বাইবেল খ্রিস্টানদের পবিত্র গ্রন্থ। এর দুটি অংশ রয়েছে: ওল্ড টেস্টামেন্ট এবং নিউ টেস্টামেন্ট। ওল্ড টেস্টামেন্ট-এ ইহুদি নবী এবং রাজাদের ইহুদি গল্প রয়েছে। নিউ টেস্টামেন্ট-এ আছে যিশু খ্রিষ্টের গল্প। পুরনো ধারণা ঈশ্বরের ন্যায়কে মূল্য দেয়, এবং ঈশ্বরকে এমন একজন হিসাবে দেখে যে বশ্যতা এবং বাধ্যতা দাবি করে। নতুন ধারণা ঈশ্বরকে একজন প্রেমময় পিতা হিসেবে দেখে।
বাইবেলের অর্থ বোঝার জন্য, মানুষকে অবশ্যই বাইবেলের গঠনটি বুঝতে হবে। বাইবেল অনুমান করে যে ঈশ্বর, সমস্ত প্রাণী এবং গাছপালা এবং মানুষ সহ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তিনি আশা করেছিলেন মানুষ কিছু নিয়ম মেনে বাঁচবে। কিন্তু, মানুষ সেই নিয়ম ভেঙেছে। ফলস্বরূপ, মানুষকে স্বর্গ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। মানব ইতিহাস তখন আদি স্বর্গ বা স্বর্গে ফিরে যাওয়ার এই অনুসন্ধানে পরিণত হয়। প্রশ্ন হল মানুষ কী ভাবে তা করতে পারে?
ওল্ড টেস্টামেন্ট, এটি ঈশ্বরের আইন বা ন্যায় অনুসরণ করে। এবং নিউ টেস্টামেন্ট সম্পর্কিত, এটি যিশুখ্রিষ্টকে ত্রাণকর্তা হিসাবে গ্রহণ করার মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রেমের বশ্যতা স্বীকার করে। একজনকে এটাও স্বীকার করতে হবে যে,মানুষের পাপের জন্য, ঈশ্বর নিজেই তাঁর পুত্র যিশুখ্রিষ্টকে উৎসর্গ করেছেন।
স্বর্গ হারানো এবং স্বর্গ পুনরুদ্ধারের ধারণাটি বাইবেলে বার বার ফিরে আসে। আমাদের বলা হয় যে কেনান, বা বর্তমানে যে অঞ্চলটি ইজরায়েল নামে পরিচিত, সেটি ছিল পবিত্র ভূমি। এখানে একসময় ইহুদিদের বসবাস ছিল। এই ছিল সেই দেশ যেখানে আব্রাহাম, মেসোপটেমিয়া থেকে অনেক আগেই এসে বসবাস করতে শুরু করেছিলেন। তিনি এখানে তার শিকড় স্থাপন করেছেন। তিনি এই জমিতে কূপ খনন করেন এবং এই জমিতে তাঁর পরিবারকে সমাহিত করা হয়। এটি ইহুদিদের পবিত্র ভূমিতে পরিণত হয়েছিল।
কিন্তু, প্রচণ্ড খরায় তাঁরা এই জমি হারান। তাঁরা মিশরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, যেখানে তাঁরা কিছু সময়ের জন্য সুখে বসবাস করেছিলেন, যতক্ষণ না তাঁদের দাসত্বে বন্দি করা হয়েছিল। হজরত মুসা তাঁদেরকে মিশরের দাসত্ব থেকে বাঁচতে এবং কানান-এ ফিরে যেতে সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু ততদিনে কানান প্যালেস্টিনিয়ানদের দখলে চলে গিয়েছিল। অনেক যুদ্ধের পর, ফেরত আসা হিব্রুরা রাজা শলের অধীনে ইজরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। শল-এর পর ক্ষমতায় আসেন রাজা ডেভিডের। ডেভিডের পরে এসেছিলেন রাজা সলোমন। এঁরা ছিলেন মহান রাজা। মানুষ ঈশ্বরের পথ ভুলে গিয়ে মিথ্যা দেবতাদের উপাসনা করতে লাগল। এ কারণে তারা আবারও তাঁদের বাসভূমি হারিয়েছে। তখন এই ভূমির দখল নিয়েছিল অ্যাসিরিয়ান এবং ব্যাবিলনীয় রাজারা। ইহুদিরা ব্যাবিলনে নির্বাসিত হয়েছিল। সলোমন দ্বারা নির্মিত ঈশ্বরের মন্দিরটি সিরিয়ানরা ধ্বংস করেছিল।
ইহুদিরা দীর্ঘকাল নির্বাসনে ব্যাবিলনে বাস করত। এবং সেই সময়ই ইজেকিয়েল এবং ডেভিডের মতো নবীরা ছিলেন এবং ঈশ্বরের মন্দিরের পুনরুত্থানের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। জেরুজালেমে প্রত্যাবর্তন এবং মন্দিরের পুনর্নির্মাণ এক শতাব্দী পরে ঘটেছিল, এ জন্য পারস্য রাজাদের অবদান অনস্বীকার্য।
স্বদেশ হারানো এবং ফিরে আসার এই ধারণাটির ইসলামী সাহিত্যে পুনরাবৃত্তি হয়। এখানে, আমরা নবী মুহাম্মদকে বাধ্য হয়ে পবিত্র শহর মক্কা ত্যাগ করার তথ্য পাই। তাঁর একেশ্বরবাদী ধারণাগুলি, পৌত্তলিক এবং বহুঈশ্বরবাদে বিশ্বাসী অভিজাতদের দ্বারা চ্যালেঞ্জ করেছিল বলেই তাঁর এই পরিণতি ঘটে। অনেক যুদ্ধের পর, তিনি বিজয়ী হয়ে মক্কা শহরে ফিরে আসেন, প্রায় যেন আদম ইডেনে ফিরে আসছেন।
এইভাবে, আমরা স্বদেশ হারানো এবং পুনরায় সর্বোচ্চ আনন্দের জায়গায় ফিরে আসার ধারণাটি পাই— যা বাইবেলের বর্ণনার মৌলিক কাঠামো গঠন তৈরি করেছে।