ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • নাস্তিকের পুরাণ

    দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik) (July 23, 2021)
     

    বহু মানুষ বিশ্বাস করেন, মানবসভ্যতায় বিজ্ঞান এসে যাওয়ার পর, পুরাণ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে, আর নাস্তিকতারও জন্ম হয়েছে। সত্যি আর মিথ্যের ফারাক বোঝার জন্য বিজ্ঞানই হল নতুন হাতিয়ার— যা মাপকাঠি বা মানদণ্ড, কিন্তু নীতিমালা নয়।

    উনবিংশ শতাব্দীতে সত্যের পুরো ইজারা দাখিল করেছিল একেশ্বরবাদী ধর্ম। কিন্তু বিজ্ঞান, এবং তার নাস্তিকতার ভিত্তি, সেই জায়গাটা জবরদখল করে নেয়, আর একেশ্বরবাদী ধর্মকে পুরাণের আওতায় ঠেলে দেয়। এখনও তা নিয়ে সংস্কারবাদীদের খুব রাগ। আসল ব্যাপারটা হল, একেশ্বরবাদের এক ঈশ্বর, বা বহু-ঈশ্বরবাদের বহু ঈশ্বর, বা আত্মা কিংবা স্বর্গের ধারণা— এর কোনও কিছুই তো কখনওই পরিমাপ করা যায় না, আর তাই স্বচ্ছ স্পষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে এগুলোর কোনওটাকেই সত্যি বলে দাবি করা যাবে না।

    তাই তখন থেকে নতুন ধর্মের প্রচলন হল, যার নাম বিজ্ঞান। তার ভক্তরা গভীর ভাবে বিশ্বাস করে, বিজ্ঞান এবং তার কন্যা প্রযুক্তি মিলে মানবজাতির সব কষ্ট দূর করবে আর পৃথিবীকে সুন্দরতর করে তুলবে। এ হল নাস্তিকের পুরাণ—  যে পুরাণে ঈশ্বর বা অতিপ্রাকৃতিক শক্তির অস্তিত্ব নেই বটে, কিন্তু তা পুরাণ তো বটেই, কারণ তার ভিত্তি হল কিছু অনুমান, বিশ্বাস এবং ভরসা-জাগানো কিছু জিনিস, যা দিয়ে নাকি মানবজাতির চাহিদা মিটবে আর বিপন্নতা ঘুচবে।

    ধর্মনিরপেক্ষতা আবার বলে— সব ঈশ্বরই সমান, অর্থাৎ বেশ চালাকি করে সে সবরকম ধর্মীয় দর্শনকেই পাশ কাটিয়ে যায়, আর দাবি করে, মানুষ মিলেমিশে কাজ করুক, বিশ্বাস আর ঐতিহ্যে ভরসা করে নয়, বরং যুক্তি এবং তথ্যের ভিত্তিতে। ধর্মনিরপেক্ষতা নাস্তিক-পুরাণের পক্ষ নেয়, আর তার অলীক ধারণাগুলোকে লালন করে, যেমন— সম্পত্তি, সম্পদ, অধিকার ও ব্যক্তিসত্তা। ধর্মনিরপেক্ষতা ঈশ্বরের বদলে বেদিতে বসিয়েছে রাষ্ট্রকে, আর বিশ্বাসের বদলে তর্ককে।

    তখন থেকে নতুন ধর্মের প্রচলন হল, যার নাম বিজ্ঞান। তার ভক্তরা গভীর ভাবে বিশ্বাস করে, বিজ্ঞান এবং তার কন্যা প্রযুক্তি মিলে মানবজাতির সব কষ্ট দূর করবে আর পৃথিবীকে সুন্দরতর করে তুলবে। এ হল নাস্তিকের পুরাণ—  যে পুরাণে ঈশ্বর বা অতিপ্রাকৃতিক শক্তির অস্তিত্ব নেই বটে, কিন্তু তা পুরাণ তো বটেই, কারণ তার ভিত্তি হল কিছু অনুমান, বিশ্বাস এবং ভরসা-জাগানো কিছু জিনিস, যা দিয়ে নাকি মানবজাতির চাহিদা মিটবে আর বিপন্নতা ঘুচবে।

    ধর্মনিরপেক্ষতার সবচেয়ে বড় মিথ হল: সম্পত্তির ধারণা। একখণ্ড জমির অধিকার একজন লোকের, বা একটি গোষ্ঠীর। সেটা প্রতিষ্ঠিত হয় কীভাবে? রেজিস্ট্রি করার একটি প্রক্রিয়ায়। এই প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ কে? আগে ছিল রাজা, এখন রাষ্ট্র। আর রাজা বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গেলে কী হয়? হয় কারাদণ্ড, নয় মৃত্যুদণ্ড, নয় নির্বাসন। তার মানে, বলপ্রয়োগ দিয়ে, বা ধুরন্ধর যুক্তি দিয়ে, তৈরি হয় সম্পত্তির ধারণা। যদি রাষ্ট্রের আওতায় অনেকটা গায়ের জোর না থাকত, তাহলে আইন কিংবা রেজিস্ট্রেশন দিয়ে সম্পত্তি ব্যাপারটাকে প্রতিষ্ঠিতই করা যেত না।

    সম্পত্তি বা সম্পদ কীভাবে ভাগ হওয়া উচিত? পুঁজিবাদীরা বলবে, যে লোকটা নতুন ভাবনা এনেছে, যে এই সম্পদকে মূল্যবান করে তুলেছে, তাকেই এটা দেওয়া উচিত। কমিউনিস্টরা বলবে, দেওয়া উচিত শ্রমিকদের, যারা এই সম্পদ উৎপাদন করেছে। ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠা কমিউনিস্টদের পাশ কাটাতে, পুঁজিবাদীরা এখন রোবট এবং আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স-এর মতো উদ্ভাবনে টাকা ঢালছে, যাতে তাদের শ্রমিক, শ্রমিক-ইউনিয়ন বা তাদের নৈতিক অধিকারের সঙ্গে কোনও মোকাবিলাই না করতে হয়।

    ‘মানবাধিকার’ আরও একটি মিথ, এই ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ থেকে যার জন্ম। যাদের টাকা ক্ষমতা সুযোগ-সুবিধে আছে, আর যাদের নেই— তাদের মধ্যে একটা যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি করাই হল মানবাধিকারের কাজ। যাদের ক্ষমতা ও সম্পত্তি আছে, তাদের প্রত্যেককেই ‘মানবাধিকার’ মোটামুটি একটা ভিলেনে পরিণত করে, এবং তাদের কোণঠাসা করে বলে ‘ভাল হও’ বা ‘উচিত কাজ করো’। কেউ মানবাধিকার-কর্মীর বিরোধিতা করলেই সে হয়ে যায় ফ্যাসিস্ট, মানে শয়তান ও দুর্নীতিগ্রস্ত। ঠিক যেমন, ঔপনিবেশিক সময়ে, যারাই খ্রিস্টান মিশনারিদের বিরোধিতা করত, তারাই হয়ে যেত অধার্মিক, বর্বর, নাস্তিক। এবং একটু উঁচু থেকে ভাবা হত, আহারে, এদের আত্মাকে উদ্ধার করা দরকার।

    ‘মিথ’ শব্দটি এক সময় বহু-ঈশ্বরবাদীদের (যারা মনে করে অনেক ভগবান মিলে বিশ্বটা চালাচ্ছেন) অপমান করার জন্য প্রয়োগ করা হত, এখন তা একেশ্বরবাদীদের অপমান করতেও ব্যবহার হচ্ছে, যারা কিনা এককালে নিজেদের এক-ভগবানের ধারণা দিয়ে জগৎ-শাসন করেছে। কিন্তু যারা নাস্তিক, অর্থাৎ ঈশ্বরেই বিশ্বাস করে না, আর নিজেদের বিশ্বাস সম্পর্কে খুব নিশ্চিত থাকে (কারণ সেই বিশ্বাসটা নাকি তত্ত্ববিদ্যা আর বাস্তবের উপরে প্রতিষ্ঠিত) এবং অন্যদের ব্যঙ্গ করে বলে রূপকথায় বিশ্বাসী, তারা নিজেরা এখন অনেকগুলো ধর্মনিরপেক্ষ মিথ-এর ফাঁদে আটকা পড়েছে। তারা মনে করে, প্রযুক্তি হচ্ছে এ যুগের নতুন ঈশ্বর, যা পৃথিবীকে রক্ষা করবে, এবং মানবাধিকার হল নতুন দেবদূত, যে মিথ্যে-ভগবানদের ভেঙে চুরমার করবে। 

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook