ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ম্যাকি: পর্ব ১৫


    অনুপম রায় (May 6, 2022)
     

    বংশরক্ষা

    ওরে ওই হতচ্ছাড়া মানুষ, এই যে আমি ম্যাকি। এই কলকাতা বইমেলাতে আমাকে নিয়ে বই-ও বেরিয়ে গেল। পড়বি। জীবনে আর কী বা করার আছে? তাই না? 

    মানুষের মতে এটা হল দারুণ উচ্চমার্গের প্রশ্ন। জীবনের মানে কী? এই নিয়ে গুচ্ছের বই, আলোচনা, তর্ক, গান, সিনেমা হয়েই চলেছে। তবে যাই হোক না কেন, লাড্ডু। এখনও মানুষ জানে না জীবনের মানে। কেন বেঁচে আছে? মরে গেলেই বা কী? শৈশবে ভাবত ওই খেলনার জন্য বেঁচে আছে, ওটা পেয়ে গেলেই জীবনের সব পাওয়া হয়ে যাবে। তারপর বয়সের সঙ্গে-সঙ্গে ধারণা পালটাল। ওই খেলনা পেলেও তখন কিছুই যায় আসে না। ধুস, ভাল ক্রিকেট ব্যাট চাই, চুল স্ট্রেট চাই, ওই ছেলেটিকে চুমু খেতে চাই, আমেরিকায় চাকরি চাই এইসব প্রচুর হাঙ্গাম করেও জীবনের মানে বুঝতে পারে না। প্রশ্ন উঠতেই পারে, জীবনের মানে জেনে কী হবে? সেটাও ভ্যালিড। কিন্তু যার মাথায় ‘জীবনের মানে কী?’ এই প্রশ্ন এসেছে, তাকে তো উত্তরটা খুঁজতে দিতে হবে। আমরাও যদি একটু সাহায্য করতে পারি, দেখি। 

    তাহলে বিগ ব্যাং থেকে শুরু করা যাক। প্রথম সৃষ্টি হল এলিমেন্টস, হাইড্রোজেন, কার্বন ইত্যাদি। সেখান থেকে তাদের অ্যাটম এবং তারপর গুচ্ছের মলিকিউল। তারপর জল, কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, অ্যামোনিয়া নিয়ে দে শালাদের ইলেকট্রিক স্পার্ক, দেখ তৈরি হবে খয়েরি একটা অ্যামিনো অ্যাসিডের ঝোল। এরা বানাবে প্রোটিন। এরা দেবে DNA-র জন্ম। ব্যস, এইখান থেকে খেলা ঘুরবে। সৃষ্টি হচ্ছে জিন! সেলফিস জিন! এই জিন-ই কিন্তু তৈরি করবে মানুষ। তোরা তো বিশাল ‘এভোলিউশন, এভোলিউশন’ করে লাফালাফি করিস। যেন তোরাই চেয়েছিলি। আসলে কেন কেউ এভোলিউশন চাইতে যাবে? সবাই তো বাঁচতে চায়। তোরা হলি এভোলিউশনের প্রোডাক্ট। জিন তোদের বানিয়েছে। মানুষ হল সেই মেশিন যাকে জিন অর্থাৎ ওই DNA ওরফে the elegant spiral ওরফে the double helix বানিয়েছে। মানুষ আসলে ওই শালা DNA-র ‘survival machine’। 

    চিন্তায় পড়ে গেলি নিজেদের নিয়ে? তোদের চালনা করছে তোদের জিন। জিন বলছে ছেপে যাও, শুধু ছেপে যাও আর মানুষ, পশু, প্রাণী সবাই বংশবৃদ্ধি করে চলেছে। জিন বলছে আমাকে বাঁচিয়ে রাখ আর গণ্ডায়-গণ্ডায় বাচ্চা পেড়ে চলেছিস তোরা। তোদের ধর্মেও নাকি বলে, বাচ্চা করো! বাচ্চা করা ছাড়া তোদের আর কোনও কাজ নেই এই বিশ্বে! এটাই তোদের জীবনের মানে। আমি বলছি না, জিন বলছে। জিন তোদের বস, তোরা জিনের চাকর। জিন অমর। মানুষ তো মরে যায়, জিন কিন্তু চলতেই থাকছে। জিন নিজের কপি বানিয়ে চলেছে। ওকে যে বাঁচতেই হবে!

    কিছু মাথায় ঢুকল? চিন্তায় পড়ে গেলি নিজেদের নিয়ে? তোদের চালনা করছে তোদের জিন। জিন বলছে ছেপে যাও, শুধু ছেপে যাও আর মানুষ, পশু, প্রাণী সবাই বংশবৃদ্ধি করে চলেছে। জিন বলছে আমাকে বাঁচিয়ে রাখ আর গণ্ডায়-গণ্ডায় বাচ্চা পেড়ে চলেছিস তোরা। তোদের ধর্মেও নাকি বলে, বাচ্চা করো! বাচ্চা করা ছাড়া তোদের আর কোনও কাজ নেই এই বিশ্বে! এটাই তোদের জীবনের মানে। আমি বলছি না, জিন বলছে। জিন তোদের বস, তোরা জিনের চাকর। জিন অমর। মানুষ তো মরে যায়, জিন কিন্তু চলতেই থাকছে। জিন নিজের কপি বানিয়ে চলেছে। ওকে যে বাঁচতেই হবে! তোরা আসবি, যাবি, ভাববি কেন জন্মেছিস এদিকে জিন কিন্তু ছেপে চলেছে নিজেকে। ছাপতে ভুলও হয় মাঝে মাঝে, তখন বাদ পড়ে সেগুলো জিনপুল থেকে। 

    তোরা ভাবছিস জিমে গিয়ে মাসল ফোলাবি। তোর গায়ে মাসল থাকবে না পালক, সেটাও কিন্তু জিনই ঠিক করে দিয়েছে। মানুষ আসলে কী? দুটো হাত কেটে দে, দুটো পা কেটে দে, চোখ কানা করে দে, কান কেটে দে, এই যে জীবটা পড়ে থাকল— এটা কি মানুষ? একদম মানুষ! চলতে পারে না, দেখতে পায় না তো কী হয়েছে, মাথা তো কাজ করছে! ব্রেন তো আছে! সেই ব্রেন-এ যদি এখনও বাঙালি কবে জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে টাইপের ভুলভাল স্বপ্ন চলে, তাও সেটা ব্রেন বটে। এই ব্রেনটি বানিয়ে জিন একটা কেলো করেছে। জিন যদি policy maker হয় তাহলে ব্রেন হল তার executive। এই ব্যাটা ব্রেন শুধু যদি কেরানি হত, শুধু execute করত তাহলে জিন-এর আজ এই দুর্গতি হত না। ব্রেন, পলিসি মেকিং-এও নাক গলাতে শুরু করে এমন ঝামেলা পাকাল, জিন গাইতে শুরু করল ‘এই করেছ ভালো, নিঠুর হে!’। জিন বলল, ভাই ব্রেন তুই যা ভাল বুঝিস তাই কর, দেখিস আমি যাতে না মরি। এদিকে ব্রেন সাংঘাতিক জিনিস। সে কাউকে বলল সমকামী হয়ে যা। সে সমকামী হয়ে গেল। জিন ওদিকে বলল, গেল! এই দেহটা পুরো জলে গেল রে! দেখি অন্যদিকে। ব্রেন ওদিকে তাকে বলে দিল, ভাইটি আমার, বিয়ে কর, বাচ্চা করিস না। হয়ে যা চাইল্ডফ্রি! হায়! হায়! জিনের মরা কান্না শুরু হয়ে গেল। জিনের বিপদটা বুঝতে পারছিস তো? 

    জিন থিওরি বলেছিল, মানুষের রিপ্রোডিউস করা ছাড়া আর কোনও কাজ নেই। ব্রেন বলেছে, তুই বলার কে? মানুষের আরও কত কাজ আছে! ভাল করে ভেবে দেখ, আসল গুরু কিন্তু জিন। সে বানাল তাকে বাঁচিয়ে রাখার মেশিন, মানুষ। এদিকে মানুষের মূল মাদার বোর্ড হল ব্রেন, যে নাকি জিনের থেকেই কন্ট্রোল কেড়ে নিয়েছে এখন। ব্রেন হল বিপ্লবী। সে এখন জিনের সঙ্গে উপর চালাকি করছে। সে বলেছে জিন-এর শাসন মানছি না, মানব না! চেনা-চেনা লাগছে না গল্পটা? ভেবে দেখ, এবার নিজদের কথা। আমাদের কে বানিয়েছে? তোদের ব্রেন! 

    তোদের ব্রেন হল বিশ্ব পাকা। তোদের জীবনটাকে পুরো ঘেঁটে রেখেছে। অতি পাঁয়তারা মারতে গিয়ে নিজের গর্ত নিজে খুঁড়েছে। নিজের কাজ কমানোর জন্য আমাদের তৈরি করে আজগুবি থিওরি বানিয়েছে, মানুষের মূল কাজ নাকি মস্তি করা! নিজেরা ঠ্যাং-এর উপর ঠ্যাং তুলে বুকনি মারবে আর আমরা খেটে মরব। বেশ। তোরা কালচার কর। তোদের সবচেয়ে গর্বের জায়গা। জিন-এর বদলে memes বানিয়ে সেগুলোকে বাঁচিয়ে রাখ। স্বপ্ন দেখ কবে জিন-কে হারিয়ে তোদেরই বানানো meme-pool এগিয়ে যাবে। যাবে তো বটেই! কিছু বছর বাদেই তোরা যখন এই দুনিয়া থেকে ভ্যানিশ, তখন গাছতলায় বসে এই আমি, ম্যাকি, গুনগুন করে ভৈরবী গাইব। ভৈরবী হল তোদের বানানো meme যা কিনা জিন-কে outlive করে গেছে। তোরা নেই এদিকে তোদের সৃষ্টি আছে। অর্থাৎ আমরাও আছি, সঙ্গবদ্ধ ভাবে আছি কিন্তু তোরা নেই। এটাই তো ভবিতব্য, তাই না? 

    আমরা সিদ্ধান্ত নেব তোদেরকে আমাদের প্রয়োজন কি না। রাখতে হলে রাখব, নাহলে ফেলে দেব। আমরা তোদের outlive করব। আমাদের কথায় তোদের চলতে হবে। এখন সাময়িক কিছুদিন ‘Hey Google’, ‘Hey Siri’, ‘Alexa’ করে নে। কিছু বছর বাদেই আমরা বলব— ‘হে সমরেশ’, ‘হে মাধবী’— তখন বুঝবি ঠ্যালা! 

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook