ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ‘খারিজ’ থেকে ‘পালান’


    সংযুক্তা বসু (September 16, 2023)
     

    অনেকদিন আগে এক আড্ডায় মৃণাল সেন বলেছিলেন, ‘খুব ইচ্ছে করে আমার ছবিগুলোর চরিত্রদের আবার ফিরে দেখতে। কেমন আছে তারা?’ এবার আসছে ‘পালান’, কৌশিক গাঙ্গুলির নতুন ছবি, যা মৃণাল সেনের ‘খারিজ’ ছবির সম্প্রসারিত পর্ব বা সিকোয়েল। ২০১৩ সালে ‘পথের পাঁচালি’র অপু চরিত্রের শিশুশিল্পী সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন নিয়ে কৌশিক পরিচালনা করেছিলেন ‘অপুর পাঁচালি’। সেটা ছিল সত্যজিৎ রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। এবার মৃণাল। কৌশিক বললেন, ‘মৃণালদাকে ভাল লাগে, কারণ ওঁর ছবির সেটের দেওয়ালে ওয়াল-পেপার লাগানো হয় না। দেওয়ালের শ্যাওলা তৈরি হয় একেবারে বাস্তবতা মেনে। ওঁর ছবির যে ভাষা যে আঙ্গিক আমি বুঝেছি, তা আমার খুব আধুনিক, আর সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা মনে হয়।’ কৌশিককে প্রাণিত করে মৃণালের ভাবনার চলন। ছোট্ট একটা অনুভূতি, ছোট্ট একটা মুহূর্তকে নিয়ে ছবি করতে পারতেন মৃণাল। এসে পড়ত মধ্যবিত্ত জীবনের গভীরে ঢুকে পড়া সংশয়, দুশ্চিন্তা, অভাব, স্বভাব আর মূল্যবোধ।

    রমাপদ চৌধুরীর কাহিনি অবলম্বনে বানানো ছবি ‘খারিজ’-এর গল্পটা কী? নবীন দম্পতি অঞ্জন ও মমতার বাড়িতে কাজ করতে এসেছিল পালান নামের একটি বাচ্চা ছেলে। শীতের রাতে কনকনে ঠান্ডা থেকে বাঁচতে রান্নাঘরে গিয়ে শুয়েছিল সে। বছরের সেই শীতলতম রাতে নিভু-নিভু উনুন থেকে উঠে আসা কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসের বিষাক্ত প্রকোপে পালানের মৃত্যু ঘটেছিল। ১৯৮২ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমা দেখে কৌশিকের প্রবল কষ্ট হয়েছিল। পালান যে বাড়িতে কাজ করত, সেই বাড়িরই আর এক বালক-ভৃত্য হরির (অভিনয় করেছিলেন দেবপ্রতিম দাশগুপ্ত) সেই দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়ে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকা কৌশিকের কিশোর-মনকে বেদনার্ত করেছিল। হরি যেন তাঁর চোখে হয়ে উঠেছিল অনেকটা মাংসের দোকানে জবাই হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা প্রাণীর মতো। সেই অনুভূতি আজও ভুলতে পারেন না কৌশিক।

    পালান মারা যাবার পরই শেষ হয়ে যায় ছবির গল্প। কিন্তু কৌশিকের দৃষ্টিকোণে, ‘পালান একটা সমস্যার নাম, উপলব্ধিরই নাম। পালানরা আজও আছে। আজও মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত বাড়িতেও কাজের লোককে মাটিতে শুতে হয়। সমান আসনে বসার নিয়ম নেই। কোত্থাও কিস্যু বদল হয়নি জীবনের, পৃথিবীর। সব এক আছে।’ তবে এই ৫৫ বছর বয়সে দাঁড়িয়ে কৌশিকের পালানের জন্য সেই কষ্টটা সরে গেছে। এখন উৎকন্ঠা হয় ষাটোর্ধ্ব অঞ্জন সেন (অঞ্জন দত্ত) আর মমতা সেনকে (মমতাশঙ্কর) নিয়ে। তাই পালান’ ছবিতে তাঁরাই হয়ে ওঠেন যন্ত্রণার এপিসেন্টার। তাঁদের একমাত্র ছেলের চরিত্রে অভিনয় করছেন যীশু সেনগুপ্ত। পুত্রবধূ পাওলি দাম। রয়েছেন হরি ওরফে দেবপ্রতিম। আর রয়েছেন প্রতিবেশিনীর চরিত্রে শ্রীলা মজুমদারও। ‘পালান’য়ের শুটিং চলাকালে তাঁরা সকলেই মৃণালকে নিয়ে নস্টালজিক হয়ে পড়তেন বলে জানালেন কৌশিক, ‘অঞ্জনদা, মমদি, শ্রীলাদির কাছে সেই সময় এবং মৃণালদাকে নিয়ে অনেক কিছু জেনেছি। শুনেছি অনেক কিছু দেবপ্রতিমের কাছে।’ এই নস্টালজিয়া কৌশিকের কাছে ছিল বড়দের হাত ধরে ছেলেবেলার ঐতিহ্য দর্শনের মতো।

    পালান মারা যাবার পরই শেষ হয়ে যায় ছবির গল্প। কিন্তু কৌশিকের দৃষ্টিকোণে, ‘পালান একটা সমস্যার নাম, উপলব্ধিরই নাম। পালানরা আজও আছে। আজও মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত বাড়িতেও কাজের লোককে মাটিতে শুতে হয়। সমান আসনে বসার নিয়ম নেই। কোত্থাও কিস্যু বদল হয়নি জীবনের, পৃথিবীর। সব এক আছে।’

    কৌশিকের আরও বক্তব্য: মৃণাল সেনের শতবর্ষে ‘পালান’ ছবিটি আসলে তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর একটি ‘ছুতো’। কৌশিক মনে করেন, তাঁর বেশ কিছু ছবিই মৃণাল সেনের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। যেমন ‘নগরকীর্তন’, ‘ছোটদের ছবি’ বা ‘সিনেমাওয়ালা’। মৃণালের শতবর্ষে কেউ কেউ তাঁর ছবি নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন, কেউ বা বানাচ্ছেন তথ্যচিত্র বা জীবনী। কৌশিক বললেন, ‘জীবনী বা জীবনদর্শন, এই দুটোই তো পথ। আমার জীবনদর্শন নিয়ে ছবি করতেই ভাল লাগে। মৃণালদার যে কমিউনিস্ট মানসিকতা ছিল, তার থেকে যে জীবনদর্শন তৈরি হয় তারই একফালি নিয়েই তো একটা ছবি করা যায়।’   

    কৌশিকের ছবি ‘শব্দ’ দেখে অভিভূত হয়েছিলেন মৃণাল সেন। হল-এ গিয়ে তাঁর শেষ দেখা ছবি ‘শব্দ’। প্রথমবার একাই দেখেছিলেন ছবিটি। দ্বিতীয়বার দেখেছিলেন পুত্র কুণালকে নিয়ে। ছবিটি দেখে আপ্লুত হয়ে মৃণাল সেন আমাকেই বলেছিলেন, ‘কী ভাল ছবি বানিয়েছে কৌশিক। একবার কৌশিককে বোলো আমার সঙ্গে দেখা করে যেতে। গল্প হবে।’ মৃণালের এই ইচ্ছের কথা কৌশিককে জানিয়েছিলাম। কিন্তু কৌশিক যাননি মৃণালের বাড়িতে। তাঁর কথা হল, ‘আমি বড় শক্তির থেকে দূরে থাকতে চাই। ঠিক যেমন মানুষ উনুনে হাত দেয় না, আঁচ লাগার ভয়ে। এর জন্যে একটা অপরাধবোধ আছে। তা থাক। অসংখ্য মানুষকে মৃণালদা ভালবাসতেন। আমি তাদেরই একজন হয়ে দূরে দূরেই ছিলাম।’ 

    মৃণালের মৃত্যুর সময় এই কৌশিককেই দেখেছিলাম শ্মশানে এক কোণে চুপচাপ একান্ত অনুরাগীর মতো দাঁড়িয়ে থাকতে। শতবর্ষের ‘পালান’ নিয়ে কথা উঠতে কৌশিক আরও বললেন, ‘এ তো শুধু মৃণালদার শতবর্ষের ছবি নয়। রমাপদ চৌধুরীর শতবর্ষ ছিল ২০২২ সালে। সুতরাং জোড়া শতবর্ষ উদ্‌যাপন হল এই ছবি।’  

    কারও মনে হতে পারে, নতুন ছবি না করে, একটা পুরনো ছবির জের টেনে ছবি করা কেন? কৌশিকের মত হল, পাখি ফল খেয়ে তার বীজ জমিতে ফেলে। সেই বীজ থেকেই তো আবার নতুন গাছ হয়। ফল ধরে। ‘এখানে আমার ভূমিকাটি সেই বীজ-বহনকারী পাখির মতো। এমনও তো হতে পারে, আজ থেকে ২৫ বছর পর কোনও তরুণ পরিচালক আমার এই ‘পালান’কে ভিত্তি করেই একটি ছবি করল।’ ছবি থেকে ছবিতে এই যাত্রার পরম্পরা খারিজ না হলেই ভাল।

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook