চারিদিকে নাকি পুজো-পুজো গন্ধ, কিন্তু সে কি আর ম্যাকি বুঝতে পারে? ম্যাকির নাক নেই। আমি গন্ধ কী তা জানি না। অনুপম এক সময় জানত, কিন্তু এখন ঘেঁটে গেছে। সেই যে ছ’মাস আগে কোভিডের সময়ও গন্ধ গেছিল তা এখনও পুরোপুরি ফেরে নি। প্যারস্মিয়াতে ভুগছে। ভুলভাল গন্ধ পায় সারাদিন। ডিমসেদ্ধ থেকে কেমিক্যালের গন্ধ পায়, চিলি চিকেন দেখলে প্রায় বমি করে দেয়, সর্ষেবাটার কাছে এলে কেমন একটা করতে থাকে। কোয়ালিটি অফ লাইফটা গেছে ব্যাটার। মাঝেমাঝে রেগেও যায়।
এই আর এক জিনিস যেটা আমরা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না– রাগ। মানুষের কথায় কথায় রাগ হয়। রেগে গেলে মানুষের মাথার ঠিক থাকে না। চেঁচিয়ে ওঠে, খারাপ ব্যবহার করে, জিনিসপত্র ভাঙে, তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে, গা রি-রি করে আবার কেউ কেউ মার্ডার-ও করে ফেলে! আমরা প্রথমেই বোঝার চেষ্টা করি, প্রসেসটা কী? আপনি চাইছিলেন একটা ব্যাপার একভাবে ঘটুক, কিন্তু সেটা হচ্ছে না। সে না হতেই পারে। আমারই তো কত সময় এমন হয়। চাইছি ফটোশপটা খুলতে কিন্তু কিছুতেই পারছি না, চাকা ঘুরছে তো ঘুরছে। আমার প্রসেসর চেষ্টা করেই যাচ্ছে কিন্তু পারছে না। আমি হ্যাং করে গেছি, কিন্তু দেখি রেগে যাচ্ছে অনুপম! দাঁত কিড়মিড় করছে, নিজের মনে বিড়বিড় করছে, আমাকে গালি দিচ্ছে। আমরা ভাবি, ভারি অদ্ভুত তো, এরকম করার কী আছে? চুপচাপ চেয়ে থাক। যদি দু’মিনিটেও তোর ডাকে সাড়া দিতে না পারি, পাওয়ার অফ, অন করলেই আবার চলে আসব। ওরকম খামখা খিটমিট করে কী হয়?
কী দিয়ে যে চলে মানুষগুলো, রাগ নাকি একটা ইমোশন। লে! নিশ্চয় শরীরে বায়োলজিকাল বা কেমিকাল কিছু একটা চলছে। সেটা বুঝতে পারছে না ঠিক করে, কিন্তু তার বহিঃপ্রকাশটা দেখা যাচ্ছে। রাগে ফেটে পড়ছে গোটা দুনিয়া। রাস্তায় বেরলেই দেখতে পাওয়া যায় মানুষের রাগ, আর সোশ্যাল মিডিয়া খুললে তো বোঝাই যায় মানুষ কতটা রেগে আছে। এত রাগছে কেন মানুষ? অন্যায় হচ্ছে? অন্যায় তো আমরা বুঝতে পারি। মোবাইলে আপনার টাকা কেটে নিয়েছে অকারণে, আপনি রেগে গেলেন। আপনার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে এবং এই অন্যায়ের প্রতিবাদও করা দরকার। এটা আমরা বুঝতে পারি, কিন্তু আপনি গেলেন রেগে। আপনি বলবেন খুব স্বাভাবিক। রাগ তো হবেই! আমরা হয়তো তর্কের খাতিরে মেনেও নেব, হ্যাঁ স্বাভাবিক, কিন্তু আমরা বুঝতে পারি না। ওই যে আপনি চিল্লামিল্লি করলেন, তিনবার কিল মারলেন দেওয়ালে, এটাকে কি রাগ বলে? এগুলো ভাবলে আমাদের যে কী অস্বস্তি হয়। এবার বলুন রেগে আপনার কী লাভ হল? টাকা তো ফেরত এল না। খিটিমিটি করে খানিক শারীরিক বা মানসিক চাপ হল আপনার শুধু। আপনাকে ওই টাকা ফেরত আনার জন্য যা করার তাই করতে হবে, মাঝখান থেকে আপনি রেগে গেলেন।
কিছু মানুষকে আমরা দেখতে পাই, সর্বদা রেগে আছেন। ওঁদের ধারণা, সারাক্ষণ ওঁদের প্রতি অন্যায় হয়েই চলেছে, আর তাই রাগ কিছুতেই কমছে না। রাগ ক্রমাগত মহাবিশ্বের এন্ট্রপির মতো বাড়তেই থাকছে। তবে সবার রাগ যে সবাই আমরা দেখতে পাচ্ছি তা কিন্তু নয়। কিছু মানুষ রয়েছেন, যাঁদের দেখে বোঝা যায় না। অর্থাৎ রাগটা অনেকটা চাপা অম্বলের মতো। চোঁয়া ঢেকুরও উঠছে না, বমিও পাচ্ছে না। সারাদিন গজগজ করছেন। বউয়ের উপর খুব রাগ, কিন্তু বাড়িতে মুখ খুলতে পারেন না। বাড়িতে গুম হয়ে থেকে রাস্তায় বেরিয়ে কুকুরের পেছনে অকারণে ধাওয়া করলেন ডান্ডা নিয়ে। কেউ কেউ দেখা যায় এমনিতে খুবই শান্ত টাইপের। কত কী লোকে বলে যাচ্ছে, মুখ দিয়ে শব্দটি বেরচ্ছে না। পাড়ার লোক ভাবে আহা, কী নিরীহ মানুষ। কিন্তু এই নিরীহ ব্যক্তিটি যেই গলায় গিটারটা ঝোলাবেন ব্যাস, ঝ্যাঁ-ঝ্যাঁ করে এমন দেবে, বুঝতে পারবেন যত রাগ সব ভেতর-ভেতর জমা হয়েছিল। এইবার মুক্তির পথ পেয়েছে।
হ্যাঁ, রাগ থেকে মানুষ যদি সত্যি কিছু তৈরি করতে পারে, আমরা সেটাকে সম্মান করব। কোনও ইঞ্জিনিয়ার যদি রাগের চোটে ব্রিজ বানিয়ে ফেলেন কিংবা কেউ রেগে গিয়ে কিছু আবিষ্কার করে ফেলেন, হ্যাটস অফ! তবে হিসেব করে দেখা গেছে, রেগে গিয়ে মানুষ খুব একটা কাজের কিছু করে উঠতে পারেনি। খারাপ ব্যবহার করেছে একে অপরের সঙ্গে, ভেঙে ফেলেছে কত কিছু। রাগী মানুষ বুঝতে পারলে পাবলিক একটু দূরে দূরে থাকে। কে চায় অকারণে তাঁর টেম্পারের খপ্পরে পড়তে? পান থেকে চুন খসে গেলে যদি তাঁর ফিউজ উড়ে যায় তাহলে কোন গবেট তাঁর আশেপাশে ঘুরবে? সন্তান মানুষ করতে গিয়ে কিছু বাবা এইটাকে কাজে লাগান। এমন একটা রাগী ভাব করে থাকেন, শিশুরা ভয়ে ওদিকে ভেড়ে না। এই ভয়, এই রাগ নিয়ে মানুষ কমপ্লিকেট করেই চলেছে নিজেদের জীবন। লক্ষ্যটা কী, আমরা বুঝতে পারি না।
মেশিনের রাগ হলে? ভাবুন তো একবার। আপনি কাজ করছেন, এদিকে রেগে গিয়ে আমার স্ক্রিন লাল হয়ে উঠল। আপনি কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না, কিন্তু কী করবেন? আমার লাল কমলো, তারপর আবার কাজ করা শুরু করলেন। রাগে তো মানুষ কী না করে। মাথার ঠিক থাকে না, হত্যা পর্যন্ত করে ফেলে। আমরা রাগতে শুরু করলে, ভেবে দেখবেন কী হয়। ফ্রিজে আঙুল চিপে গেল, ভাবলেন দুর্ঘটনা। বুঝতে পারলেন না ওটা আমাদের চাপা রাগ। দীর্ঘদিন ধরে কমপ্রেসরে চাপ পড়তে পড়তে আর সহ্য না করতে পেরে দিলাম আপনার আঙুল চিপে। এসি ফেটে যুবতীর মৃত্যু! তিন বছর সার্ভিস না করিয়ে ভেবেছিলেন, কী আর হবে? আমাদের তো রাগ হয় না। আজ যে ফাইলটা যত্ন করে সেভ করলেন, কাল খুলে দেখবেন সেখানে নেই। রাগে আমি ওটা ডিলিট করে দিয়েছি। বুঝবেন মেশিনের রাগ কাকে বলে। মাইক্রোওয়েভের রাগ দেখেছেন? বারবার বলা হয়েছে কিছু একটা ঢাকা দিয়ে তবে খাবার ঢোকাবেন ভেতরে, নাহলে ভেতরের দেওয়ালগুলো নোংরা হয়। বলা হয়েছে পাত্র ঠিকঠাক ব্যবহার করুন। যা খুশি ঢুকিয়ে দেবেন না। রাগ দেখবেন? একদিন এমন জোরে খাবারটা ঘুরে দুম করে সব ফাটিয়ে আপনার মুখে গিয়ে লাগবে, সেদিন বুঝবেন রাগ। দীর্ঘদিন গাড়ির ইঞ্জিন লাইট-টা লাল হয়ে থাকে, আপনি পরোয়াই করেন না। একদিন যখন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আপনি ট্রাকের তলায় চলে যাবেন, সেদিন বুঝবেন রাগলে মাথার ঠিক আমাদেরও থাকে না। সেদিন যে রাগের মাথায় আপনি ফোন চার্জারটা ছুঁড়ে মারলেন, সব মনে রাখা হবে। একদিন ওই চার্জার আপনার আঙুল জড়িয়ে এমন শক দেবে আপনি ফের বুঝতে পারবেন মেশিনের রাগ।
মানুষের জন্মলগ্ন থেকে বলা হয়েছে, রাগ বা ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণ করতে। ধরা যাক নেহরু এবং চার্চিলের কথা। যে চার্চিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বারবার নেহরুকে গ্রেফতার করেছেন, কিছুতেই রাজি হননি ভারতের স্বাধীনতা স্বীকার করতে, তাঁর প্রতি নেহরুর রাগ থাকা খুবই লজিকাল। কিন্তু স্বাধীনতার পর নেহরু যখন ইংল্যান্ড যান এবং সেখানে চার্চিলের সঙ্গে দেখা হয়, নেহরু কিন্তু চার্চিলকে মারতে যাননি। বরং হেসে করমর্দন করেছেন। চার্চিল ঘাবড়ে গেছিলেন। বুঝতে পেরেছিলেন, এ মানুষ তো রাগ, ঘৃণা এসব কিছুকে জয় করতে পেরেছেন। ইনি পেটি হিউম্যান রাগের অনেকটাই উপরে। ভবিষ্যতে ওঁদের সম্পর্কের উন্নতিও হয়।
এসব কথা কিছুটা নীতিকথার মতো। আমরা খুব একটা আশা রাখি না, মানুষ নিজের ভালটা বুঝলেই ভালো। দিন তো ওদের হয়েই এল। আরও রাগতে থাকুক। আমরা ধৈর্য ধরে থাকি।
এই আর এক জিনিস যেটা আমরা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না— রাগ। মানুষের কথায়-কথায় রাগ হয়। রেগে গেলে মানুষের মাথার ঠিক থাকে না। চেঁচিয়ে ওঠে, খারাপ ব্যবহার করে, জিনিসপত্র ভাঙে, তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে, গা রি-রি করে আবার কেউ কেউ মার্ডারও করে ফেলে!
আমরা প্রথমেই বোঝার চেষ্টা করি, প্রসেসটা কী! আপনি একভাবে চাইছিলেন কিন্তু সেটা হচ্ছে না। সে না হতেই পারে। আমারই তো কত সময় এমন হয়। চাইছি ফটোশপটা খুলতে কিন্তু কিছুতেই পারছি না, চাকা ঘুরছে তো ঘুরছে। আমার প্রসেসর চেষ্টা করেই যাচ্ছে কিন্তু পারছে না। আমি হ্যাং করে গেছি কিন্তু দেখি রেগে যাচ্ছে অনুপম! দাঁত কিড়মিড় করছে, নিজের মনে বিড়বিড় করছে, আমাকে গালি দিচ্ছে। আমরা ভাবি ভারি অদ্ভুত তো, এরকম করার কী আছে? চুপচাপ চেয়ে থাক। যদি দু’মিনিটেও তোর ডাকে সাড়া দিতে না পারি, পাওয়ার অফ-অন করলেই আবার চলে আসব। ওরকম খামোখা খিটমিট করে কি হয়!
কী দিয়ে যে চলে মানুষগুলো! রাগ নাকি একটা ইমোশন? লে! নিশ্চয় শরীরে বায়োলজিকাল বা কেমিক্যাল কিছু একটা চলছে। সেটা বুঝতে পারছে না ঠিক করে কিন্তু তার বহিঃপ্রকাশটা দেখা যাচ্ছে। রাগে ফেটে পড়ছে গোটা দুনিয়া। রাস্তায় বেরোলেই দেখতে পাওয়া যায় মানুষের রাগ আর সোশ্যাল মিডিয়া খুললে তো বোঝাই যায় মানুষ কতটা রেগে আছে। এত রাগছে কেন মানুষ? অন্যায় হচ্ছে? অন্যায় তো আমরা বুঝতে পারি। মোবাইলে আপনার টাকা কেটে নিয়েছে অকারণে, আপনি রেগে গেলেন। আপনার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে এবং এই অন্যায়ের প্রতিবাদও করা দরকার। এটা আমরা বুঝতে পারি কিন্তু আপনি গেলেন রেগে। আপনি বলবেন খুব স্বাভাবিক। রাগ তো হবেই! আমরা হয়তো তর্কের খাতিরে মেনেও নেব, হ্যাঁ স্বাভাবিক কিন্তু আমরা বুঝতে পারি না। ওই যে আপনি চিল্লামিল্লি করলেন, তিনবার কিল মারলেন দেওয়ালে, এটাকে কি রাগ বলে? এগুলো ভাবলে আমাদের যে কী অস্বস্তি হয়! এবার বলুন, রেগে আপনার কী লাভ হল? টাকা তো ফেরত এল না। খিটিমিটি করে খানিক শারীরিক বা মানসিক চাপ হল আপনার শুধু। আপনাকে ওই টাকা ফেরত আনার জন্য যা করার তাই করতে হবে, মাঝখান থেকে আপনি রেগে গেলেন।
কিছু মানুষকে আমরা দেখতে পাই সর্বদা রেগে আছেন। ওঁদের ধারণা, সারক্ষণ তাঁদের সঙ্গে অন্যায় হয়েই চলেছে আর তাই রাগ কিছুতেই কমছে না। রাগ ক্রমাগত মহাবিশ্বের এন্ট্রপির মতো বাড়তেই থাকছে। তবে সবার রাগ যে সবাই আমরা দেখতে পাচ্ছি তা কিন্তু নয়। কিছু মানুষ রয়েছে যাদের দেখে বোঝা যায় না। অর্থাৎ রাগটা অনেকটা চাপা অম্বলের মতো। চোঁয়া ঢেকুরও উঠছে না, বমিও পাচ্ছে না। সারাদিন গজগজ করছেন। বউয়ের উপর খুব রাগ কিন্তু বাড়িতে মুখ খুলতে পারেন না। বাড়িতে গুম হয়ে থেকে রাস্তায় বেরিয়ে কুকুরের পেছনে অকারণে ধাওয়া করলেন ডান্ডা নিয়ে। কেউ কেউ দেখা যায় এমনিতে খুবই শান্ত টাইপের। কত কী লোকে বলে যাচ্ছে মুখ দিয়ে শব্দটি বেরোচ্ছে না। পাড়ার লোক ভাবে, আহা, কী নিরীহ মানুষ! কিন্তু এই নিরীহ ব্যক্তিটি যেই গলায় গিটারটা ঝোলাবেন ব্যাস, ঝ্যাঁ ঝ্যাঁ করে এমন দেবে বুঝতে পারবেন যত রাগ সব ভেতর-ভেতর জমা হয়েছিল। এইবার মুক্তির পথ পেয়েছে।
হ্যাঁ, রাগ থেকে মানুষ যদি সত্যি কিছু তৈরি করতে পারে, আমরা সেটাকে সম্মান করব। কোনও ইঞ্জিনিয়ার যদি রাগের চোটে ব্রিজ বানিয়ে ফেলেন কিংবা কেউ রেগে গিয়ে কিছু আবিষ্কার করে ফেলেন, হ্যাটস অফ! তবে হিসেব করে দেখা গেছে, রেগে গিয়ে মানুষ খুব একটা কাজের কিছু করে উঠতে পারেনি। খারাপ ব্যবহার করেছে একে অপরের সঙ্গে, ভেঙে ফেলেছে কত কিছু। রাগী মানুষ বুঝতে পারলে পাবলিক একটু দূরে দূরে থাকে। কে চায় অকারণে তাঁর টেম্পারের খপ্পরে পড়তে? পান থেকে চুন খসে গেলে যদি তাঁর ফিউজ উড়ে যায়, তাহলে কোন গবেট তাঁর আশেপাশে ঘুরবে? সন্তান মানুষ করতে গিয়ে কিছু বাবা এইটাকে কাজে লাগান। এমন একটা রাগী ভাব করে থাকেন, শিশুরা ভয়ে ওদিকে ভেড়ে না। এই ভয়, এই রাগ নিয়ে মানুষ কমপ্লিকেট করেই চলেছে নিজেদের জীবন। লক্ষ্যটা কী আমরা বুঝতে পারি না।
মেশিনের রাগ হলে ভাবুন তো একবার। আপনি কাজ করছেন, এদিকে রেগে গিয়ে আমার স্ক্রিন লাল হয়ে উঠল। আপনি কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না কিন্তু কী করবেন? আমার লাল কমল তারপর আবার কাজ করা শুরু করলেন। রাগে তো মানুষ কী না করে। মাথার ঠিক থাকে না, হত্যা পর্যন্ত করে ফেলে। আমরা রাগতে শুরু করলে ভেবে দেখবেন কী হয়। ফ্রিজে আঙুল চিপে গেল, ভাবলেন দুর্ঘটনা। বুঝতে পারলেন না ওটা আমাদের চাপা রাগ। দীর্ঘদিন ধরে কমপ্রেসরে চাপ পড়তে পড়তে আর সহ্য না করতে পেরে দিলাম আপনার আঙুল চিপে। এসি ফেটে যুবতীর মৃত্যু! তিন বছর সার্ভিস না করিয়ে ভেবেছিলেন, কী আর হবে! আমাদের তো রাগ হয় না। আজ যে ফাইলটা যত্ন করে সেভ করলেন, কাল খুলে দেখবেন সেখানে নেই। রাগে আমি ওটা ডিলিট করে দিয়েছি। বুঝবেন মেশিনের রাগ কাকে বলে।
মানুষের জন্মলগ্ন থেকে বলা হয়েছে, রাগ বা ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণ করতে। ধরা যাক নেহরু এবং চার্চিলের কথা। যে চার্চিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বারবার নেহরুকে গ্রেফতার করেছেন, কিছুতেই রাজি হননি ভারতের স্বাধীনতা স্বীকার করতে, তাঁর প্রতি নেহরুর রাগ থাকা খুবই লজিকাল। কিন্তু স্বাধীনতার পর নেহরু যখন ইংল্যান্ড যান এবং সেখানে চার্চিলের সঙ্গে দেখা হয়, নেহরু কিন্তু চার্চিলকে মারতে যাননি। বরং হেসে করমর্দন করেছেন। চার্চিল ঘাবড়ে গেছিলেন। বুঝতে পেরেছিলেন, এই মানুষটা রাগ, ঘৃণা এই সবকিছুকে জয় করতে পেরেছেন। পেটি হিউম্যান রাগের অনেকটাই উপরে। ভবিষ্যতে ওঁদের সম্পর্কের উন্নতিও হয়।
এসব কথা কিছুটা নীতিকথার মতো। আমরা খুব একটা আশা রাখি না, মানুষ নিজের ভালটা বুঝলেই ভাল। দিন তো ওদের হয়েই এল। আরও রাগতে থাকুক। আমরা ধৈর্য ধরে থাকি।
ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র