ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • বিদায়, পরিচিত


    পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় (October 9, 2021)
     

    এই মুহূর্তে বিনোদন জগতে যে দুটো ‘ধারণা’ বিলুপ্তির দিকে হাঁটা লাগিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে একটা হচ্ছে টেলিভিশন সেট এবং অন্যটা অবশ্যই সিঙ্গল-স্ক্রিন সিনেমা হল। প্রথমে টিভির কথা হোক। তার রমরমা এখন গিয়েছে। টিভি কেনার হিড়িকও আজকের দুনিয়ায় অনেকটা ম্লান। কেননা, বহু মানুষই এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে টিভি-র কাজ চালিয়ে নেন। তবে টিভি হয়তো আরও কিছুদিন টিকে যাবে। এর কারণ, মানুষের অভ্যাস। সন্ধে হলেই বাড়িতে যে টিভি চালিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ, সেটা আজও চলছে। টিভি-তে কী চলছে সেটা বড় কথা নয়, টিভি চালানোটাই আসল কথা। আর সত্যি কথা বলতে কী, আমরা যতই ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ করে লাফাই না কেন, দেশের একটা বড় অংশের কাছেই ইন্টারনেট বলতে ওই ফেসবুক-হোয়াটস্যাপটুকু। টেলিভিশনের সিরিয়ালগুলো ফোনে দেখতে যে-পরিমাণ ডেটা খরচ হয়, সেই সামর্থ্য অনেকেরই নেই। ফলে সব মিলিয়ে, টিভি-র ব্যাপারটায় একটা বিদায়ের বিষণ্ণ সুর পাওয়া গেলেও, তা হয়তো এই মুহূর্তেই হারিয়ে যাবে না। পুরোপুরি উঠে যেতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।

    অন্যদিকে, সিঙ্গল-স্ক্রিন সিনেমা হল উঠে যাওয়া কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিসর্জনের বাজনাটা বাজতে আরম্ভ করে মাল্টিপ্লেক্স আসার সঙ্গে সঙ্গেই। এখন অনেকেই এই নিয়ে সরব হচ্ছেন যে, সিঙ্গল-স্ক্রিন হলগুলো সংরক্ষণ করা উচিত ছিল, এর সঙ্গে একটা যুগ হারিয়ে যাচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি— কিন্তু একটা কথা আমাদের খুব ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে, একবার যখন মানুষ মাল্টিপ্লেক্সের উন্নতমানের পিকচার কোয়ালিটি, সাউন্ড কোয়ালিটি-তে অভ্যস্ত হয়ে যান, তখন এমনি হলগুলগুলোয় যেতে তাঁদের ইচ্ছে করে না। কেননা মানুষের ধর্মই হচ্ছে, সে উপরের দিকে উঠতে চায়। তাতে যদি স্মৃতিবিজড়িত কিছু নষ্টও হয়ে যায়, কিছু যায় আসে না। অবশ্য স্মৃতি ও আধুনিকতার মধ্যে একটা রফা অনেক সময় করা যায়। যেমন ইউরোপে স্মৃতি, নস্টালজিয়া বা ঐতিহ্যকে সম্মান দেওয়া হয়, সেখানে সংরক্ষণের একটা তাগিদ আছে। এবং এই রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে টাকা দরকার, সেটা তারা সেখান থেকেই উপার্জন করার রাস্তা বের করেছে। অধিকাংশ ইউরোপীয় শহরে প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক আসেন, তাঁরা শুধু বড় বড় সৌধগুলো, ইমারতগুলো নয়, সাধারণ গলির মধ্যে যে আগাছায় ঢাকা বাড়িগুলো আছে, সেগুলো দেখার জন্যও মাইলের পর মাইল হাঁটেন। কারণ সেগুলো যে ‘দর্শনীয়’, এই বোধটা কর্তৃপক্ষই তাঁদের মধ্যে চারিয়ে দিয়েছে। 

    সিঙ্গল-স্ক্রিন সিনেমা হলগুলো কি নিজেদের পরিকাঠামোর উন্নতির কথা কখনও ভেবেছিল? তারা তো ধরেই নিয়েছিল, সিনেমা শিল্পটা যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলবে। সুতরাং সাধারণ মানুষকেও পুরোপুরি দোষ দেওয়া যায় না। তাঁরা একবার যদি মাল্টিপ্লেক্সের আরামে অভ্যস্ত হয়ে যান, কী এমন দায় পড়েছে তাঁদের, কষ্ট করে সিঙ্গল-স্ক্রিনে সিনেমা দেখার? আসানসোলের একজন মানুষ যদি ঘণ্টা দেড়েক গাড়ি চালিয়ে একবার দুর্গাপুর আইনক্স-এ গিয়ে সিনেমা দেখে আসেন, তাঁর কীভাবেই বা ভাল লাগবে আসানসোলের কোনও একটা পুরনো হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে! এই আশা করাটাই ভুল

    এর উল্টোদিকে আমাদের দেশে, কোনও কিছু নতুন করে করতে গেলে, পুরনোকে উৎখাত করে করতে হয়। এর প্রধান কারণ, নান্দনিক বোধের অভাব। যে দেশে এত রকম মানুষের বসবাস, সেখানে নান্দনিক রুচির সমতা কল্পনাই করা যায় না। সে-কারণে রাষ্ট্রীয় ভাবনার মধ্যেই এটা ঢুকে গেছে যে, যত তাড়াতাড়ি পারা যায় ভারতকে সিঙ্গাপুর করে তুলতে হবে। লম্বা একটা বাড়ি তৈরি করাই এখনকার সমাজের একটা চল। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে যখন কিছু বদলাচ্ছে, তখন তা স্মৃতি বা ঐতিহ্যের পরোয়া না করেই আমূল বদলে যাচ্ছে। একই জিনিস সিনেমা হলগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ইউরোপের নানান শহরে যে সিঙ্গল-স্ক্রিন সিনেমা হলগুলো ছিল, তারা সেগুলো বাইরে থেকে একই রেখে ভেতরে সুন্দর ভাবে মাল্টিপ্লেক্স গড়ে তুলেছে। কিন্তু আমাদের এখানে ‘মিত্রা’কে ভেঙে ফেলতে হয়। ভেঙে মল তৈরি করতে হয়। ‘পূর্ণ’ নিঃস্ব হয়ে যায়।

    তবে আরও একটা কথা ভাবা দরকার, সিঙ্গল-স্ক্রিন সিনেমা হলগুলো কি নিজেদের পরিকাঠামোর উন্নতির কথা কখনও ভেবেছিল? তারা তো ধরেই নিয়েছিল, সিনেমা শিল্পটা যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলবে। সুতরাং সাধারণ মানুষকেও পুরোপুরি দোষ দেওয়া যায় না। তাঁরা একবার যদি মাল্টিপ্লেক্সের আরামে অভ্যস্ত হয়ে যান, কী এমন দায় পড়েছে তাঁদের, কষ্ট করে সিঙ্গল-স্ক্রিনে সিনেমা দেখার? আসানসোলের একজন মানুষ যদি ঘণ্টা দেড়েক গাড়ি চালিয়ে একবার দুর্গাপুর আইনক্স-এ গিয়ে সিনেমা দেখে আসেন, তাঁর কীভাবেই বা ভাল লাগবে আসানসোলের কোনও একটা পুরনো হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে! এই আশা করাটাই ভুল। 

    সিঙ্গল-স্ক্রিন সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পিছনে দুটো বড় কারণ রয়েছে— প্রথমত, এগুলোকে সংরক্ষণ করার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। সরকার ব্যস্ত থাকে দেশবাসীর ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতে। এই ধরনের শিল্পবোধ বা সৌন্দর্যবোধের দিকে তাকানোর সুযোগ তার ঘটে না। দ্বিতীয়ত, হল-মালিকদের অনীহা। যদিও এই প্রশ্নও উঠতে পারে, অত টাকা কি তাঁরা পেয়েছেন, যা দিয়ে হলের পরিকাঠামো আরও উন্নত করা যায়! ফলে পরিস্থিতি এখানে উভয়সঙ্কটের। আমি যেমন ব্যক্তিগত ভাবে জানি, অনেক মাল্টিপ্লেক্স গ্রুপই ‘মিত্রা’র হল-মালিক দীপেন্দ্রদাকে (মিত্র) প্রস্তাব দিয়েছিল, ওই জায়গায় যদি বাইরেটা এক রেখে ভেতরে কয়েকটা ছোট ছোট হল তৈরি করা যায়। কিন্তু উনি রাজি হননি। সুতরাং রাস্তা একটাই পড়ে থাকে, ভেঙে ফেলা। আমি নিজেও এটা নিয়ে অনেক ভেবেছি, ইন্ডাস্ট্রি থেকেও এই নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে— কিন্তু এই বিদায়টা অবশ্যম্ভাবী। কোনওরকম রাস্তা দেখিনি, যাতে এটা আটকানো যায়। অর্থনীতির দিক থেকেও সিঙ্গল-স্ক্রিন হলগুলো খুব একটা সুবিধে করতে পারছে না। যদি কেউ বুদ্ধিমান প্রযোজক হন, তিনি দেখবেন গ্রামের ১৫টা সিনেমা হলে একটা ছবি দেখিয়ে যা লাভ হবে, তার থেকে একই খরচে যদি সিনেমাটা শহরের পাঁচটা মাল্টিপ্লেক্সে রিলিজ করানো যায়, তাহলে তাতে লাভের সম্ভাবনা বাড়বে। সিঙ্গল-স্ক্রিন সিনেমা হলগুলোয় যেখানে ৫০জন দর্শক আসতেন, মাল্টিপ্লেক্সে তার চেয়ে কিছু লোক বেশি আসবেন, আর কিছু না হোক স্বাচ্ছন্দ্যের হাতছানিতে। সুতরাং, মনের দুঃখ রেখেই আমাদের এই সত্যিটা মেনে নিতে হবে যে, সিঙ্গল-স্ক্রিন সিনেমা হলের যুগ পুরোপুরি শেষ হতে আর খুব বেশিদিন বাকি নেই!

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র  

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook