদ্র, অনাহার থাকলেও জাতপাতের লড়াইয়ের কথা নেই। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে ২০১২ সালে ‘শূদ্র: দ্য রাইজিং’ নামে একটি সিনেমা মুক্তি পায়, যা নিয়েও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরং দল প্রবল আপত্তি জানিয়েছিল, সালটা ২০১৪-র আগে বলে মনে হয়, এই সমালোচনা সেন্সরশিপ বোর্ডকে প্রভাবিত করতে পারেনি। গিরিশ কারনাড অভিনীত ‘সংস্কার’ (১৯৭০) ছবির কথাও এখানে বলা প্রয়োজন। ‘ফুলে’ (২০২৫) ছবির মতোই এই কন্নড় চলচ্চিত্রটির মুক্তি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয় সেই সময়। চলচ্চিত্রটির নামকরণ অনুযায়ী আদপেই এটি জাতপাতের সংস্কারকে নিয়ে প্রশ্ন করে। কর্নাটকের মাধব ব্রাহ্মণদের মধ্যে গড়ে ওঠা গোঁড়া মনোভাব, অস্পৃশ্যতা এবং নানা ধরনের ছুৎমার্গ নিয়ে ছবিটির প্লট নির্মিত। এটি প্রকাশের আগেই মাদ্রাজ সেন্সর বোর্ড একে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ‘ফুলে’ (২০২৫)-কে যেমন ‘সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন’ (CBFC) কয়েকটি আপত্তিকর দৃশ্য কেটে ফেলতে বলেছে, ‘সংস্কার’ (১৯৭০)-কে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে দেওয়ার পর শেষে Union Ministry of Information and Broadcasting এটিকে ছাড় দেয়। এই ছবিটি তারপর ‘ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস’ এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে লোকার্নো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পদক জেতে। আজও গিরিশ কারনাদের সংস্কার নিয়ে তথ্যচিত্র বানানো হয়, গবেষণা চলে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে। তবে এই ছাড়পত্র কতটা আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ‘ফুলে’ সিনেমার ক্ষেত্রে সম্ভব সেই প্রশ্নের উত্তর আমরা জানি। ‘সংস্কার’ বা ‘সদগতি’-র মতো সিনেমা, গগনেন্দ্রনাথের ব্রাহ্মণ্যবাদ-বিরোধী ব্যঙ্গচিত্র বা অ্যান্টি-কাস্ট নাটক, সিনেমা বর্তমানে যে বিরল, বা হলেও তাকে সেন্সর করা হচ্ছে, তার জন্য সর্বতোভাবে দায়ী আজকের হিন্দুত্ববাদ। বলা হয় এই হিন্দুত্ববাদ নাকি জাতপাতের চেতনাকে খুব সাবলীলভাবে কাজে লাগাচ্ছে, রাষ্ট্রপতির পদবি বা আরও নানা অছিলায় কিছু টোকেনিজমের মাধ্যমে তারা ব্রাহ্মণ্যবাদ-বিরোধিতা একপ্রকার লঘু করে দেখতে চায়। কিন্তু অদূরেই হয়তো এই টোকানিজমের বা প্রতীকীর আর দরকার পড়বে না। ‘ফুলে’ সিনেমার বিরোধিতা হয়তো সেই ভয়ংকর সময়ের আভাস দেয়, যখন উঁচু জাতি, বর্ণ, গোত্র, এবং একরৈখিক লিঙ্গ ও ধর্মের ভিত্তিতেই সব কিছু ভাবা হবে, প্রয়োজন হবে না কোনও রাখঢাকের। 

    ‘হিন্দুধর্মের মানুষের মধ্যে আসলে কোনও বিভেদ নেই’— এই তত্ত্বকে খাড়া করার জন্য নানা পথ অবলম্বন করে থাকে আজকের হিন্দুত্ববাদ। ঠিক যেমন সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর আবারও একবার চেষ্টা চলবে হাজার বছরের অস্পৃশ্যতাকে এক মুহূর্তে অস্বীকার করার। উপ্রপন্থার বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হবে উগ্রপন্থাকে, এই দুইয়ের মাঝে দলিত স্বর যাতে হারিয়ে না যায় তার একমাত্র উপায় বারে বারে ‘Annihiliation of caste’ (1936). ‘Why I am not Hindu’ (1996) এবং পেরিয়ারের টেক্সটগুলিতে ফিরে যাওয়া, তৃণমূল স্তরে বা স্কুলপাঠ্য হিসেবে যদি এর কিছু অংশ সংযোজন করা যায়, তাহলে এই দুর্দিনে কিছুটা আশা এখনও রয়ে যায়। 

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook