ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • মিথকে উপেক্ষা করা যায় না

    দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik) (July 15, 2022)
     

    প্রত্যেক মানুষ তার নিজস্ব একটি ধ্যান-ধারণার চৌখুপিতে বিশ্বকে ফিট করিয়ে দেখে। কেবলমাত্র দেবতাদেরই, সম্ভবত, সম্পূর্ণ একটি ধারণা আছে। ভাগ্য, স্বাধীন ইচ্ছা আর ঈশ্বর — তিনটি ভিত্তি যা শতাব্দী ধরে সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রেখেছে; এই তিনটি ভিত্তি যা কখনও প্রমাণ বা অ-প্রমাণ সাপেক্ষ নয়; তাদের কেবল  বিশ্বাস করে যেতে হয়। এবং এই বিশ্বাস যখন পোক্ত হয়, তা ব্যক্তি এবং সম্প্রদায়ের উন্নতির ক্ষেত্রে  সাহায্য করতে পারে।

    গ্রিকরা যুক্তি ব্যবহার করে সত্যের সন্ধান করেছিল: সারা বিশ্বে একটি বিশ্বাস ধ্রুব হয়ে রয়েছে যে,  যে কোনও জায়গায় যে কোনও সময় যে কোনও বিষয় সম্পর্কে তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে একই ফলাফল পাওয়া যায়। এই ছিল আদর্শ, যুক্তি, যৌক্তিকতার ভিত্তি। এ থেকেই বিজ্ঞান ও গণিতের জন্ম হয়েছে। এই তিনের ভিত্তিই দিশা দেখিয়েছে, কীভাবে মানুষ ‘প্রকৃতপক্ষে’ জন্মগ্রহণ করে এবং কীভাবে সূর্য ‘আসলে’ উদিত হয়। এটি মানুষকে চাঁদে নিয়ে গেছে। কিন্তু পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব কারণ কী— এ বিষয়ে ভিত্তিগুলির কোনও একটিও সদুত্তর দিতে সক্ষম হয়নি। 

    বিজ্ঞান আমাদের বলে ‘কীভাবে’ নয় ‘কেন’। ব্যাখ্যা কখনো সমাধান হতে পারে না। কিন্তু ব্যক্তি-মানুষের সমাধান প্রয়োজন। সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সমাধান প্রয়োজন। জীবন নামক সমস্যার সমাধান। একটি সমাধান যা অর্থ এবং উদ্দেশ্য দেয়, সঙ্কট মোকাবেলার সরঞ্জাম, উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ন্যায্যতা দেয় এবং সম্প্রদায় তৈরি করে। একটি নির্মিত বাস্তবের সমস্ত অন্তর্নিহিত সীমাবদ্ধতা সহ  তাকে বিশ্বাস করা, একটি রেফারেন্সের ফ্রেমকে আঁকড়ে ধরা ছাড়া মানুষের কাছে আর কোন বিকল্প নেই। সুতরাং মিথ থেকেও রেহাই নেই।

    সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি সাধারণ বোঝাপড়া, একটি সাধারণ ফ্রেম অব রেফারেন্স, একটি সাধারণ পৌরাণিক কাহিনী – একটি অভিন্ন নাগরিক বিধি খুঁজে বের করার জন্য মানবজাতি অক্লান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। এটি সম্ভব নাও হতে পারে কারণ এর অর্থ হবে সমস্ত মানবতাকে একই জানালা দিয়ে জীবনকে দেখার প্রয়াস, এবং ভিন্নতাকে বর্জন করা। যা একটি অযৌক্তিক ব্যাপার।

    মিথ অবশ্য বাস্তব নয়। ভাগ্য, স্বাধীন ইচ্ছা বা ঈশ্বরের ধারণা অনুভব করার জন্য গল্প, প্রতীক এবং আচার-অনুষ্ঠান প্রয়োজন – যা শোনা, দেখা এবং একে অপরের মধ্যে দিযে সঞ্চারিত হয়, এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে প্রবাহিত হয়। গল্প, প্রতীক এবং আচার-অনুষ্ঠানের মূল অংশ, যা পুরাণ হিসেবে  মানুষের কাছে পৌঁছে দেয় তাকে পৌরাণিক কাহিনী বলে। সমস্ত সংস্কৃতি – হিন্দু, খ্রিস্টান, গ্রিক বা আমেরিকান – একটি পৌরাণিক কাহিনীর মাধ্যমে প্রচারিত একটি মিথ দ্বারা পরিচালিত হয়।

    সংস্কৃতির পৌরাণিক কাহিনী এবং পৌরাণিক কাহিনীগুলিকে যখন একে অপরের সাথে তুলনা করা হয়, তখন মিল এবং অমিল থাকতে বাধ্য। সাদৃশ্যগুলি একটি সংস্কৃতির মানবিক গুণকে  প্রতিফলিত করে, ভিন্নতা তার স্বতন্ত্রতাকে প্রতিফলিত করে। হিন্দু এবং বৌদ্ধরা একই রকম যে তারা উভয়েই পুনর্জন্মের চাকায় বিশ্বাস করে কিন্তু তারা ভিন্ন যে শুধুমাত্র হিন্দুরা চিরন্তন অপরিবর্তনীয় আত্মার ধারণায় বিশ্বাস করে। হিন্দু এবং মুসলমানরা একই রকম যে তারা উভয়েই ঈশ্বরকে সর্বশক্তিমান হিসাবে গ্রহণ করে, কিন্তু তারা ভিন্ন যে মুসলমানরা এক জীবন এবং ঈশ্বরের কাছে পৌঁছানোর এক উপায়ে বিশ্বাস করে, নবী মুহাম্মদের কাছে প্রকাশিত পথ অনুসরণ করে।

    সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি সাধারণ বোঝাপড়া, একটি সাধারণ ফ্রেম অব রেফারেন্স, একটি সাধারণ পৌরাণিক কাহিনী – একটি অভিন্ন নাগরিক বিধি খুঁজে বের করার জন্য মানবজাতি অক্লান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। এটি সম্ভব নাও হতে পারে কারণ এর অর্থ হবে সমস্ত মানবতাকে একই জানালা দিয়ে জীবনকে দেখার প্রয়াস, এবং ভিন্নতাকে বর্জন করা। যা একটি অযৌক্তিক ব্যাপার।

    মিথকে যুক্তিযুক্তভাবে উপস্থাপন করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য। সর্বদাই এমন প্রশ্ন থাকে যা ভাগ্য, স্বাধীন ইচ্ছা এবং ঈশ্বরের কর্মকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। সমস্ত সংস্কৃতিতে, তাই, মিথ বাস্তবতা এবং যৌক্তিকতা থেকে অনেক দূরে: তিনটি মাথা সহ দেবতা, আটটি বাহু বিশিষ্ট দানব, কুমারী জন্ম, সমুদ্রের দু-ভাগ হওয়া, প্রতিশ্রুত ভূমি, আগুনের পবিত্রতা এবং রক্তের চুক্তি। যুক্তির প্রতি এই উদাসীনতা নিশ্চিত করে যে মিথকে যুক্তিযুক্ত করা হয় না, তবে বিশ্বাসের আধারে নিঃশর্তভাবে গৃহীত হয়।

    বিশ্বাসীর জন্য, মিথ বাস্তব; এটা পবিত্র। এটি মিথকে প্রজন্ম এবং বিভিন্ন জায়গার সঙ্গে বিভিন্ন জাযগার  বিকৃতি ছাড়াই সংযোগ স্থাপনের অনুমতি দেয়। তবে,  মিথ স্থির নয়। এটি যেমন ইতিহাস এবং ভূগোলকে জানায়, তেমনি এটি ইতিহাস এবং ভূগোল দ্বারা অবহিত হয়। এই কারণেই সময়ের সাথে সাথে বিশ্বাস এবং প্রথার পরিবর্তন হয়। মিথ একবার বলেছিল মানুষ অসম। মিথ এখন বলছে সব মানুষ সমান।

    মানুষের জীবন যুক্তি দ্বারা পরিচালিত হয় না। আবেগ যা মানবতাকে চালিত করে — প্রেম, ঘৃণা, ভয়, লোভ, উচ্চাকাঙ্ক্ষা — এই সব অনুবীতিকে যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। মানুষ তাই বৈজ্ঞানিক, প্রমাণ-ভিত্তিক পদ্ধতির মাধ্যমে জীবনকে উপলব্ধি করতে পারে না। বেঁচে থাকার জন্য এবং বিচক্ষণতার জন্য, তাদের একটি রেফারেন্স ফ্রেমে বিশ্বাস করতে হবে। তাদের মিথ দরকার। আর মিথের দরকার পুরাণ।

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook