ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • নম্বরস্ফীতি, নম্বরভীতি


    বিষাণ বসু (May 19, 2023)
     

    চমৎকৃত হওয়ার শুরু আজ নয়। হয়েছিলাম বছর বারো আগে। অনেকদিনের পরিচিত এক ডাক্তারবাবু এসে বললেন, ‘হ্যাঁ রে, অমুক ডিপার্টমেন্টের হেড আর তুই একই কোয়ার্টারে থাকিস তো!’ উত্তরে হ্যাঁ শুনে তিনি জানালেন, তাঁর ছেলে এবারে ওই বিষয়ে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে, আমি যদি স্যারকে একটু বলে দিই…। অনুরোধটা শুনে খারাপ লাগল। ছেলেটা কি পরীক্ষা খারাপ দিয়েছে? মানে, ফেল করে যাবার মতো খারাপ? (বলে রাখা যাক, আমরা যে-সময়ে ডাক্তারি পড়েছি, সে-সময়ে ফেল ব্যাপারটা আকছার ঘটত। এমবিবিএস-এর তিনটি দফায় সব বিষয় একবারে পাস করাটাই দস্তুরমতো কৃতিত্বের ব্যাপার ছিল। এবং বড় ডাক্তারের ছেলে/মেয়ের হয়ে স্বয়ং ডাক্তারবাবু পরীক্ষকদের অনুরোধ করলে সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রীর ফেল করার মতো পরীক্ষা দিয়েও পাস করে যাবার সম্ভাবনা থাকত।) ডাক্তারদাদা আশ্বস্ত করলেন, না না, ছেলে মোটেই পরীক্ষা খারাপ দেয়নি, তিনি অনুরোধ করছেন ছেলের অনার্স পাওয়ার জন্য। ডাক্তারি পরীক্ষায় অনার্স বলতে কোনও বিশেষ বিষয়ে পঁচাত্তর শতাংশ মার্কস প্রাপ্তি। আমাদের সময়ে যেটি ছিল অতিবিরল ঘটনা। ধরুন, পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর এক কি দুজন পরীক্ষার্থী সেই কৃতিত্ব অর্জন করতে পারত, কোনও-কোনও বার কোনও-কোনও বিষয়ে একজনও না। সুতরাং, অনুরোধ রাখার প্রশ্ন তো নেইই, অনুরোধটা শুনেই ঘাবড়ে গেলাম। তার পর আশেপাশে খবর নিয়ে জানলাম, অনার্স ব্যাপারটা ইদানীং অতিবিরল তো নয়ই, পড়াশোনায় মাঝারি মানের যারা, তারাও এমবিবিএস-এ অন্তত একটি বিষয়ে অনার্স না পেলে রীতিমতো হতাশ বোধ করে, অনেকে তো এমবিবিএস-এর প্রতিটি ধাপেই একাধিক বিষয়ে অনার্স পেয়ে থাকে।

    আমার গল্পটির উদ্দেশ্য যারা অনার্স পাচ্ছে, বা যারা পরীক্ষায় একগাদা নম্বর পাচ্ছে, তাদের ছোট করা নয়। তাদের অনেকেই অনেক-অনেক নম্বর পাবার যোগ্য। বিপুল পরিমাণ তথ্য— যা আধুনিক ডাক্তারিশিক্ষার অন্যতম অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেই তথ্যের ভার আত্মস্থ করার ব্যাপারে তারা অনেকেই আমাদের সময়ের চাইতে এগিয়ে। কিন্তু পরীক্ষার নম্বরের যে প্রায়োগিক গুরুত্ব— অর্থাৎ নম্বর এবং বিদ্যার্জনের যে কাঙ্ক্ষিত সম্পর্ক— ডাক্তারি পড়াশোনার ক্ষেত্রে যাকে বলা যায়, ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট সবসময়ে ভবিষ্যতে ‘বড় ডাক্তার’ যদি না-ও হয়, অন্তত বড় অ্যাকাডেমিশিয়ান হবে, এমন প্রত্যাশা— নম্বরের এই বাড়বাড়ন্তর বাজারে তেমন কিছু নজরে পড়ছে কি? মানে, আগেকার সময়ে যাঁরা অত-অত মার্কস পাননি, সেই প্রজন্মের তুলনায় এখন কি, বাড়তি নম্বরের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে, ডাক্তারিক্ষেত্রে আরও অনেক বেশি সংখ্যক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের মুখ আমরা দেখতে পাচ্ছি?

    শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে বেশি-বেশি নম্বরের এই প্রবণতা, শুধু এই দেশে নয়, সারা বিশ্বেই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। ঠিক নিখাদ দুশ্চিন্তা নয়, এ-বিষয়ে সবরকম ভাবনাচিন্তাই চলছে। পরীক্ষার মার্কসের দুটো দিক থাকে। এক হল, ইনসেন্টিভ হিসেবে মার্কস-এর ভূমিকা। অর্থাৎ, পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়াটা সংশ্লিষ্ট ছেলে/মেয়েটিকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করে। পশ্চিমা দুনিয়ায় হাই গ্রেড পাবার যে উত্তরোত্তর ক্রমবর্ধমান প্রবণতা, তা আরও বেশি সংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে উচ্চতর শিক্ষার দিকে আগ্রহী করছে, বিভিন্ন স্টাডি থেকে এটুকু স্পষ্ট। তবে সেই আগ্রহ ব্যবহারিক ক্ষেত্রে আলাদা করে ভাল কিছু প্রভাব ফেলছে কি না, সে নিয়ে নানা মুনির নানা মত। আবার অনেকে এভাবেও দেখছেন, যে, শিক্ষার্থী দ্বারা শিক্ষকের ইভ্যালুয়েশন চালু হওয়ার পরেই এই বাড়তি গ্রেডের প্রবণতা, কেননা যে শিক্ষক বেশি-বেশি নম্বর দেন, তিনি, স্বাভাবিকভাবেই, ছাত্রছাত্রীদের কাছে জনপ্রিয়। আমাদের দেশে যদিও শিক্ষকদের জন্য এমন ইভ্যালুয়েশন প্রথা এখনও ততখানি প্রচলিত নয়, তবু লেখাপড়া-ব্যবস্থার খামতি মেটানোর জন্য বেশি-বেশি নম্বর দিব্যি সুন্দর একটা সমাধান তো বটেই।

    পরীক্ষার মার্কস-এর আরেকটি গুরুত্ব, ভাল ছাত্রকে খারাপ ছাত্রের থেকে আলাদা করে চিহ্নিত করতে পারা— খুব ভালকে ভালর থেকে আলাদা করতে পারা। কিন্তু সেটা আর সম্ভব হচ্ছে কি? এই যেমন ধরুন, মাধ্যমিক বা উচ্চতর মাধ্যমিক পর্যায়ে, দেশের সব বোর্ড মিলিয়ে, এক বছরে সারা ভারতে কয়েক লক্ষ ছাত্রছাত্রী পঁচানব্বই শতাংশের চাইতে বেশি নম্বর পেয়েছে। এমন ঘটনা থেকে দুটো সম্ভাবনার কথা মনে পড়ে— এক, ভারতে শিক্ষাব্যবস্থার চমকপ্রদ উন্নতি ঘটেছে, নতুবা দুই, ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরা উত্তরোত্তর মেধাবী থেকে মেধাবীতর হয়ে উঠছে। প্রথমটি যদি নিতান্ত অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়, তাহলে দ্বিতীয় সম্ভাবনাটিই মেনে নিতে হয়। কিন্তু সেক্ষেত্রেও, মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্যও, এই ঢালাও নম্বর ব্যবস্থায় ভালদের থেকে খুব ভালদের আলাদা করা যাচ্ছে কি?

    এরও পরে তৃতীয় একটি সম্ভাবনা পড়ে থাকে, পরিভাষায় যার নাম গ্রেড ইনফ্লেশন। মুদ্রাস্ফীতির মতোই নম্বরস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতিতে যেমন মুদ্রার দাম বাড়ে না, বরং বাজারে তার মান কমে— নম্বরস্ফীতিতেও তা-ই। অতএব, ১০+২ পর্যায়ে বন্ধুর ছেলে সাতানব্বই শতাংশ মার্কস পাওয়ার পরও হাসিমুখে কনগ্র্যাচুলেট করতে পারি না, কেননা এটুকু জানি, গত বছরই, আমার এক অগ্রজ বন্ধুর মেয়ে ওর চাইতেও বেশি মার্কস পাবার পরেও, কলকাতার নামীদামি কলেজে পছন্দের বিষয়ে ভর্তি হতে পারেনি। যদিও, যে-কোনও পরীক্ষায় সাতানব্বই শতাংশ মার্কস পাওয়ার জন্য তথ্য-আহরণ ও তার প্রকাশের ক্ষেত্রে যে কতখানি নিখুঁত হতে হয়, তা আমরা যারা কখনও ওই নম্বরের আশেপাশেও যাইনি, তারাও বুঝতে পারি। কাজেই, বেশি-বেশি নম্বর যে নম্বরের তাৎপর্য কমাচ্ছে, তা আন্দাজ করা কঠিন নয়। তবে, বেশি-বেশি নম্বর মানেই গ্রেড ইনফ্লেশন বা নম্বরস্ফীতি, এমন না-ও হতে পারে। নম্বরস্ফীতি হিসেবে চিহ্নিত করতে গেলে প্রমাণ করতে পারা জরুরি, যে, আগেকার তুলনায় এখন, একইরকম পারফর্ম্যান্সে, বেশি মার্কস দেওয়া হচ্ছে। সেই প্রমাণ মেলা তো সহজ কাজ নয়। তবে কাছাকাছি একটা প্রমাণ সদ্য মিলেছে, সেই ঘটনাটার উল্লেখ করা যেতেই পারে। এটিও মেডিক্যাল শিক্ষাব্যবস্থার ঘটনা। 

    সম্প্রতি কলকাতার সবচাইতে নামকরা মেডিক্যাল কলেজের কয়েকজন ছেলে, পরীক্ষায় সত্তর শতাংশ মার্কস পাবার পর, খাতা রিভিউ করতে দিয়েছিল। সত্তর শতাংশ মার্কস পাবার পরেও অতৃপ্তি কেন? কেননা তাদের মনে হয়েছিল, যে, তাদের অনার্স (অর্থাৎ পঁচাত্তর শতাংশ) পাওয়া উচিত। ওই যে, আগেই বললাম, অনার্স এখন বিরলতম ব্যাপার নয়, বরং না পেলে খারাপ লাগার বিষয়। তো রিভিউ করার পর দেখা গিয়েছে, নম্বর বাড়া তো দূর, এদের প্রত্যেকেরই নম্বর কমে গিয়েছে। কমে গিয়েছে মানে, একেবারে তিরিশ শতাংশেরও নীচে নেমে গিয়েছে। অর্থাৎ, রিভিউ করিয়ে, অনার্স পাবার পরিবর্তে এরা সবাই পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে গিয়েছে। অতএব, অন্তত এটুকু স্পষ্ট, এদের সত্তর শতাংশ পাওয়াটা, যদি না পেছনে কোনও বিশেষ সুনজরের ব্যাপার থেকে থাকে, নম্বরস্ফীতির পক্ষে যথেষ্ট বড় প্রমাণ।

    মার্কস-এর অদ্ভুত বণ্টন এবং বেশি নম্বরের প্রবণতার উদাহরণ আরও দেওয়া যায়। বৃহৎ জনগোষ্ঠীর দিকে যদি দেখি, দেখা যাবে, সেখানে খুব লম্বা বা খুব বেঁটে লোকের সংখ্যা কম— খুব বুদ্ধিমান বা খুব বোকা লোকের সংখ্যা কম— অধিকাংশই মাঝারি মাপের। যে-কোনও বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেই এই গড়পড়তার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। পপুলেশনকে কোনও মাপকাঠি অনুসারে সাজালেই দেখা যাবে, মাঝারিদের সংখ্যাই সবচাইতে বেশি, যাকে রেখচিত্র আকারে পেশ করলে যে ছবি আসে, তাকে ‘বেল কার্ভ’ বলা হয়। পরীক্ষার নম্বরের ক্ষেত্রেও— বিশেষত যে-দেশে মাধ্যমিক বা ১০+২ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কয়েক লক্ষ, সেখানে পরীক্ষার ফলের ক্ষেত্রেও এমন ‘বেল কার্ভ’— যাতে মাঝখানের অংশটি সবচাইতে উঁচু, এবং দুই প্রান্ত উত্তরোত্তর সরু হয়ে এসেছে— তেমনটি দেখতে পাবারই কথা। কিন্তু বাস্তবে কী দেখা যায়?

    রিভিউ করার পর দেখা গিয়েছে, নম্বর বাড়া তো দূর, এদের প্রত্যেকেরই নম্বর কমে গিয়েছে। কমে গিয়েছে মানে, একেবারে তিরিশ শতাংশেরও নীচে নেমে গিয়েছে। অর্থাৎ, রিভিউ করিয়ে, অনার্স পাবার পরিবর্তে এরা সবাই পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে গিয়েছে। অতএব, অন্তত এটুকু স্পষ্ট, এদের সত্তর শতাংশ পাওয়াটা, যদি না পেছনে কোনও বিশেষ সুনজরের ব্যাপার থেকে থাকে, নম্বরস্ফীতির পক্ষে যথেষ্ট বড় প্রমাণ।

    ২০১৮ সালের আইসিএসই-আইএসসি-সিবিএসই পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের প্রাপ্ত মার্কস-এর ভিত্তিতে সাজাতে গিয়ে গবেষকরা অদ্ভুত একটা জিনিস লক্ষ করেছিলেন। দেখা গেল, পঁচানব্বই শতাংশের জায়গায় গিয়ে রেখচিত্রটি আচমকা অট্টালিকার মতো উঁচু হয়ে গিয়েছে। এও দেখা গেল, শূন্য থেকে একশোর মধ্যে যে-কোনও একটি নম্বরের তুলনায় (মানে, পঞ্চাশ বা বাষট্টি অথবা একাত্তর কিংবা চুরাশি ইত্যাদি নম্বরপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের তুলনায়) পঁচানব্বই শতাংশ নম্বরপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা অনেক বেশি। এবং এই প্রবণতা পরীক্ষার প্রায় প্রতিটি বিষয়ের ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, ২০০৮ থেকে সেই সময় পর্যন্ত প্রতি বছরের সিবিএসই পরীক্ষার ক্ষেত্রেই এই কথা সত্য। 

    খুঁটিয়ে দেখতে গিয়ে এও দেখা গেল, চল্লিশ থেকে একশোর মধ্যে এমন চব্বিশটি সংখ্যা রয়েছে (যেমন, ৮১, ৮২, ৮৪, ৮৫, ৮৭, ৮৯, ৯১, ৯৩ প্রভৃতি), যে-সংখ্যার নম্বর ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে আইএসসি পরীক্ষার কোনও বিষয়ে কোনও ছাত্রছাত্রীই পায়নি। ফাইনাল হিসেবের সময়ে একটা মডারেশন ব্যবস্থা অনুসরণ করা হয়, তার জন্যই নাকি ব্যাপারটা এরকম দেখতে লাগছে। কিন্তু সেটা কি ছাত্রছাত্রীদের জন্য সঠিক মূল্যায়ন?

    ২০১৮ সালে সিবিএসই পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর একটি জনপ্রিয় পত্রিকায় The Curious Case of Magic Mark 95 শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ পেলে বিষয়টি অনেকের নজরে পড়ে। কিন্তু তারও আগে এ নিয়ে গবেষণা কম হয়নি। যেমন, ২০১৩ সালের পরীক্ষার রেজাল্টের পর প্রকাশিত নিবন্ধ A Shocking Story of Marks Tampering and Inflation : Data Mining CBSE Scoring for a Decade, সেখানে পরীক্ষার মার্কস-এর অত্যন্ত বিশদ বিশ্লেষণ করে দাবি করা হয়েছিল, যে, পরীক্ষায় নম্বর ব্যাপারটা অত্যন্ত ফাঁপিয়ে তোলা হচ্ছে— কিছু কিছু বিষয়ে ফাইনাল মার্কশিটে এমনকি কুড়ি নম্বর বেড়ে যাচ্ছে এবং ছাত্রছাত্রীদের প্রাপ্ত নম্বর সাজিয়ে দেখলে মার্কস-এর যে ডিস্ট্রিবিউশন দেখা যাচ্ছে, তা সাধারণ প্রবণতা বিষয়ে রাশিবিজ্ঞানের যে বুনিয়াদি ধ্যানধারণা, তার সঙ্গে মিলছে না। তার পরও পরিস্থিতি কিছু বদলায়নি। বদলানোর বিশেষ চিহ্ন চোখেও পড়ছে না।

    তো শেষমেশ যে-কথা বলার, এত-এত নম্বরের কুফলের দিকটা যদি দেখি, মাধ্যমিক (বা ১০+২) স্তরে ছিয়ানব্বই-সাতানব্বই শতাংশ পাওয়াটাও যদি যথেষ্ট না হয়, বা যথেষ্ট কৃতিত্বের না হয়, তাহলে সেটা ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে অপরিসীম মানসিক চাপের বিষয় হয়ে দাঁড়াতে বাধ্য। কেননা, যে-কোনও একটি বিষয়ে আশানুরূপ পরীক্ষা দিতে না পারলেই মোট নম্বর বিরানব্বই শতাংশে নেমে যেতে পারে, যে-নম্বর, আজকাল, আমাদের সময়ে টেনেটুনে ফার্স্ট ডিভিশন পাবার সমতুল্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ যে কী ভয়ানক চাপ! অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েরা কি সেই চাপ সামলাতে সক্ষম? সেই চাপ সামলানোর মতো মানসিকভাবে পরিণত হয়ে উঠতে পারছে কি এই প্রজন্মের ষোড়শবর্ষীয়রা?

    লেখাটা লিখতে বসে একটা ঘটনা মনে পড়ল। যে-ঘটনার উল্লেখ এই লেখাতে আগেই করেছি। এক অগ্রজ বন্ধু, লেখাপড়ার জগতে অত্যন্ত খ্যাতিমান, দুনিয়ার সব নামকরা প্রতিষ্ঠানে পড়েছেন-পড়িয়েওছেন, তাঁর মেয়ে বারো ক্লাসের পরীক্ষায়, গত বছর, সাতানব্বই শতাংশ নম্বর পেল। মেয়ের নম্বর দেখে তিনি দিব্যি খুশি, কেননা অত নম্বর তিনিও কোনওদিন পাননি। তার পর সেই মেয়ে, অত নম্বর পেয়েও, যখন কলকাতার তথাকথিত নামী কলেজে পছন্দের বিষয় নিয়ে ভর্তি হতে পারছিল না, তখন তিনি হতবাক হয়ে আমাকে বলছিলেন, ‘দ্যাখো, আমার মেয়ের সঙ্গে এটা ঘটেছে বলেই শুধু বলছি এমন নয়, কিন্তু পরীক্ষায় সাতানব্বই শতাংশ মার্কস পেয়েও যদি কেউ কলকাতার প্রথম সারির কলেজে চান্স না পায়, তাহলে বলতেই হবে, আমাদের দেশের পরীক্ষার নম্বর বা গ্রেডিং ব্যবস্থায় কোনও সিরিয়াস সমস্যা আছে। সাতানব্বই পেয়েছে, আর কত নম্বর আমার মেয়ে পেতে পারত! কত নম্বর পাওয়াটা যথেষ্ট!’

    দেশে গ্রেডিং ব্যবস্থা বা পরীক্ষার নম্বর ব্যবস্থা নিয়ে যে-সিরিয়াস সমস্যা রয়েছে, সে নিয়ে কি দ্বিমত হবার সত্যিই কোনও সুযোগ আছে?

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook