ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • নীলা-নীলাব্জ : পর্ব ৪


    অনুপম রায় (July 12, 2024)
     

    কলকাতা

    সেক্টর ফাইভ। দুপুর দেড়টা। হালকা নীল শার্ট, গলায় ব্যাজ ঝুলিয়ে নীলা ঢুকছে একটা ফুড কোর্টে। কী স্যান্ডউইচ অর্ডার দেবে ভাবতে-ভাবতেই পাশ থেকে— ‘হাই নীলা!’

    ঘুরে দেখে নীলাব্জ, ‘দুপুরবেলা এই চত্বরে কী করছ?’

    নীলাব্জ : আমার ওই ট্র্যাভেলের ব্যবসার এক ক্লায়েন্ট…

    নীলা : ওহ্‌! তুমি কাজ-টাজ করো তা হলে?

    নীলাব্জ : কী আশ্চর্য! কাজ না করলে চলবে কী করে?

    নীলা : কে জানে বাবা, তোমার ব্যাপার আমি বুঝি না।

    নীলাব্জ : তুমি দুপুরবেলা স্যান্ডউইচ খাচ্ছ কেন? 

    নীলা : বাড়ি থেকে খাবার আনতে পারিনি আজ। আর ভাত খেলে আমার ঘুম পায়। এরপর গিয়ে পর পর দুটো প্রেজেন্টেশন, হালকা কিছু…

    নীলাব্জ : তোমার ভাত খেলে ঘুম পায় কেন?

    নীলা : অদ্ভুত! এটা নিয়েও ঝগড়া করবে? পায় তো পায়! আমি কী করে জানব কেন পায়?

    নীলাব্জ : আরে, রেগে যাচ্ছ কেন! আমি তো এমনি…

    নীলা : তখন থেকে তো বাচ্চাদের মতো শুধু কেন, কেন, কেন করে চলেছ! কেন?

    নীলাব্জ (হেসে ফেলে) : কী হয়েছে নীলা? মাইনে বাড়ছে না? 

    নীলা : শাট আপ নীলাব্জ! এই শহরের এটা প্রবলেম! তোমরা টাকাকে ছোট করে দেখ।

    নীলাব্জ : আমরা?  

    নীলা : হ্যাঁ, তোমরা! আর এই শহরে থাকলে আমার বাড়বেও না। দুটো অফার পেয়েছি— একটা হায়দ্রাবাদ, একটা বেঙ্গালুরু। দেড় গুণ বেশি টাকা অফার করছে!

    নীলাব্জ : বাহ্‌! তা হলে পড়ে আছ কেন, চলে যাও! সমস্যাটা কী বুঝতে পারছি না।  

    নীলা : আমার প্ল্যানটা ছিল ওই অফারগুলো দেখিয়ে এখানে মাইনেটা বাড়ানো, কিন্তু না! এদের কিছুই যায় আসে না। এরা আমার চাইতেও কম মাইনের শ্রমিক পেয়ে যাবে।  

    নীলাব্জ : এইবার বুঝছি, মানে কলকাতা তুমি ছাড়তে চাও না, তাই তো?

    নীলা : কেন ছাড়ব নিজের শহর আমি, বলো? সারাজীবন এখানে আছি, ফ্ল্যাট কিনছি, মা আছে বাড়িতে, সব ছেড়ে আমি জাস্ট চলে যাব? কলকাতা পারে না নিজেকে একটু উন্নত করতে যাতে আমরা থেকে যেতে পারি? কোনও বাঙালি চায় বাংলার বাইরে গিয়ে থাকতে? 

    নীলাব্জ : দেখো নীলা, আমি তোমার সঙ্গে একমত। তোমার যন্ত্রণাটা আমি বুঝতে পারছি, কিন্তু একটু প্র্যাকটিকাল হওয়া এ ক্ষেত্রে বোধহয় ভাল। তুমি যদি আই আই টি-তে পড়তে চাও, তা হলে তোমাকে কলকাতা ছাড়তে হবে। তুমি যদি নাসা-তে কাজ করতে চাও, তা হলে তোমাকে দেশ ছাড়তে হবে। গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছে তোমার জন্য বিভিন্ন সুযোগ। কলকাতা সব কিছু তোমাকে কোনও দিন দিতে পারবে না।  

    নীলা : আমি এত হাই-ফাই কিছু চাই না। একদম বেসিক কয়েকটা আই টি কোম্পানি খুলতে পারে না এখানে? অপশন এত কম কেন এখানে? মাইনে এত কম কেন এখানে?     

    নীলাব্জ : এই রে, আবার ঘুরেফিরে সেই টাকা!    

    নীলা : হ্যাঁ টাকা। আমি টাকা ভালবাসি। আমাকে আমার বস যখন বোনাস বা ইনক্রিমেন্টটা দেয়, তখন আমার ভাল লাগে। তখন নিজের ভ্যালুটা বোঝা যায়। পিঠ চাপড়ে, বাহ্‌-খুব-ভাল সবাই বলতে পারে। টাকা কেউ কাউকে এমনি-এমনি দেয় না। টাকা দিলে তবে বোঝা যায়, হ্যাঁ, সত্যি ভ্যালু করে। এই শহরের সমস্যা হল টাকাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা। গুজ্জুরা খারাপ, ওরা বানিয়া! মেড়োগুলো সব বদমাশ, টাকা ছাড়া কিছু বোঝে না। বাঙালি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছে? ফাটা চাড্ডি পরে দাঁড়িয়ে বড়-বড় কথা।       

    নীলাব্জ : হা হা! বেড়ে বলেছ। আমি আবার একমত তোমার সঙ্গে। টাকা থাকলে প্রচুর সুবিধে। আসল সুবিধে হল স্বাধীনতা! ‘না’ বলার ক্ষমতা জোগায় টাকা। ফালতু কাজ? আমি বলতাম, করব না! টাকা সেই পাওয়ারটা দেয়। তার চেয়ে আমি সেই সময়ে নিজের যেটা ভাল লাগে, সেরকম কিছু করব। আমি টাকাকে ছোট করে দেখি না। কিন্তু মানুষ যে নির্বোধের মতো টাকাকে দেখে, আমার সেটা নিয়ে সমস্যা আছে। যাক গে, সে আলাদা প্রসঙ্গ। তোমার প্রবলেম, তুমি কলকাতার থেকে টাকা চাইছ।  

    নীলা : আমি কলকাতা ছাড়তে চাই না। কিন্তু এই মাইনেটা কোনও মাইনে নয়। নয়ডা, বেঙ্গালুরুতে গেলেই মাইনে ডবল হয়ে যাবে। আমার সব বন্ধুরা…     

    নীলাব্জ : দেখো, আমরা তো তৃতীয় বিশ্বের এক কোনাতে পড়ে আছি। কলকাতা বিশ্বের সেরা শহরগুলির র‍্যাঙ্কিং-এ প্রথম ১০০তে আসবে কি না সন্দেহ! আজ যে-মেয়েটি লন্ডনে জন্মাচ্ছে, তার যদি গুগল-এ বা অ্যাপল-এ কাজ করার ইচ্ছে হয়, তাকে কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়াতেই যেতে হবে। যদি ত্রিভান্দ্রমের একটি ছেলে লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্স-এ পড়তে চায়, তাকে লন্ডনেই যেতে হবে। যদি দার্জিলিংয়ের একটি ছেলে হিন্দি ছবিতে কাজ করতে চায়, তাকে মুম্বইতেই যেতে হবে। কানপুরে গিয়ে কিছু হবে না। তুমি ভারতে বসে আই টি-র বেস্ট চাকরিটা চাইলে তোমাকেও কিন্তু বেঙ্গালুরু যেতে হবে। কী করবে বলো?    

    নীলা : আমি তো বেস্ট চাইছি না। আমি চাইছি আরও কয়েকটা অপশন। আমার নিজের মাইনেটা বাড়ানোর।   

    নীলাব্জ : তুমি আর একটু বেশি টাকা রোজগার করতে চাও, তাই তো? তা হলে আই টি-টা ছেড়ে দাও না! এখানে তো তোমাকে কোম্পানিগুলো শোষণ করবে। কোনও দিনই তুমি বেশি টাকা বানাতে পারবে না। বেশি টাকা চাকরি করে হয় না, তুমিও জানো। হয় ব্যবসা করে। করবে?  

    আমিও সেটাই বলছি নীলাব্জ। সময়ের সঙ্গে কত কী পালটায়! কলকাতা আর একটু ডেভেলপ করতে পারে না? 

    নীলা : কলকাতায় টাকা নেই। এখানে ব্যবসা হয় না।   

    নীলাব্জ : কী বলছ? কলকাতায় এক-একটা বিয়েবাড়ি হয় পাঁচতারা হোটেলগুলো ভাড়া করে, দেখেছ? কী খরচা করে! পনেরো কোটি, কুড়ি কোটিতে ফ্ল্যাট হু হু করে বিক্রি হচ্ছে, আর তুমি বলছ টাকা নেই?  

    নীলা : দিল্লি, মুম্বইতে মানুষের কাছে আরও টাকা।     

    নীলাব্জ : হ্যাঁ, অবশ্যই বেশি, কিন্তু তার মানে এখানে কিছুই নেই, তা তো নয়। আমি বুঝতে পারছি তোমার উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে। সেটা যথাযথ। কিন্তু আই টি-তে এর চেয়ে বেশি মাইনে আপাতত তোমাকে কলকাতা দেবে না। আই টি-তে থেকে আরও মাইনে চাইলে কলকাতা ছাড়ো! কিন্তু আই টি-তে থাকতেই হবে এমন ব্যাপার যদি না হয়, তা হলে আই টি ছাড়ো! ব্যবসা করো, কলকাতা ছেড়ো না।    

    নীলা : আরে কী যে বলো না! চাকরি ছেড়ে দেব? ব্যবসা করব? কীসের ব্যবসা? তেল বেচব, মুড়ি বেচব? আমার স্কিল তো আই টি-তেই। আমি কেন ব্যবসা করতে যাব?

    নীলাব্জ : কারণ তুমি নিজে জানো যে, আই টি-তে থাকলে এর বেশি তুমি পাবে না।  

    নীলা : দেখতে-দেখতে শহরটা একটা বৃদ্ধাশ্রমে পরিণত হচ্ছে। আমার সব বন্ধুবান্ধব বাইরে চলে যাচ্ছে! শুধু পড়ে থাকছে তাদের বাবা মা! আই হেট কলকাতা!  

    নীলাব্জ : আশ্চর্য ব্যাপার! ধরো যে-ছেলেটি বাঁকুড়াতে জন্মেছে, তার বাঁকুড়াতে আই টি-র চাকরি নেই বলে সে বলবে আই হেট বাঁকুড়া? এরকম হয় কোনও দিন?

    নীলা : আরে বাবা, আমি তো বাঁকুড়াতে জন্মাইনি! আমি তো প্রপার কলকাতাতে জন্মেছি। একটা মেট্রো শহরে আরেকটু ভাল চাকরি চাওয়া অন্যায়?

    নীলাব্জ : উন্নাসিকতা! কলকাতায় জন্মে তো আর মাথা কিনে নাওনি! কলকাতা ইজ অ্যাভারেজ! মেনে নাও। দিল্লি হল রাজধানী। মুম্বই হল ফিল্ম, ফিন্যান্সের রাজধানী; বেঙ্গালুরু আই টি-র রাজধানী। আমরা নেই কোথাও এসবে। আমরা একটা পাতি শহর। তুমি এই পাতি শহরের একটা পাতি আই টি কর্মচারী।       

    নীলা : কিন্তু কলকাতা এরকম ছিল না! অন্যরকম হতে পারত!

    নীলাব্জ : কলকাতা রাজধানী ছিল ব্রিটিশদের আমলে। তারপর বাংলা ভেঙে দু’ভাগ হয়েছে, রাজধানী পালটে গেছে, কত কী হয়ে গেছে… সব কি একরকম থাকে? নবাবের আমলে মুর্শিদাবাদেরও দারুণ গ্ল্যামার ছিল। যাও গিয়ে কান্নাকাটি করো! ওখানে এখন সেরা ব্যবসা বোধহয় গরু-পাচার। থিংগস চেঞ্জ!   

    নীলা : আমিও সেটাই বলছি নীলাব্জ। সময়ের সঙ্গে কত কী পালটায়! কলকাতা আর একটু ডেভেলপ করতে পারে না? 

    নীলাব্জ : ঠিক। পারে। একটা ধামাকা হতে হবে! কোনও নেতা-মন্ত্রীর যদি এরকম একটা ভিশন থাকে, তা হলেই হবে। আমার মনে হয় শুধু কলকাতা নয়, আরও বেশ কয়েকটি উন্নত শহর লাগবে গোটা বাংলা জুড়ে। ধরো মধ্যমগ্রাম থেকে বারাসাত একটা…

    নীলা : সামান্য একটা আই টি-র চাকরি চেয়েছিলাম, তুমি এখন গোটা বাংলার উন্নয়ন শুরু করে দিলে এখানে বসে। আপাতত চলি। মিটিং শুরু হয়ে যাবে। চাকরি থাকলে জানিও। বাই!   

    নীলাব্জ (হেসে): ওকে বাই। আমার লোকটাকে একবার ফোন করি। সে কখন আসে দেখি! 

    ছবি এঁকেছেন সায়ন চক্রবর্তী

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook