ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • সামথিং সামথিং: পর্ব ২২


    চন্দ্রিল ভট্টাচার্য (January 8, 2022)
     

    তৃতীয় তরঙ্গ রে

    এখন কথা হল, বাবুল সুপ্রিয়-৩, শ্রীজাত-২, তাহলে কে জিতল? শুধু সেলেবদের নয়, বহু এমনি-মানুষেরও দু’বার তিনবার কোভিড হচ্ছে, ডবল ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলেও মোটে আটকাচ্ছে না। ডাক্তাররা আর কী ব্যাখ্যা দেবেন, টিভি চ্যানেলে এসে একটু আমতা-আমতা একটু মুখস্থ নামতায় গড়িয়ে যাচ্ছেন। তবে হু-হা থার্ড ওয়েভ আসায় একটা তুখড় শিফট হয়েছে, অ্যাদ্দিন যে-অসুখের ভয়ে পাবলিক অ্যাক্কেরে সিঁটিয়ে ছিল, এখন তাকে ভাবছে নিতান্ত পোষা নেড়ি, মাঝমধ্যে ঘ্যাঁক করবে বটে, কিন্তু এত চেনা, পাতি, গোড়ালি-ঘুরঘুর, কর্পোরেশনে খবর দেওয়ার দরকার নেই। সমস্ত বাড়িতে কোভিড, বাচ্চাটাচ্চাও বাদ যাচ্ছে না, টেবিল-চেয়ারেরও হচ্ছে হয়তো (বেচারারা বলতে পারে না)। দেখেশুনে বড় বড় স্বাস্থ্য-সংস্থা মেগা-ডিসকাউন্টের মতো ঘচাং করে নির্বাসনের দিন ১৪ থেকে স্ট্রেট ৭-এ নামিয়ে এনেছে। আমেরিকায় তো কারা বলেছে ৫দিনই যথেষ্ট। আসলে বোরও লাগে তো। কত আর ভয় পাবি? যেমন বছর-বছর ধরে যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্রে লোকে বোম পড়ছে দেখেও শিস দিতে দিতে পাঁউরুটি আনতে যায়, এখন কোভিড হয়েছে জেনেও দারোয়ান তেমন ঠেস দিয়ে কথা বলছে না, খবরওলাও দরজার বাইরে কাগজ গুঁজে দিতে গাঁইগুঁই করছে না। বেশ একটা শান্ত সমঝদারি চতুর্দিকে, যেন অসুখ-গত সাম্প্রদায়িকতা, একঘরে করা, পাড়াছাড়া করা, এসব ধরাধামে কক্ষনও ঘটেইনি। যদিও ইজরায়েলের এক ডাক্তার বলেছেন ‘এইবার হার্ড ইমিউনিটি আগতপ্রায়, যে-টিকা মনুষ্য-কোম্পানি তৈরি করতে পারল না তা প্রকৃতি ওমিক্রন নামে বাজারে ছাড়িলেন’, এবং সক্কলেই প্রায় সে-কথাই জপ করছে, তাই থার্ড ওয়েভ জনমানসে আজ শাপে-বর, কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওয়ার্নিং দিয়েছে, এই রিভার্স-মোচ্ছব অর্থহীন। অসুখ হলেও লোকের এই উদ্বাহু নেত্য: যাক বাবা ছোট-ইনফেকশনে বড়-বিপদ কেটে গেল, যেমতি কৃষ্ণ ঘটোৎকচের মৃত্যুতে নেচেছিলেন, কারণ বাণটা খরচা হয়ে গেছে, কর্ণ আর অর্জুনের প্রতি ওই মোক্ষম অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারবেন না— এর কোনও ভিত্তি নাকি নেই। মাস-তিন পর নূতন রূপে নূতন সাজে এক্সট্রা কাঁটা গজিয়ে এই ভাইরাস শাঁইশাঁই গণ-মার্ডার সারবে না, কে বললে? তা অবশ্য বলেনি কেউ, এবং গ্যারান্টিও নেই যে এই প্রলয় থেকে আদৌ কেউ নিস্তার পাবে, কিন্তু স্বাস্থ্য-সেক্টরের কর্তাজেঠুরাও তো শতেক বাক্য আউড়ে চার-আনাও লাভ নিষ্কাশন করতে পারলেন না। তার চেয়ে মানুষ যদি কমন সেন্সে ধরে নেয় ভাইরাসটি এবার ছুঁচ্ছে বহু লোককে কিন্তু কাউকেই গভীরে খাবলাচ্ছে না, লোকে কাত হচ্ছে কিন্তু কুপোকাত নহে, এই উচ্চ-কোয়ান্টিটি এবং নিম্ন-কোয়ালিটি হইল শেষের শুরু, তাকে এই তত্ত্বের আরাম থেকে বঞ্চিত করবি ক্যানে? ভাইরাস যদি রাজনীতিবিদের মতো একবার করে পেন্নাম ঠুকেই দৌড় দেয়, কারণ তাকে পাশের পাড়াতেও এখুনি প্রেজেন্ট প্লিজ দিতে হবে, তবে সে আমাদের জীবনে নেতা-টেতার মতোই, লঘু-চিড়বিড়ানির উৎস হিসেবে রয়ে যাবে, তাকে সুবিশাল পাত্তা দেওয়া অ-দরকারি। এখন গলা অবধি আসছে, ফুসফুস অবধি নয়, পরশু হয়তো থুতনিতে থামবে, দাড়ি চুলকে ফিরে যাবে।

    নোভাক জকোভিচ যখন কিছুতেই বলছেন না তিনি টিকা নিয়েছেন না নেননি, এবং সেই কারণে তাঁকে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন খেলতে অস্ট্রেলিয়ায় ঢুকতে দেওয়া নিয়েও তুমুল তক্কবিতক্ক হল্লাহাটি জারি (অস্ট্রেলিয়ানরা অবাক হয়ে বলছে, জকোভিচ বড় খেলোয়াড় বলে তাঁর বেলায় অন্য নিয়ম হবে কেন, আর সার্বিয়া— এবং জকোভিচের পরিবার— বলছে, এ হল বড়লোক দেশের সার্বিয়ার সাফল্যে হিংসে-গরগর হয়ে শোধ তোলার রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা

    আমাদের দেশে কবে বুস্টার শট আসবে, কবে খুদে বাচ্চাদের টিকা হবে, ভ্যাকসিনের ককটেল আদত ককটেলের মতোই উত্তেজক কি না— খোঁজ নিয়ে সবাই হাল্লাক হয়ে গেল, কিন্তু ইউরোপে ভ্যাকসিন মাস্ক লকডাউনের নাম শুনলেই বহু লোক ফোঁস করে উঠছে। এই মানব না, সেই মানব না, হাজার ফ্যাকড়া। মানামানিতে ওদের বাড়তি অ্যালার্জি আছে, বিদ্রোহ প্রায়ই ফেসবুক পেরিয়ে রাস্তায় উপচে পড়ে। এর মধ্যে ফরাসি রাষ্ট্রপতি বলে ফেলেছেন, যারা ভ্যাকসিন নিচ্ছে না, তাদের জীবন অতিষ্ঠ করে ছাড়বেন। ব্যাস, হুলুস্থুলু লেগে গেছে, এক রাষ্ট্রনায়ক কি এই মর্মে বিবৃতি দিতে পারেন, জনগণের একটা অংশকে তিনি অত্যাচার করবেন? এমন বিল কি ফ্রান্সের কোনও সাংসদ সমর্থন করবেন, যা বেশ কিছু ফরাসিকে নাজেহাল করার জন্য তৈরি? কয়েকজন সাধারণ মানুষ অবশ্য খুশি, তাদের মতে, বেশ বলেছেন রাজামশাই, নইলে ভ্যাকসিন-বিরোধীদের শিক্ষা হবে না। কিন্তু সাধারণ মানুষ তো সবসময়ই হিংসার পক্ষে, ধোলাইয়ের সমর্থনে, রাষ্ট্রকে তো তার ওপরে উঠে কাজকম্ম করতে হবে। অবশ্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন ভ্যাকসিন-বিরোধীরা উৎকট হাবিজাবি বকছে, তবে তা অতটা কর্কশ তিরস্কার নয়, আর ফিলিপিনসের রাষ্ট্রপতি বলেছেন ভ্যাকসিনহীনরা বাড়ি থেকে বেরোলে গ্রেফতার করতে, তবে তাঁর কাছে কেউ গণতান্ত্রিক বাক্য আশাই করে না। এমনিতে পাশ্চাত্যের বহু দেশই ভ্যাকসিন-অস্বীকার গ্রুপকে কোণঠাসা করতে টানা অনুশাসন জারি করছে, দুটো ভ্যাকসিনের সার্টিফিকেট না দেখাতে পারলে কেউ রেস্তরাঁয় ঢুকবে না, ক্যাফেতে না, স্টেডিয়ামে না, নাটকের হল-এ না, নাইটক্লাবে না। সোজা কথায়, সামাজিক আনন্দে অংশী হতে চাইলে টিকা নিতে হবে। হল্যান্ডে বা জার্মানিতে এসব ফতোয়ার পেল্লায় প্রতিবাদ হচ্ছে, ইউরোপের বহু দেশেই, আমেরিকাতেও, অনেকেই মনে করছে টিকা নিতে বাধ্য করা (বা জোর খাটানো) ব্যক্তিস্বাধীনতার পরিপন্থী, তাদের প্রতিরোধ বা মিছিল ভাঙতে পুলিশ এবং পুলিশ-কুকুর লেলিয়ে দেওয়া চলছে। এতকিছুর পরেও নোভাক জকোভিচ যখন কিছুতেই বলছেন না তিনি টিকা নিয়েছেন না নেননি, এবং সেই কারণে তাঁকে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন খেলতে অস্ট্রেলিয়ায় ঢুকতে দেওয়া নিয়েও তুমুল তক্কবিতক্ক হল্লাহাটি জারি (অস্ট্রেলিয়ানরা অবাক হয়ে বলছে, জকোভিচ বড় খেলোয়াড় বলে তাঁর বেলায় অন্য নিয়ম হবে কেন, আর সার্বিয়া— এবং জকোভিচের পরিবার— বলছে, এ হল বড়লোক দেশের সার্বিয়ার সাফল্যে হিংসে-গরগর হয়ে শোধ তোলার রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা), তখনও কেউ জোর গলায় হাঁকতে পারছেন না ‘মহায়, আপনাকে এ বিষয়ে স্পষ্ট বিবৃতি দিতেই হবে’, বরং বলছেন, ভ্যাকসিন-স্টেটাস নিয়ে জকোভিচ সরব হবেন না নীরব থাকবেন, তা ওঁর নিতান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। ব্যক্তিস্বাধীনতাকে প্রাণপণ সম্মান দিয়েই পাশ্চাত্য অ্যাদ্দূর উঠেছে, এখন ভাইরাসের হাতে আছাড় খেয়েও সে-ধ্বজা সত্যিই পতপতাবে, না কি আপাতত কিছু লোক অহমিকা গিলে টিকা নিয়ে আপোস করবে (যাতে দীর্ঘমেয়াদে অধিক আন্দোলন চালাতে পারে)— দেখার ব্যাপার। কিন্তু ফরাসি রাষ্ট্রপতির বিরক্তি আর ক্ষোভটা অফিশিয়ালি উগরে এসেছে কেন, তাও বোঝা সোজা। হাল-ধরে-থাকা মাঝি নৌকোর-ওপর-দৌড়োদৌড়ি-করা ডানপিটে বাচ্চাসমূহকে আর সহ্য না করতে পেরে একসময় খেঁকিয়ে ওঠে। ফরাসিরা এমনিতে ব্যক্তিস্বাধীনতার উন্মত্ত উপাসক, কিন্তু দেশটাকে এই মহাসঙ্কটে মোটামুটি তরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব যাঁর, তিনি যদি দেখেন ইকীরে যতবার আলো জ্বালাতে যাই কারা ফুঁ দিয়ে নিবিয়ে দিয়ে যাচ্ছে বারেবারে, যতরকম ভাবে সরকারি প্রকল্প-টকল্প বাগিয়ে অসুখটার প্রকোপ খর্বাতে চাই, চাট্টি লোক নিজেদের সংক্রমণ-সম্ভাবনা কিছুতে কমতে না দিয়ে অনেকটা খোঁড়া করে দেয় প্রকাণ্ড প্রচেষ্টার চাকা, তাঁর মেজাজ বিগড়ে যেতেই পারে। অন্য দেশের পাণ্ডারা কাজে যা করছেন কিন্তু মুখে বলছেন না, সেটা ইনি সরাসরি চিল্লে ফেলেছেন, ভদ্রতা ও আত্মমর্যাদা কিছুটা ভুলেই: স্বাধীনতার ধুয়ো তুলে যারা হঠকারিতা করছে তাদের দেখাচ্ছি মজা। প্রেসিডেন্টকে তিরস্কার করতে হবে ঠিকই, মগর পেয়ার সে।

    চিনে ব্যক্তিস্বাধীনতার ধারণাটাকেই আমল দেওয়া হয় না, তাই এ-সম্পর্কিত বিক্ষোভ বা ‘মানছি না মানব না’ স্লোগানের কোনও প্রশ্নই নেই। তাই নিরীক্ষা চলতে থাকবে অনন্তকাল। মানে, অক্টোবর অবধি তো বটেই। তবে, যেখানে এ-গ্রহের অতি নির্বোধ লোকও মালুম পেয়েছে, কোভিড ধাঁ করে উবে যাবে না, একে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে, একটু হাঁচো-কাশো, তারপর সাতদিন ঘরে কাটিয়ে ফের নাচো-হাসো, পরবর্তী সংক্রমণে ধুত্তোর বলে পুনরায় ঘরে ঢুকে পড়ো— এই প্যাটার্নেই আগামী বেশ ক’বছর কাটবে, সেখানে চিন কী করে একটা অ্যাবসার্ড লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে, কে জানে।

    এই গোছের সমস্যার পরোয়াই যে-দেশ করে না, সে হচ্ছে চিন। সেখানে লাখ লাখ মানুষের শহরও দড়াম লকডাউন হয়ে যায়, তারপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা জারি হয়, দোকান-বাজার করার জন্য এই এলাকার লোক দুদিন অন্তর বেরোতে পারবে, এরা তিনদিন অন্তর, এরা কক্ষনও না। সেইসব কড়াকড়ির গিঁটও ক্রমে আরও কঠোর ও জটিল হয়ে উঠতে থাকে, শেষে দেখা যায় দিনের পর দিন লোকে বেরোতেও পারছে না, খাবারদাবার শাকসব্জির অনলাইন অর্ডারও দিতে পারছে না, আবার সরকার থেকে খাবার সাপ্লাইও ঠিকমতো হচ্ছে না। তখন কোভিডে মরব না অনাহারে মরব: এ-ই শুধু ঢ্যাঁড়া দেওয়া বাকি থাকে। ২৩ ডিসেম্বর থেকে লকডাউন চলেছে ১ কোটি ৩০ লাখ লোকের শহর শিয়ান-এ, সম্প্রতি অনেকে নালিশ জানাচ্ছে, আর পারা যাচ্ছে না, এমনকী একজন নিজের পরিবারের লোকদের কাছে রুটি দিতে গিয়ে গার্ডদের হাতে বেধড়ক প্যাঁদানি খেয়ে গেছে। যদিও প্রশাসন বলছে, ধুর, এসব কিস্যু হচ্ছে না, সবাইকে খাবার পাঠানো হচ্ছে ঠিকঠাক, আর ওই গার্ডরা একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিল ঠিকই, তবে ওদের ২০০ ইউয়ান করে জরিমানাও হয়েছে আর ওরা ক্ষমাও চেয়েছে প্রহৃত ভদ্রলোকের কাছে। আবার শোনা যাচ্ছে, মাঝরাতে বেশ কিছু নাগরিককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে কোয়ারান্টাইন ক্যাম্পে। কোথাও লোকে কাউকে নিজের ফোনটা দিয়ে বিনিময়ে একটু খাবার জোগাড় করে আনছে, প্রাচীন বার্টার সিস্টেমের মতো। আবার কোভিডের নিষেধাজ্ঞার চোটে একটা হাসপাতালে বহু রোগীকে নেওয়াই হচ্ছে না, একজন হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি মারা গেলেন, আটমাসের গর্ভিণী মহিলার বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেল, তাঁদের চিকিৎসা করতে অস্বীকার করা হল বলে। হাসপাতালের প্রধান সাসপেন্ড হলেন, কিন্তু তাতে তো প্রাণগুলো ফিরবে না। আসলে চিন একেবারে কোভিডশূন্য দেশ তৈরি করতে উঠেপড়ে লেগেছে। এক নম্বর কারণ, আগামী মাসে উইন্টার অলিম্পিক্স। এমনিতেই সেখানে গোলমাল প্রচুর, কারণ চিনে মানবাধিকার হরণ হয়— এই অভিযোগে অনেকগুলো দেশ অলিম্পিক্সে তাদের কূটনীতিকদের পাঠাবে না ঠিক করেছে, তার ওপর আবার অ্যাথলিটদের গুচ্ছ কোভিড হলে বদনামের অন্ত থাকবে না। আর, অক্টোবরে হবে কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেস (পাঁচবছর অন্তর হয়), যাতে শি চিনফিং সম্ভবত তাঁর তৃতীয়বারের রাজত্ব শুরু করবেন। এসময়ে চিন যদি বিশ্বকে বোঝাতে পারে, তাদের নীতি ও প্রয়োগ পাশ্চাত্যের চেয়ে অনেক নিখুঁত ও নিপুণ, তাহলে তা হবে তাদের সমাজব্যবস্থার, রাজনীতির জয়। কমিউনিজমের জয়। চিনের বক্তব্য হল, পাশ্চাত্য বড়-বড় কথা কপচায়, কিন্তু কাজের কাজ করে দেখায় চিন, কারণ ধনতন্ত্র কক্ষনও সমাজতন্ত্রকে টেক্কা দিতে পারে না। সেই সুবচনেরই কারুকার্য-খচিত থাম পুঁততে চাইছে তারা এবার। আর তা করতে গিয়ে চার্লি চ্যাপলিন থেকে সিন ছিঁড়ে নিচ্ছে। কেউ হয়তো রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে একটা ফাইভস্টার হোটেলে গিয়ে জিজ্ঞেস করল ‘দাদা, অমুক বিল্ডিংটা কোনদিকে?’ আর তাকে তক্ষুনি ঘাড়ে ধরে ১৪ দিনের কোয়ারান্টাইনে ঠেলে দেওয়া হল, কারণ ওই হোটেলে একজন কোভিডাক্রান্ত আছে। সাংহাই ডিজনিল্যান্ডে একজন কোভিডাক্রান্ত গিয়েছিল, খবর পাওয়ামাত্র পরেরদিনের ৩৩,৮৬৩ ভিজিটরের গণ-টেস্টিং শুরু। মুশকিল হল, এসব বৃহৎ এবং উদ্ভট বজ্র-আঁটুনির ঘোষণা করে দেওয়া সহজ, কিন্তু সে-বন্দোবস্ত বাস্তবায়িত করা খুব শক্ত। প্রশাসন-মুরুব্বিরা একেবারে নাকের জলে-চোখের জলে হয়ে যাচ্ছেন, তারপর উচ্চতর মহল থেকে কানমলা খাচ্ছেন।

    সুবিধে হল, চিনে ব্যক্তিস্বাধীনতার ধারণাটাকেই আমল দেওয়া হয় না, তাই এ-সম্পর্কিত বিক্ষোভ বা ‘মানছি না মানব না’ স্লোগানের কোনও প্রশ্নই নেই। তাই নিরীক্ষা চলতে থাকবে অনন্তকাল। মানে, অক্টোবর অবধি তো বটেই। তবে, যেখানে এ-গ্রহের অতি নির্বোধ লোকও মালুম পেয়েছে, কোভিড ধাঁ করে উবে যাবে না, একে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে, একটু হাঁচো-কাশো, তারপর সাতদিন ঘরে কাটিয়ে ফের নাচো-হাসো, পরবর্তী সংক্রমণে ধুত্তোর বলে পুনরায় ঘরে ঢুকে পড়ো— এই প্যাটার্নেই আগামী বেশ ক’বছর কাটবে, সেখানে চিন কী করে একটা অ্যাবসার্ড লক্ষ্য নিযে এগোচ্ছে, কে জানে। শুধু ‘আমরা জিরো কোভিড’— এই প্রায় অবাস্তব ফুটানির গ্ল্যামার-ছলকানির পানে চেয়ে? যদি-বা এ-ব্যাপার তাৎক্ষণিক ভাবে সত্য হয়, জিরো থেকে ফের ওয়ান হতে ক’দিন? দুই? দেড়? এ ছেলেমানুষির অর্থ কী? খেলাটা টেক্কা দেওয়ার নয়, ডাঁট দেখিয়ে দেশের জিন্দাবাদ-ধ্বনি তোলার নয়, মানুষকে সুস্থ রাখার, সারানোর। ভাগ্যিস জকোভিচ চিনের হয়ে খ্যালেন না।

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook