ভারতীয় চলচ্চিত্রে আঙ্গিক নিয়ে নানা ধরনের পরীক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছিল, ষাটের দশকেই। ‘চারুলতা’তে ফ্রিজ শট, ‘আকাশ কুসুম’-এ একটা গোটা দৃশ্য শুধু ফ্রিজ শট, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ছবিতে সৃজনশীল অ্যানিমেশন, ‘ভুবন সোম’-এ সরলরৈখিক আখ্যানরূপকে দুমড়ে-মুচড়ে দেওয়া, আবার ‘উসকি রোটি’তে আবেগহীন সংলাপ প্রক্ষেপণ। পরিচালক মৃণাল সেন, এর পরেই, একাধিক ছবিতে আখ্যানরূপকে অনেকটাই পরিবর্তন করার প্রয়াস করেছেন। বিশেষ করে, ‘ইন্টারভিউ’, ‘কলকাতা ৭১’, ‘পদাতিক’, এবং ‘কোরাস’ ছবিতে যথেষ্ট পরীক্ষামূলক কাজ করতে পেরেছিলেন। তবে, কাহিনিকে সম্পূর্ণরূপে বর্জন করেননি তিনি। একটা গল্পের সূত্র সর্বদাই থাকত, তবে সেটা কিঞ্চিৎ বিঘ্নিত হত কিছু বিশেষ প্রয়োগের ফলে। গোদার যেমন ব্রেখটের ‘এলিয়েনেশন তত্ত্ব’কে চলচ্চিত্রের জন্য রূপান্তরিত করে, এক ধরনের যোগাযোগ এবং আদান-প্রদান তৈরি করতে পেরেছেন দর্শকের সঙ্গে, ঠিক তেমনই মৃণাল সেন পরিচালক ও দর্শকের মধ্যের দেওয়াল ভাঙতে পেরেছিলেন। ‘কলকাতা ৭১’ ছবিটিতে, অনেকটাই লাতিন আমেরিকার চলচ্চিত্রের কায়দায়, বিমূর্ত ধারাভাষ্য ব্যবহার করেন, যা কিনা ছবির বিষয়বস্তুকে এক ধরনের মহাকাব্যিক আঙ্গিকে উপস্থাপিত করে।
কলকাতা ট্রিলজি-তে মৃণাল অনেক ধরনের বিশেষ প্রয়োগের মাধ্যমে আখ্যানের গতিপথকে সমৃদ্ধ করেছেন, আবার বিঘ্নিতও করেছেন। এই গল্পসমূহের দ্বারা তিনি কিছু ঐতিহাসিক তত্ত্বও প্রকাশ করতে পেরেছেন। মানবজাতির ইতিহাস যে এক অবিরত অত্যাচার আর নির্মম শোষণের ইতিহাস, তা দ্বিধাহীনভাবে উচ্চারণ করেছেন মৃণাল সেন। এই অভিনব আঙ্গিক যেন উম্বের্তো সোলাসের ‘লুসিয়া’ ছবিটিকে সেলাম করে, আরও গভীরে তত্ত্বায়নের পথ দিয়ে হেঁটেছে। মৃণালবাবুর প্রিয় পরিচালক, গোদারের মতোই, তিনিও চিত্রনাট্যকে প্রবন্ধের আকার দিয়েছেন। মানিক বন্দোপাধ্যায়, সমরেশ বসু, প্রবোধ সান্যাল, অজিতেশ বন্দোপাধ্যায়ের মতো প্রখ্যাত লেখকদের কাহিনিকে যেমন অসাধারণ মুন্সিয়ানার সঙ্গে রূপান্তরিত করেছেন চলচ্চিত্রে, তেমনই গল্পগুলোর ফাঁক-ফোকরে এক অস্থির বাস্তবতা তথা এক দ্বিধাপন্ন পরিপার্শ্বকে দৃশ্যায়িত করতে পেরেছেন। এই তিনটি ছবিতে এবং তারপর ‘কোরাস’ ছবিতে মৃণাল সেন বিভিন্ন ধরনের আঙ্গিকগত প্রকরণ ব্যবহার করেছেন। অ্যাবসার্ড থিয়েটার, সোলানাস ও গেতিনোর থার্ড সিনেমা, ন্যুভেল ভাগের চলচ্চিত্রের ভাষা নিয়ে খেলা, গ্রাফিক্সের অভিনব প্রয়োগ প্রভৃতি এই সময়ের তাঁর চলচ্চিত্রে খুব সুস্পষ্টভাবে লক্ষ করা যায়। সেই সঙ্গে, অসাধারণ কিছু চরিত্র তিনি দর্শকের সামনে আনতে পেরেছিলেন। ‘পদাতিক’-এর সুমিত, ওর বাবা (বিজন ভট্টাচার্যের অনবদ্য চরিত্রচিত্রণ মুগ্ধ করে), মিসেস মিত্র; ‘ইন্টারভিউ’ ছবির রঞ্জিত, ‘কোরাস’-এর সিস্টার মুখার্জী (শেখর চট্টোপাধ্যায়)— এরা প্রকৃতরূপেই চমৎকৃত করে।
এরপর, আশির দশকে, মৃণাল অন্য পথে হাঁটতে শুরু করলেন। রাজনৈতিক ছবির তীব্র আক্রমণাত্মক আঙ্গিক থেকে সরে এসে তিনি আত্মবিশ্লেষণের প্রক্রিয়া চালু করলেন। মধ্যবিত্ত সমাজকে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে বিচার করতে শুরু করলেন। ‘একদিন প্রতিদিন’ একটি অসামান্য সৃষ্টি। এই ছবিতে যা বলা হয়েছে, বা দেখানো হয়েছে, তার থেকে না বলা কথা অনেক বেশি, অনেক কিছুই অজানা রয়ে যায়। তবে মানুষ সম্পর্কে, সমাজ সম্পর্কে এই ছবি অদ্ভুতভাবে আবরণ মোচন করতে সক্ষম হয়। ‘চিনু’ কোথায় গিয়েছিল, কোথায় সে-রাত কাটিয়েছিল সেটা তাৎপর্যপূর্ণ নয়; তার সাময়িক অন্তর্ধানের ফলে যে ঝড় বয়ে গেল, সেটাই মুখ্য প্রতিপাদ্য বিষয়।
কলকাতা ট্রিলজি-র শৈল্পিক অতিরেককে বর্জন করে, পরিচালক কিঞ্চিৎ নব্য-বাস্তববাদের মোড়কে ঘটনাপ্রবাহকে সাজিয়েছেন। তবে এখানেও তীব্র ব্যঙ্গ, কটাক্ষ এবং বিদ্রূপ নানাভাবে উপস্থিত। তা ছাড়া, সবসময়েই মনে হয়, মৃত্যু নামক ভয়াবহ জিনিসটি সর্বদাই উঁকি মারছে। ছবিটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে, ১৯৮০ সালে, মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত হয়েছিল। যেমন ‘আকালের সন্ধানে’ বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবের মূল বিভাগে শুধু নির্বাচিতই হয় না, সিলভার বেয়ার খেতাবে পুরস্কৃতও হয়।
মৃণাল সেন। কে তিনি? কেনই বা এসেছিলেন? এই পৃথিবীতে এসে, দৃশ্যশ্রাব্য মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে তিনি কি আমাদের এক অদ্ভুত আঁধারে ঠেলে দিলেন? না কি তাঁর চলচ্চিত্র আমাদের অন্ধকারে আলো দেখাতে পেরেছিল? কে তিনি? তাঁকে কি আমরা চিনতে পেরেছি? আমরা কি মৃণাল সেনের কাজকে বুঝতে পেরেছি?
খুব সহজে প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া যাবে না। তবে চেষ্টা করা যেতে পারে। মৃণাল সেনের শতবর্ষে এইটুকু তো করতে হয়! নইলে আমরা যা কাজ করেছি, যা করার চেষ্টা করেছি, তার কোনও মানে থাকবে না। কিছু বলার সুযোগও থাকবে না।
চলচ্চিত্রের ইতিহাসে, ফরাসি নবতরঙ্গের প্রভাব অনস্বীকার্য। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র-পরিচালক মৃণাল সেনও সেই আন্দোলনের প্রভাব অস্বীকার করতে পারেননি। বরং ‘আকাশ কুসুম’ (১৯৬৪) নামক চলচ্চিত্রটিতে নবতরঙ্গের অস্থিরতা, নায়কের দিক্ভ্রান্ত গতিপথ রচনা এবং মিথ্যার পৃথিবীতে বাস করা— সবই পরিলক্ষণ করা যায়।
এ ছাড়া ফ্রিজ শটের ব্যবহার, স্থিরচিত্রের প্রয়োগ এবং শব্দের সৃজনশীল প্রয়োগও লক্ষণীয়। এরপর মৃণালদার একাধিক ছবিতে, ব্যতিক্রমী পরিচালক জঁ লুক গোদারের প্রভাবও লক্ষ করা যায়। ক্রমশ, তিনি কাহিনিকে গৌণ করে আখ্যানরূপকে ছিন্নভিন্ন করে এক অভিনব আঙ্গিক সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। ‘কলকাতা ৭১’ (১৯৭২) এক অমোঘ সৃষ্টি, যা কিনা মার্ক্সীয় রাজনৈতিক মতবাদের সমসাময়িক বিশ্লেষণ করার গভীর প্রয়াস। একাধিক গল্পের সমন্বয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্র যেন একটি মানুষের এগিয়ে চলা। যুগ থেকে যুগান্তরে। এবং ভারতের বিবর্তনের ইতিহাসে কীভাবে শোষণ এবং অত্যাচার অবিচ্ছেদ্য ভাবে থেকে গেছে, তাও পরিস্ফুট হয়েছে দৃশ্যশ্রাব্য সৃষ্টিতে।
গোদার তাঁর ছবিতে এবং তাত্ত্বিক আলোচনায় বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, সোজাসাপ্টা সরলরৈখিক কাহিনির মাধ্যমে কখনোই এমন বার্তা প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তাই তিনি ক্রমাগত ভিন্ন প্রকৃতির উপাদান ব্যবহার করে, দর্শককে ভাবাবার প্রয়াস করে গেছেন। কখনও স্থিরচিত্র, কোথাও বা অঙ্কনচিত্র, কোথাও লিপিবদ্ধ বার্তা, কখনও নেপথ্য ধারাভাষ্য, আবার কোথাও যথাযথ ধ্বনি-প্রয়োগের ফলে তাঁর চলচ্চিত্র জীবন্ত হয়ে উঠেছে। মৃণালদাও বিভিন্ন চলচ্চিত্রের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে গল্প-বহির্ভূত দৃশ্য, মনস্তাত্ত্বিক শব্দ প্রয়োগ এবং পরস্পর-বিরোধী দৃশ্যসমূহ ব্যবহার করেছেন। কোথাও আবার মন্তাজ দেখা দিয়েছে, সৃষ্ট হয়েছে এক চমৎকার ছন্দময়তা। যেহেতু মৃণালদা বেশিরভাগ চলচ্চিত্রে আঙ্গিক নিয়ে পরীক্ষা করেছেন, তাঁকে সমালোচনার শিকারও হতে হয়েছে। অনেকের মতে, তাঁর ছবিতে নন্দনতাত্ত্বিক ভারসাম্য সবসময়ে পাওয়া যায়নি। কেউ আবার জোর গলায় বলেছেন যে, তাঁর ছবিতে একটা এলোমেলো ভাব অনেকক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে। আমি অবশ্য এই ধরনের অভিমতকে মেনে নিতে পারি না। যে-কোনও শৈল্পিক সৃষ্টির মধ্যে সর্বদাই এক ধরনের স্বকীয় রচনাশৈলী থাকে। যে-শিল্পকর্ম খুব সাজানো-গোছানো, সেটাই যে উন্নত শিল্পসৃষ্টি হবে, তার কোনো মানে নেই। আপাতদৃষ্টিতে অগোছালো কোনও সৃষ্টিও অসাধারণত্বের দাবি করতে পারে। সবটাই আপেক্ষিক এবং দৃষ্টিকোণের উপর নির্ভরশীল। আসলে, মৃণালবাবু যেমন বাস্তবধর্মী গল্প বলতে পারতেন, তেমনই তিনি ধ্রুপদি কাহিনির নিয়ম ভেঙে নানা রকমের পরীক্ষামূলক উপাদান ব্যবহার করতে পছন্দ করতেন।
‘পুনশ্চ’ (১৯৬০) চলচ্চিত্রটি খুবই সংবেদনশীল একটি আখ্যান, যা কিনা প্রচলিত আঙ্গিকের মাধ্যমে উপস্থাপিত। মধ্যবিত্ত সমাজকে চমৎকার ভাবে চলচ্চিত্রায়িত করা হয়েছে এই সৃষ্টিতে। অন্যদিকে, ‘পদাতিক’ ছবিটিতে কলকাতার বিপ্লবমুখর চেহারাকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা দেখা যায়। নকশাল রাজনীতির সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অনুরণনগুলোকে চুলচেরা বিচার করা হয়েছে। আমার নিজের তৈরি ছবি ‘শূন্য থেকে শুরু’ (১৯৯৪) কিছু অংশে মৃণালদার এই অনন্যসাধারণ সৃজনের দ্বারা প্রভাবিত বললে, খুব ভুল বলা হবে না। একটি সুসজ্জিত গৃহের শৈল্পিক আসবাবপত্র অকস্মাৎই ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ‘টেলিফোন শাওয়ার’টি কেন্দ্রীয় চরিত্রের বিভ্রান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়… এ যেন এক আত্মসমালোচনামূলক ছবি।
তবে ক্রমশ মৃণালদা চিৎকৃত প্রতিবাদের পথ ত্যাগ করে আত্মবিশ্লেষণের পথটি বেছে নেন। আশি এবং নব্বইয়ের দশকের অনেকাংশে, তিনি মধ্যবিত্ত সমাজকে অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে পরিলক্ষণ করতে আরম্ভ করেন। নিজেকেও তীব্রভাবে সমালোচনা করতে থাকেন। ছবির আঙ্গিকও পরিবর্তিত হতে থাকে। পরিণত মনের পরিচয় পাওয়া যায়। একজন দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তি সারারাত গৃহের বাইরে থেকে যান। কোথায় গিয়েছিলেন তিনি? আময়া জানি না। একজন বয়স্ক মানুষ অকস্মাৎই বাড়ি ছেড়ে চলে যান। আর ফিরে আসেন না। কেন? কী এমন কারণ থাকতে পারে তাঁর এই অন্তর্ধানের পশ্চাতে? তাও জানা নেই। দুজন মানুষ সারা ছবি জুড়ে দূরভাষে কথা বলে যান। তাদের দেখা কিন্তু হয় না। অদ্ভুত? হয়তো।
এই ধরনের ব্যতিক্রমী বিষয় নিয়ে মৃণাল সেন শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করে গেছেন। হয়তো আরও অনেকগুলো ছবি তৈরি হতে পারত। নতুন বিষয়। নতুন আঙ্গিক। নতুন প্রশ্ন। নতুন চিন্তা। কিন্তু তা না হলেও, যে-ধরনের কাজ করে গেছেন এই বিতর্কিত চিত্র-পরিচালক, তা অবশ্যই দীর্ঘদিন আলোচিত হবে দেশে-বিদেশে। বিশেষ করে যাঁরা চলচ্চিত্রের সঙ্গে কোনও-না-কোনও ভাবে যুক্ত, যাঁরা সমালোচক বা শিক্ষক, যাঁরা চিত্র-পরিচালক— তাঁরা কখনওই এই মহান স্রষ্টাকে ভুলে যেতে পারবেন না। কারণ মৃণাল সেন সমাজ পরিবর্তন করতে পারেননি ঠিকই, কিন্তু প্রশ্ন করে গেছেন। একের পর এক প্রশ্ন। এক-একটি প্রশ্ন যেন এক-একটি বিস্ফোরণ, যা কিনা তীব্র প্রতিবাদের আকার ধারণ করেছে।
আজকের এই অন্তঃসারশূন্য রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে যখন প্রতিবাদের ভীষণ অভাব আমরা অনুভব করতে পারছি, তখন মৃণাল সেনের চলচ্চিত্র আমাদের দিবাস্বপ্ন থেকে জাগ্রত করতে নিঃসন্দেহে সচেষ্ট হতে সক্ষম হতে পারবে।
নানা ধরনের সমস্যায় জর্জরিত এই সমাজে, কেউ খুব একটা ঝুঁকি নিতে চান না। সহজ-সরল পথ দিয়েই হাঁটতে চায় বেশির ভাগ স্রষ্টা। তাই মৃণালদার বিশেষ প্রয়োজন।
‘খণ্ডহর’ ছবিটি এক চমৎকার সৃষ্টি। মাঝে মাঝে মনে হয়, সময় থেমে গেছে। এই ছবি করার সময়ে মৃণালদা মনি কউলের উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, মনি-ই একমাত্র পরিচালক যিনি সময়কে প্রায় থামিয়ে দিতে পেরেছিলেন। ‘খণ্ডহর’ একটি হিন্দি ছবি; তার আঙ্গিকও গতানুগতিক নয়। প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ নামক সাহিত্যসৃষ্টি থেকে এর রূপান্তর হয়েছে। এখানে বৃদ্ধা মা চোখে দেখতে পান না, তাই তাঁকে মিথ্যা বলা হয়। তবে, মিথ্যা না বললে, আরও অশান্তি ঘটবে বলে এই তঞ্চকতার আশ্রয় নিতে হয়। ক্যামেরার ছন্দময় বিচরণ এবং সম্পাদনার নান্দনিক প্রয়োগের ফলে, এই চলচ্চিত্র মুগ্ধ করে। অথচ এই মানবিক মূল্যবোধের কাহিনিতেও রাজনীতি আছে। আছে, এক অর্থে, সামন্ততান্ত্রিক সভ্যতার ভগ্নাবশেষের বিপরীতে বুর্জোয়া সভ্যতার আস্ফালন। মৃণালদার পরিচালনায় বিষয়ের নানা অনুরণন জাগ্রত হয়ে ওঠে। গ্রাম্য পরিবেশেও শহুরে চিন্তাধারার প্রভাব খুঁজে পাওয়া যায়। আবার এক-এক সময়ে মনে হয়, ক্ষয়িষ্ণু সামন্ততান্ত্রিক সমাজের দুর্দশা দেখে উঠতি মধ্যবিত্ত তরুণ প্রজন্ম যেন কাঁদছে। তবে দু’চোখ দিয়ে অশ্রুপাত হচ্ছে না। এক চোখে জল আর অন্য চোখে কৌতূহল।
মৃণালদার বেশ কিছু ছবি দ্ব্যর্থকতায় পরিপূর্ণ। তিনি একা। তিনি ভাবছেন। আর তাঁর বিচিত্র ভাবনা থেকে তাঁর ছবি তৈরি হচ্ছে। তিনি পরস্পর-বিরোধী কথাও বলেন। তাই তাঁর ছবি আমাদের নানা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ফেলে দেয়। এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বই কাম্য। এটাই মৃণাল সেন সব সময়ে চেয়েছেন। দর্শককে ঘুমিয়ে পড়তে দেওয়া যায় না। তাদের অস্থির করে তুলতে হবে।