ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • অন্য কোনো ছায়াপথে


    সারস্বত সেন (July 26, 2024)
     

    মহাকাশ আর জুলাইয়ের অনেক পুরনো আলাপ । ২০ জুলাই, ২৯ জুলাই দিনগুলো যেন এক-একটা মাইলফলক। এ-বছরের জুলাই সেই ধারা কিছুটা বজায় রাখল। দিনকয়েক আগের খবর নিয়ে উৎসাহীরা উচ্ছ্বসিত— নাসা একটা ছবি জনসমক্ষে এনেছে, যার শিরোনাম ‘দ্য পেঙ্গুইন অ্যান্ড দি এগ’। ছবিতে দেখা যাচ্ছে দুটো ছায়াপথ, এ আর পি ১৪২ নামকরণ করা হয়েছে তাদের, যেন একে অপরের সঙ্গে নৃত্যরত; বিজ্ঞানীরা চমৎকৃত, তাঁদের দাবি এই কসমিক নাচ শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ২.৫-৭.৫ কোটি বছর আগে! আজ থেকে কোটি-কোটি বছর পরে আবার তারা একে অপরের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে, জন্ম দেবে নতুন এক ছায়াপথের। অসীম ব্রহ্মাণ্ডে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কত এমন বিস্ময়! চেনা-বিশ্ব, অজানা-মহাবিশ্ব কারোর মাস্টারপ্ল্যানের অংশ, নাকি সৃষ্টির পুরোটাই আদতে আকস্মিক, এলোমেলো? সবার গুরু বিগ ব্যাং না কি বিধাতা— তার উত্তর আদিম মানুষ থেকে আজকের আমরা, কারোর জানা নেই। প্রথম সূত্র ভুল হলে ঈশ্বরবাদীরা উল্লসিত, যুক্তিবাদীদের দুঃস্বপ্ন যদি পরেরটা প্রমাণিত হয়। যতই ড্যান ব্রাউন ‘পদার্থবিদ্যার সূত্রগুলি ব্যবহার করে পরমপিতা পৃথিবীর ক্যানভাস এঁকেছেন’ লিখে দু’দিক-ই বজায় রাখুন, প্রথম সূত্র নির্ভুল প্রমাণ করার জন্যই কোটি-কোটি ডলার অর্থব্যয় নাসা-র; প্রথম সারির অন্য দেশের মহাকাশ-গবেষণা কেন্দ্রগুলো তাদের দোসর।                                      

    NACA = NASA

    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে আমেরিকা-সোভিয়েত ব্লকের সম্পর্ক তখন ক্রমেই শীতল হচ্ছে, ‘কোল্ড ওয়ার’-এর প্রেক্ষাপটে দু-দেশেই প্রস্তুতি চলছে প্রথমবার মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর। বিধি বাম, ৪ অক্টোবর ১৯৫৭: আমেরিকার মুখে কালি লাগিয়ে মহাকাশে ‘স্পুটনিক ১’ পাঠাল সোভিয়েত ইউনিয়ন। ২২ ইঞ্চির অ্যালুমিনিয়ামের গোলক, ওজন প্রায় ১৮৪ পাউন্ড; কিছু বিশেষজ্ঞদের মতে ওটা ছিল সোভিয়েতদের চর; উদ্দেশ্য বহির্জগতের অনুসন্ধান নয়, যুদ্ধ লাগলে আমেরিকার কোন কোন জায়গায় বামপন্থী ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা চালাবে তার নকশা বানিয়ে রাখা। আমেরিকা জুড়ে সমালোচনার ঝড়ে মহাকাশ গবেষণায় বরাদ্দ হল আরও বাজেট, আরও মাথা। ওয়ার্ম-আপ করতে-করতেই আবারও ধাক্কা; পৃথিবীর-কক্ষপথে-প্রদক্ষিণ-করা-প্রথম প্রাণী পাঠানোর কৃতিত্বও পেল সোভিয়েত ইউনিয়ন— মস্কোর রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো নেড়ি লাইকা ‘স্পুটনিক ২’-এর সওয়ারি হয়ে ইতিহাসের অংশ হয়ে রইল। প্রথম হওয়ার দৌড়ে গো-হারান হার, আধুনিক সভ্যতার সর্বোত্তম দেশ কি প্রযুক্তির ব্যবহারে পিছিয়ে ছিল? PSAC (প্রেসিডেন্ট’স সায়েন্স অ্যাডভাইসরি কমিটি)-এর কর্মকাণ্ডের মধ্যে মহাকাশ গবেষণা ছিল বটে; কিন্তু দেশের জনতা এবং অন্য দেশগুলোর কাছে মুখ বাঁচানোর জন্য সেটুকু আর যথেষ্ট ছিল না। গুরুদায়িত্ব পেল NACA (ন্যাশনাল অ্যাডভাইসরি কমিটি ফর এরোনটিক্স)। ১৯১৫-তে যাত্রা শুরু করলেও, শুধুমাত্র মহাকাশের নাড়িনক্ষত্র নিয়ে কাজ সেই কমিটি কখনও করেনি; মূল কাজ ছিল আমেরিকার আকাশে অসামরিক উড়ান নিয়ে। ঠান্ডা যুদ্ধের তাপে তাকেই নতুন মোড়কে ফিরিয়ে আনা হল; ১৯৫৮-তে কংগ্রেস পাশ করল নতুন বিল— ন্যাশনাল এরোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাক্ট। সরকারি সিলমোহর লেগে যাওয়ার পর ১৯৫৮-র ২৯ জুলাই নতুন সাজে আত্মপ্রকাশ করল NACA; নাম হল ন্যাশনাল এরোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, সংক্ষেপে NASA।            

    প্রথম হওয়ার দৌড়ে গো-হারান হার, আধুনিক সভ্যতার সর্বোত্তম দেশ কি প্রযুক্তির ব্যবহারে পিছিয়ে ছিল? PSAC (প্রেসিডেন্ট’স সায়েন্স অ্যাডভাইসরি কমিটি)-এর কর্মকাণ্ডের মধ্যে মহাকাশ গবেষণা ছিল বটে; কিন্তু দেশের জনতা এবং অন্য দেশগুলোর কাছে মুখ বাঁচানোর জন্য সেটুকু আর যথেষ্ট ছিল না।

    ১৯৬১-তে ক্ষমতায় এলেন জন এফ কেনেডি; তিনি দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই নভশ্চর ইয়ুরি গ্যাগারিন মহাকাশে-যাওয়া-প্রথম মানুষ হয়ে সোভিয়েতদের শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা দিয়ে দিলেন। চিরশত্রুর কাছে বার বার হার মার্কিনদের খাদের কিনারায় নিয়ে গেল; ভোটে অল্প মার্জিনে জিতে ক্ষমতায় এলেও, টালমাটাল রাজনৈতিক কেরিয়ারের মাঝে সে-বছরই মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে কেনেডি ঘোষণা করলেন চন্দ্র অভিযানের। নাসা-র বাজেট বাড়ল ৯০ শতাংশ, নতুন উদ্যমে লেখা হল নতুন সীমান্ত ছোঁয়ার চিত্রনাট্য। কিউবান মিসাইল সংকট থেকে মস্কোর সঙ্গে পারমাণবিক সমঝোতা সামলাতে-সামলাতেই আততায়ীর বুলেট কেনেডিকে আর দেখে যেতে দিল না সেই স্বপ্নপূরণের দিন। জে এফ কে হত্যার প্রায় ছ’বছর পর, ১৯৬৯-এর ২০ জুলাই অবশেষে চাঁদের জমি জয় করল মানুষ। অ্যাপোলো ১১-র অভিযাত্রী নিল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন চাঁদে পদচারণা করলেন, খাওয়া-দাওয়াও সারলেন; চাঁদের আলোয় মেনুতে রইল বেকন, কুকি, পিচেস, কফির মতো আইটেম। সাতের দশকের সিদ্ধার্থরা যতই বলুন ‘মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ভিয়েতনামের প্রতিরোধ বিংশ শতকের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা’, বৃহত্তর ক্যানভাসে ঠিক উলটোটাই সত্যি; জুলাই-এর ‘That’s one small step for man…’ এক লহমায় মহাকাশচর্চাকে ন্যায্যতা দিল। অবশ্য পরের দিনগুলোয় মহাকাশ-অভিযানে যত সাফল্য, তত ব্যর্থতা ধীরে-ধীরে গণ-উৎসাহে চোনা ফেলেছে।               

    মহাকাশযাত্রী ‘লাইকা’

    ‘দ্য পেঙ্গুইন অ্যান্ড দি এগ’ ইনফ্রারেড ছবি, তুলেছে নাসা-র জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ; হাজার কোটি ডলার খরচ করে বানানো দূরবীক্ষণ এখনও অবধি মহাকাশে মানুষের সর্বোত্তম পর্যবেক্ষণাগার। ওয়েব-এর খাতায় নাকি আমাদের বিবর্তনের বইয়ের প্রতিটা অধ্যায় লেখা— বিগ ব্যাং-এর প্রথম বিস্ফোরণ থেকে পৃথিবীতে প্রাণের রহস্য, কোনও কিছুই তার নজর এড়ায় না! এই ব্রহ্মাণ্ডের বাইরেও যে অন্য অনেক বিশ্ব বর্তমান সেটা আজ অনুমেয়, তবে সেইসব আকাশগঙ্গার অন্বেষণ আমাদের কোনও সুজলা-সুফলা-শস্যশ্যামলা গন্তব্যে নিয়ে যাবে কি না, তা দেবা ন জানন্তি। জনসংখ্যা-বৃদ্ধি, যুদ্ধ, অপুষ্টি, অনাহার, জলবায়ু পরিবর্তন— সমস্যার সমারোহে জীর্ণ এই পৃথিবী যে ভবিষ্যতের শিশুর বাসযোগ্য থাকবে না সেটা এক প্রকার নিশ্চিত। অতএব, সকলই ফুরায়… তাই হেথা নয়, অন্য কোনখানে— পৃথিবীর যাবতীয় সমস্যা দূরে সরিয়ে, দূর-পৃথিবীর-স্বর্গরাজ্য ধ্রুবতারা ধরে নিয়ে আমাদের মহাকাশ অভিযান। এতদিন চলছে, আগামীতেও চলবে সেই অভিযানের সলতে পাকানোর কাজ। যাত্রা সফল হবে কি না, সেটা আজকের বিজ্ঞান এখনও নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না। তবে বিশ্বাস করতে তো বাধা নেই! কথায় বলে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু!           

     ছবি: সংগৃহীত   

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook