ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • কৃত্রিম বুদ্ধির দুনিয়া


    সৈকত ভট্টাচার্য (February 17, 2023)
     

    বিজ্ঞানের এতবিধ বিষয়ের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়টার মধ্যে সেই ইয়ে ব্যাপারটা নেই। লালমোহনবাবুর ভাষায় যাকে বলে, কেমন যেন ম্যাদামারা! আজ অবধি কোনও ডেটা সায়েন্টিস্ট ‘ইউরেকা’ বলে স্নানের বালতি ছেড়ে আদুল গায়ে রাজার দরবারে উপস্থিত হয়েছেন বলে জানা যায় না; কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দু’একটা তত্ত্ব-টত্ত্ব বের করে ক্যাথলিক চার্চ তো দূরে থাক পাড়ার মন্দিরের পুরুতমশাইয়ের বিরাগভাজন হয়েছেন বলেও কোথাও শুনিনি; গাছ থেকে আপেল পড়লে সেটা খুব বেশি হলে প্যান্টে মুছে খেয়ে ফেলেছেন কিন্তু তা থেকে কেউ যুগান্তকারী আবিষ্কার-টাবিষ্কার করেছেন বলেও কেউ কোথাও লিখে যাননি; এমনকী তাদের নামে চলতি রোমাঞ্চকর গল্প নেই, তাদের ফোটো পড়ার টেবিলে বাঁধিয়ে রাখে না কেউ, তাদের কোটেশনও কেউ কখনও মনে রেখে পরীক্ষার খাতায় লিখে নম্বর পায় না কোনওদিন— মা-বাবা, মাসি-মেসো, পাড়ার পল্টুকাকু কারো কাছে তাদের কোনো সম্মান নেই। সব মিলিয়ে কম্পিউটারে খুটুর-খুটুর করে কাজ করা AI বিজ্ঞানীরা নেহাতই সাদা-মাটা, গোবেচারা। পাড়ার রকে বা ছাইয়ের দোকানে মহাকাশের ব্ল্যাকহোল থেকে ভারতের মিসাইল সব নিয়ে জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা শুনতে পাবেন, কিন্তু সত্যি করে বলুন, সেখানে কেউ কোনওদিন কাউকে ফেসবুকের ফেস আইডেন্টিফিকেশন অ্যালগরিদম বা গুগলের ডায়লগ ফ্লো অথবা হালের চ্যাট-জিপিটি নিয়ে কথা বলতে শুনেছেন? উঁহু! 

    আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার লম্বা ইতিহাস নেই। ইতিহাস না থাকলে গল্প থাকে না। কিংবদন্তির জন্ম হয় না। সাধারণ মানুষ জটিল তত্ত্বর গূঢ় কথার খোঁজ অতশত রাখে না— তাদের মনে থেকে যায় রোজকার জীবনের টুকরো-টাকরা, খবরের কাগজে পড়া খবরের অংশ অথবা স্কুলবেলায় শোনা কোনো গল্পের স্মৃতি। ইদানীং অবিশ্যি হোয়াটস্যাপ ইউনিভার্সিটির অবদান যুক্ত হয়েছে তাতে। কিন্তু এই পুরো ছবিটার মধ্যে হালের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার স্থান আণুবীক্ষণিক। এদিকে আমজনতা নিজেদের অজান্তেই প্রতি মুহূর্তে ব্যবহার করে যাচ্ছে নানা প্রকার বুদ্ধিমান যন্ত্র। হাতের মোবাইল ফোনটার কথাই ধরুন না। কিছু দরকার হলে টকাস করে গুগল করে নিই আমরা। সেখানে আবার পুরো টাইপও করার প্রয়োজন হয় না— দু’একটা শব্দ লিখলেই আপনি আগে যা যা সার্চ করেছেন তার ভিত্তিতে বাকিটা সাজেশনে চলে আসে— ক্লিক করলেই দুনিয়া খুঁজে আপনার স্ক্রিনে হাজির করে দেবে সে। আবার মনে করুন, কোনওদিন কর্মহীন পূর্ণ অবকাশে গান শুনতে ইচ্ছে হল। ইউটিউব খুললেই এতাবধি যত গান শুনেছেন তার ভিত্তিতে সে নিজেই বেছেবুছে তৈরি রেখেছে আপনার জন্য আপনার পছন্দ হতে পারে এমন সব গান। এবার মনে করুন, ডাক্তার দেখাতে গেছেন ভেলোর কিংবা চেন্নাই। সেখানে হিন্দি কেউ বোঝে না, এদিকে আপনিও ইংরিজিতে অত সড়গড় নন। উপায়? গুগল ট্রান্সলেটর আছে তো! বাংলায় বলুন, গুগলের ল্যাঙ্গোয়েজ মডেল তাকে তামিলে অনুবাদ করে পড়ে শুনিয়েও দেবে। এই তো ক’দিন আগে ফেসবুকের বইপাড়ায় দেখি মহা গোলমাল। কে নাকি কোন বইয়ের প্রচ্ছদ AI দিয়ে বানিয়ে নিজের নামে চালাচ্ছিল। সে মানুষের আঁকা না কি যন্ত্রের, সে-তফাত ধরার উপায় নেই। এতই দৃষ্টিনন্দন তার কাজ! সুতরাং দেখতে গেলে ব্যাঙ্কিং সিস্টেম থেকে বইয়ের প্রচ্ছদ, নির্বাচনের ফলাফল অনুমান থেকে কবিতা লেখা, সিনেমার ডাবিং থেকে জটিল শল্যচিকিৎসা— এই মুহূর্তে AI সর্বত্র বিরাজে। বিশ্বের তাবড় কোম্পানিরা উঠে পড়ে লেগেছে মানুষের জীবনের সর্বক্ষেত্রে কীভাবে আরও বাড়ানো যায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ। কিন্তু তাতে তাদের লাভ? আপনি বলবেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্র বেচে লাভ করা তাদের উদ্দেশ্য? নাহ্‌। সেটা তাদের লাভের একটা শতাংশ বটেই। কিন্তু আসল উদ্দেশ্য আরও আরও তথ্য সংগ্রহ। আপনার জীবনের খুঁটিনাটি সম্পর্কে তারা যত ওয়াকিবহাল হতে পারবে, তত সুবিধা হবে আপনাকে প্রলোভন দেখানোর, আপনাকে আরও বেশি করে কনজিউমার করে তোলার। কিন্তু তাতে ভুল কী? সে ব্যবসা করতে নেমেছে, তার উদ্দেশ্যই হবে পয়সা উপার্জন করা। বিস্কুটের কোম্পানি বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন টাঙায়, আর ইন্টারনেট কোম্পানিদের হাতে উন্নত প্রযুক্তি আছে, তারা তার সদ্ব্যবহার করছে। কেনাকাটা আপনার ব্যাপার! ঠিকই। কিন্তু সমস্যা হয় ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হলে। যেমন ধরুন আপনার পাসপোর্ট নম্বর, আপনার বুড়ো আঙুলের ছাপ, বা আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে, অথবা আপনার মাস-মাইনা— এই সমস্ত তথ্য আপনার একান্ত ব্যক্তিগত। আপনার অজান্তে, বিনা অনুমতিতে এই সব তথ্য তৃতীয় কোনো সংস্থা ব্যবহার করতে পারে না। এই নিয়ে গুগল, মেটা (ফেসবুক) প্রভৃতি টেকনোলজি দৈত্যদের কর্তারা বারবার ডাক পেয়েছেন আমেরিকার কোর্টে। অন্যান্য সমস্ত উন্নত দেশও জোরদার করেছে তাদের নানাবিধ তথ্যসুরক্ষা আইন আর বাজারে চালু হয়েছে এক নতুন শব্দবন্ধ— রেসপন্সিবল এ.আই. বা দায়িত্ববান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। 

    আমজনতা নিজেদের অজান্তেই প্রতি মুহূর্তে ব্যবহার করে যাচ্ছে নানা প্রকার বুদ্ধিমান যন্ত্র। হাতের মোবাইল ফোনটার কথাই ধরুন না। কিছু দরকার হলে টকাস করে গুগল করে নিই আমরা। সেখানে আবার পুরো টাইপও করার প্রয়োজন হয় না— দু’একটা শব্দ লিখলেই আপনি আগে যা যা সার্চ করেছেন তার ভিত্তিতে বাকিটা সাজেশনে চলে আসে— ক্লিক করলেই দুনিয়া খুঁজে আপনার স্ক্রিনে হাজির করে দেবে সে। আবার মনে করুন, কোনওদিন কর্মহীন পূর্ণ অবকাশে গান শুনতে ইচ্ছে হল। ইউটিউব খুললেই এতাবধি যত গান শুনেছেন তার ভিত্তিতে সে নিজেই বেছেবুছে তৈরি রেখেছে আপনার জন্য আপনার পছন্দ হতে পারে এমন সব গান। এবার মনে করুন, ডাক্তার দেখাতে গেছেন ভেলোর কিংবা চেন্নাই। সেখানে হিন্দি কেউ বোঝে না, এদিকে আপনিও ইংরিজিতে অত সড়গড় নন। উপায়? গুগল ট্রান্সলেটর আছে তো! বাংলায় বলুন, গুগলের ল্যাঙ্গোয়েজ মডেল তাকে তামিলে অনুবাদ করে পড়ে শুনিয়েও দেবে।

    ভারত সরকার দু’হাজার বাইশের শেষের দিকে দেশের কয়েকটা এয়ারপোর্টে চালু করেছে DigiYatra অ্যাপ। এই অ্যাপ এয়ারপোর্টে ঢোকার লম্বা লাইন থেকে আপনাকে মুক্তি দেবে। আপনার আধার কার্ডের তথ্যভাণ্ডারের সাথে যুক্ত থাকবে এই অ্যাপ। আর বিমানবন্দরের দরজায় বসানো থাকবে ক্যামেরা। সেই ক্যামেরায় আপনি মুখ দেখালেই DigiYatra-র ফেসিয়াল রেকগনিশন সিস্টেম চিনে ফেলবে আপনাকে। আর আপনিই সেই মেঘবালিকা কি না, আধারের তথ্য আর আপনার টিকিটের তথ্যর সাথে তা মিলিয়ে নিয়ে খুলে দেবে দরজা। পরিকল্পনা ভাল, সন্দেহ নেই। বিশেষ করে এই ব্যাঙ্গালোরের মতো শহরে যেখানে এয়ারপোর্টে ঢোকার লাইন প্রায় গ্র্যান্ড ট্রাংক রোডের মতো লম্বা হয়। কিন্তু সমস্যা ওই ফেসিয়াল রেকগনিশন সিস্টেম নিয়ে। এই যে আপনার মুখ দেখে চিনে ফেলছে— সেটা আপনার ব্যক্তিগত তথ্যের আওতায় পড়ছে। সুতরাং সেই তথ্যর সুরক্ষা দরকার।

    শুধু তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করাই রেস্পন্সিবল এ.আই.-এর একমাত্র দায়িত্ব নয়। যে-কোনও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্র চলে সম্ভাবনা তত্ত্বের (Probability theory) ভিত্তিতে। ফলে একটা এ.আই. সিস্টেম যদি একটা আপেলকে দেখে বলে ‘ইহাই আপেল’, তার অর্থ হল এই যে, তার ভিতরের জটিল গাণিতিক পদ্ধতি বলছে, ‘আমি যা যা জিনিস চিনি তাদের মধ্যে এই বস্তুটির আপেল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি’। অর্থাৎ যে-কোনও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ব্যবস্থার সত্যের উৎস হল তার এতাবধি প্রাপ্ত শিক্ষালব্ধ জ্ঞান, যা কম্পিউটারের মস্তিষ্কে সঞ্চিত থাকে কিছু গাণিতিক সমীকরণের সমাধানরূপে। অতএব শিক্ষায় যদি গলদ থাকে, তবে যন্ত্রর অনুমানও নির্ভুল হবে না। এবার এই ‘গলদ’ যদি শিক্ষাদানের পদ্ধতিগত সমস্যা হয়, তবে তা ঠিক করার জন্য আছে সেই এ.আই. ইঞ্জিনিয়ার এবং বিজ্ঞানীদের দল, যাদের দুঃখের কথা শুরুতেই বলেছি। কিন্তু ভূত যদি থাকে সর্ষের, মানে, যন্ত্রকে প্রদেয় তথ্যের মধ্যে, সকলের অজান্তে, তাহলে একটু সমস্যা আছে বইকি! কীরকম? একটা ঘটনা বলি। 

    গুগল ট্রান্সলেটরের অপরিসীম ক্ষমতার কথা কম-বেশি আমরা সকলেই জানি। বাংলা থেকে এক লহমায় সোয়াহিলি কিংবা কেচুয়াতে অনুবাদ করে দিয়ে বিদেশ-বিভুঁইতে যারপরনাই সাহায্য করে থাকে। বিভিন্ন ভাষার গঠনগত এবং ব্যাকরণগত নিয়মনীতির গাণিতিকরূপ তার মুখস্থ (নাকি, যন্ত্রস্থ?)। বছর কয়েক আগে হঠাৎ ঝড় উঠল এই গুগল অনুবাদকের প্রতি লিঙ্গবৈষম্যের অভিযোগ নিয়ে। কী মুশকিল! বেচারার যন্ত্র হয়ে শান্তি নেই!  

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook