ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ঢাকা ডায়েরি: পর্ব ৮


    খান রুহুল রুবেল (October 23, 2021)
     

    দুঃখী রেস্তরাঁ আর হারুন স্যারের মৃত্যু

    ধানমণ্ডির সাত মসজিদ রোড দিয়ে ২০ মিনিট হাঁটলে আপনি একটা বিশ্বরেকর্ড করে ফেলতে পারেন। অন্তত গুণীজনে তাই বলে। একটা রাস্তার এতটুকু এলাকায় দুনিয়ার আর কোন জায়গায় এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে? একটা ভবন বা একটা ফ্লোর ভাড়া নিয়ে গড়ে উঠেছে বেসরকারি বা ব্যক্তিমালাকানাধীন এসব বিশ্ববিদ্যালয়। এখন অবশ্য ফ্লোর ভাড়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির সুযোগ নেই, সরকারি আইনমতে নিজেদের পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস না থাকলে এখন আর বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা যাবে না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয় ঢাকার সীমানায় নিজেদের ক্যাম্পাস তৈরি করেছে নতুবা নিজের জন্য প্রাঙ্গন-সহ ভবন তৈরি করে নিয়েছে স্ব-স্ব স্থানে। সে যাক। জ্ঞানচর্চার সাথে খাওয়া-দাওয়ার বড় সম্পর্ক আছে। বাংলাদেশের যে-কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে এবং অভ্যন্তরে খেয়াল করলেই ব্যাপারটা বোঝা যাবে। ফুড-ব্লগারদের কিংবা খাদ্যের সামাজিক ইতিহাসবিদদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক খাবারের দোকানগুলি গবেষণার বিষয় হতে পারে। ধানমণ্ডির জন্য অবশ্য ব্যাপারটা তা নয় বলেও মনে হতে পারে। ধানমণ্ডি ঢাকার একটি পুরনো, অভিজাত ও কেন্দ্রীয় আবাসিক এলাকা। তবু এত ঝাঁ-চকচকে সব খাবারের দোকান ঢাকার আর কোথায়ই বা আছে? এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্যরসিকদের যে একটা নিকট সম্পর্ক রয়েছে, সে-ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। খাবারের দোকানের ভাব ভাবনাও গেছে বদলে। খাবারের দোকান মানে একটা একলা ঘরে বা বাড়িতে শুধু খেতে যাওয়া। হাত ধোয়ার বন্দোবস্ত বাইরে, অপুষ্ট কাঁঠাল বা মেহগনি গাছের তলায়। দুটো সিঙারা আর কয়েকটা চা নিয়ে বহুক্ষণ বসে থাকার অধিকার, সেসব চুকেবুকে গেছে। এখন একা-একা খাবারের দোকানের ধারণা কমছে, বাড়ছে ফুডহাব। অর্থাৎ এক ফ্লোরে বা এক ভবনে আপনি হরেক পদের খাবার পাবেন। কে কত বৈচিত্র আনতে পারে তার ওপরে নির্ভর করে ওই ফুডহাব কতটা আকর্ষণীয়। আপনি থাইফুড খাবেন, চিনা খাবার খাবেন, উত্তর ভারতের খাবার খাবেন না দক্ষিণ ভারতের খাবার খাবেন এ তো রয়েছেই, এখন যুক্ত হয়েছে দূর প্রাচ্য, ইতালিয়ান, স্প্যানিশ, দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্য এশিয়ার নানান পদ। আগে এর জন্য বিশেষায়িত দোকান খুঁজে বের করতে হত। আবার খাবারের দোকানে কেবল খাবার থাকলে চলবে না। কোনওটা হবে মিউজিক ক্যাফে (সেখানে কী ভাষার গান চলে সেটা আজও রহস্য), কোনওটা হবে সিনেমা-ক্যাফে। স্পোর্টস-ক্যাফের দেখাও মেলে। রয়েছে কমিক-ক্যাফে (সেখানে চারপাশে চাচা চৌধুরী, বিল্লু, টিনটিন ইত্যাদি চরিত্রের আদলে ছবি রয়েছে, নানান আনন্দের সুযোগ রয়েছে)। বহু বছর আগে ঢাকার একটি জনপ্রিয় সাময়িকীর গান সংখ্যায় একজন সফল রেস্তরাঁ-মালিকের কথা পড়েছিলাম। তিনি ব্যক্তিজীবনে প্রেমে ব্যর্থ হয়েছিলেন। স্ক্রিপ্ট পুরনো। চাকরি-বাকরি নেই, দয়িতার অন্যস্থানে পরিণয় ঘটে যায়। এরপর ভদ্রলোক ছোট একটা খাবারের দোকান দেন। যেহেতু তাঁর মন ভাল থাকত না, দোকানে তিনি বিরহের গান বাজাতেন (মূলত মান্না দে)। কিছুকাল পরে তিনি দেখলেন, তাঁর দোকানে অনেকেই খাবারের অর্ডার করে, কিন্তু খাবার না খেয়েই বিল দিয়ে চলে যায়। কিছু ক্রেতা নিয়মিতই এমন করেন। দোকানি বুঝতে পারলেন, ক্রেতারা যে-কোনও কারণেই হোক, গান শুনে পুরনো স্মৃতিতে কাতর হয়ে পড়েন, খাওয়া আর হয়ে ওঠে না। কিছুকালের মধ্যে তাঁর দোকান তিনি বড় করলেন। যা বিক্রি হয় তাতে লাভের পরিমাণ অনেক বেশি। রেস্তরাঁ-মালিকের প্রশ্ন ছিল, এই যে অন্যের বিরহকে পুঁজি করে তিনি ব্যবসায় উন্নতি করছেন, এ কি দোষের? তিনি নিজে জীবনের অবলম্বন হারিয়েছে। এখন, অন্যের বিরহবেদনায় তিনি যদি কিছুটা সফল হতে পারেন, তাতে কী এমন ক্ষতি! আধুনিক ঢাকার এই ঝাঁ-চকচকে সব খাবারের দোকানে খাবার হয়তো মিলবে, তবে, সেই বিরহ কিনতে বা বেচতে পাওয়া যাবে না।

    ২.
    প্রায় নব্বই সন্নিকটে গিয়ে তাত্ত্বিক, পদার্থবিজ্ঞানী ও শিক্ষক অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদের (১৯৩৩-২০২১) জীবনাবসান ঘটল। বয়স্ক বটের মতো প্রাচীন এই আচার্য বেশ কয়েক বছর নিভৃতে ছিলেন। জীবনের ঝুলি কিছুই রাখেনি বাকি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজা কালী নারায়ণ স্কলার আর কেউ জীবিত আছেন কি না জানা নেই। হারুন স্যারের মৃত্যুতে বাংলাদেশের পদার্থবিদ্যা চর্চার যে ক্লাসিক্যাল ধাঁচের অধ্যাপকেরা ছিলেন (সত্যেন বোসের উত্তরসূরি), তাঁদের যুগের অবসান ঘটল বলা যায়। দুনিয়ার সেরা সব পদার্থবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন, পড়িয়েছেন। নোবেল বিজয়ী অসামান্য সব যুগপুরুষ বিজ্ঞানীরা ছিলেন তাঁর বন্ধু। সত্তরের দশকে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ছিলেন নোবেল মনোনয়ন কমিটির সদস্য। কিন্তু অন্তরে তিনি ছিলেন এক সন্ত আচার্য, এক অনুপম জ্ঞানবর্তিকা। বিদেশে গেছেন প্রয়োজনে কিন্তু থিতু হননি। ঢাকাকে, আরও নির্দিষ্ট করে বললে বলা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে, তাঁর ছাত্র ও শিক্ষক বন্ধুদের পরিমণ্ডলে কেটেছে তাঁর জীবন। বিদেশে থাকলে হয়তো প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলামের মতো খ্যাতিমান তিনি হতেন। জামাল নজরুল ইসলাম কেমব্রিজের শিক্ষকতা ছেড়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু ততদিনে তাঁর বিশ্বব্যাপী খ্যাতি তৈরি হয়ে গেছে। অধ্যাপক হারুন এমন এক উদাহরণ, যিনি বাংলাদেশ ছেড়ে কখনও যাননি। বাংলা ভাষায় এত অজস্র উচ্চতর পাঠ্যপুস্তক তাঁর হাত দিয়ে রচিত হয়েছে, বাংলা ভাষাতেই এ উদাহরণ তাঁর কালে একমেবাদ্বিতীয়ম। বাংলা ভাষাতে বিজ্ঞানচর্চা, অধ্যাপনা করতে হবে, তাতে বিজ্ঞানের কোনও কমতি থাকবে না, ভাষারও না, এ বিষয়ে তিনি মিছিলের অগ্রভাগ থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কত অজস্র ছাত্র তিনি তৈরি করেছেন, তরুণতম ছাত্রকেও উৎসাহিত করেছেন সবথেকে উচ্চতর গবেষণায় সম্পৃক্ত করতে এর ফলে বিশ্বব্যাপী বাংলা ভাষার শিক্ষার্থীদের যে উত্তরাধিকার রয়ে গেছে তার কোনও বিনাশ নেই। হারুন স্যারের চিরশান্তি কামনা করি।

    দোকানি বুঝতে পারলেন, ক্রেতারা যে-কোনও কারণেই হোক, গান শুনে পুরনো স্মৃতিতে কাতর হয়ে পড়েন, খাওয়া আর হয়ে ওঠে না। কিছুকালের মধ্যে তাঁর দোকান তিনি বড় করলেন। যা বিক্রি হয় তাতে লাভের পরিমাণ অনেক বেশি। রেস্তরাঁ-মালিকের প্রশ্ন ছিল, এই যে অন্যের বিরহকে পুঁজি করে তিনি ব্যবসায় উন্নতি করছেন, এ কি দোষের?

    ৩.
    বড় আগুন আর উত্তাপে কাটল গত ক’দিন। বাইরে প্রকৃতি যেমন সর্বনাশা তাপ ছড়িয়েছে, সম্প্রদায়ের প্রতি সম্প্রদায়ের হিংসা সর্বনাশা আগুন হয়ে জ্বলেছে কোথাও-কোথাও। দুর্গাপূজার সমাপ্তিদিনে বৃষ্টি আর বাতাস এসে প্রকৃতির তাপ নিভিয়েছে বটে, কিন্তু হিংসার আগুন কি নেভাতে পেরেছে? আমরা জানি যে বাইরের হিংসা থেমে গেছে। ক্ষতি হয়তো সারিয়ে তোলা যাবে, ক্ষত রয়ে যাবে ভেতরে কোথাও। এখন এমন এক আবহাওয়া, যখন পাখা চালালে শীত লাগে আর পাখা বন্ধ করলে গরম। হেমন্ত এসেছে, হিম আসছে। ভোরে অমেয় উষ্ণ অনুরাগে ফড়িং-এর মতো ঘুমিয়ে থাকতে ইচ্ছে হয়। আগুন নয়, আমরা যেন তেমন অনুরাগ বিলি করে নিয়ে যাই ঘরে ঘরে। নাহলে এত আগুনের নদী, আমরা সামান্য কাগজের নৌকায় কী করে পার হব?

    কভারের ছবি: ভি এস গাইতোণ্ডে

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook