ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • হকিতে সোনার সুযোগ

    জাফর ইকবাল (Zafar Iqbal) (July 17, 2021)
     

    ২০২১-এর ১ বা ২ অগাস্ট— এই দু’দিনের একদিনে ঠিক হয়ে যাবে, টোকিও অলিম্পিকে ভারতের হকি-দলের অভিযানের ভাগ্য। কারণ ওই দিনগুলোতেই কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচ হবে, আর ভারতের মেডেল-সম্ভাবনা সেই খেলার উপরেই নির্ভর করে আছে। তবে অতটা এগিয়ে না গিয়ে, আমরা বরং গোড়া থেকেই শুরু করি। কোভিড অতিমারীর সেকেন্ড ওয়েভের ঠেলায়, ভারতের অলিম্পিক্স-প্রস্তুতি খুব মার খেয়েছে। অলিম্পিক্সের আগে যে প্রস্তুতি-সিরিজগুলো হয়, কোনওটাই হয়নি, তাই ভারত যথেষ্ট ‘ম্যাচ-রেডি’ নয়। তবে, ভারতীয় দল এবং তাদের কোচ গ্রাহাম রিড জানেন, সব দলেরই এক অবস্থা, সেদিক থেকে কোভিড খুব নিরপেক্ষ একটা অতিমারী, যা সারা পৃথিবীর সব খেলোয়াড়ের পরিকল্পনায় সমান জল ঢেলে দিয়েছে।

    রিড এও জানেন, এবারের ভারতীয় দল এদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে একটা সেরা দল, আর পদক জেতার একটা বড় সুযোগ এবার আছে। ঠিকই, দলটার অনেকেই কমবয়সি, ১৬জনের মধ্যে ১০জনই এই প্রথম অলিম্পিক খেলবেন, কিন্তু দলটা শারীরিক ভাবে খুব ফিট, রক্ষণভাগ খুব শক্তিশালী, আর দলে নির্ভরযোগ্য শর্ট-কর্নার বিশেষজ্ঞও আছেন। গোলকিপার শুধু একজনই, সৃজেশ, আর সেটা খাতায়-কলমে একটু ঝুঁকির ব্যাপার। কিন্তু রিড-এর নিশ্চয়ই নির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে, মাত্র একজন গোলকিপার থাকার দরুন তিনি নিশ্চয়ই দলটায় অনেক রকম কম্বিনেশন করতে পারবেন।

    ভারতীয় ফিল্ড হকি দলের গোলকিপার সৃজেশ

    এখন অলিম্পিক্সে যা ফর্ম্যাট হয়েছে, সেটা অনুযায়ী, দুটো ভাগ থাকবে, এক-একটায় ছ’টা করে দল। প্রতি ভাগ থেকে বেশি পয়েন্ট পাওয়া চারটে দল কোয়ার্টার ফাইনালে উঠবে, ভারতের অন্তত সেই অবধি ওঠা উচিত। ভারতের গ্রুপে আছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান, আর্জেন্টিনা, স্পেন— তাই শেষ আটে উঠতে খুব বেগ পেতে হবে না। অন্য গ্রুপটায় অন্যান্য দলের সঙ্গে নেদারল্যান্ডস, গ্রেট ব্রিটেন, বেলজিয়াম, জার্মানি আছে, তাই ওটা বেশ শক্ত গ্রুপ। মনে হয়, এই গ্রুপ থেকে অন্তত দুটো দল পদক জিতবেই।

    ফাঁকা স্টেডিয়ামে খেলা হবে, তা নিয়ে আমার কোনও দুশ্চিন্তা নেই, কারণ প্রথম কয়েক মিনিটের পরেই পেশাদার খেলোয়াড়রা ঠিক খেলার মধ্যে ঢুকে যান, সে দর্শক থাক আর না-থাক, আর এটা তো অলিম্পিক, ফলে মনঃসংযোগে কোনও ঘাটতি হবে না। বরং এতে সহ-খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে সুবিধে হবে, কারণ স্টেডিয়ামের চিৎকার থাকবে না, আর সেই যোগাযোগটা (সব দলের ক্ষেত্রেই) খেলার মান বাড়িয়ে দেবে। 

    অলিম্পিক ভিলেজের এমনিতে যে বর্ণময় জীবন, তা এবার কিছুটা মলিন হয়ে পড়বে, তবে অলিম্পিকের যে বিশ্বজনীন ফ্লেভার, তা খেলোয়াড়রা যতটা পারেন উপভোগ করে নিলেই ভাল, কারণ এ আর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। আমি দুটো অলিম্পিক্সে অংশ নিয়েছি— মস্কো ১৯৮০, আর লস অ্যাঞ্জেলেস ১৯৮৪। সারা পৃথিবীর সেরা অ্যাথলিটদের দেখেছি। একজন তরুণ খেলোয়াড় চারিদিকে যখন খেলার এই উৎসব দেখেন, এবং এত বড় মঞ্চে শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়দের অংশ নিতে দেখেন, তা তাঁকে সমৃদ্ধ করে। 

    অধিনায়ক মনপ্রীত সিং এই নিয়ে তৃতীয়বার অলিম্পিকে খেলছেন

    ভারত হকিতে শেষ সোনা জিতেছিল মস্কো অলিম্পিক্সে, সেটা সেই দলের সবার কাছেই বিশেষ একটা স্মৃতি হয়ে আছে। তবে আমার কাছে একইরকম স্পষ্ট স্মৃতি হল ১৯৮৪-র হতাশার, যখন আমি পশ্চিম জার্মানির বিরুদ্ধে গোল মিস করেছিলাম। বলটা গোলপোস্টে লেগে ফিরে এল, আর ভারতের সেমিফাইনালে ওঠার সম্ভাবনাও শেষ হয়ে গেল। ২০০০ সালের সিডনি অলিম্পিক্সে ভারতের আশাভঙ্গের স্মৃতিও তাড়া করে ফেরে, যদিও আমি তখন খেলা ছেড়ে দিয়েছি। খেলা-শেষের বাঁশি বাজার কয়েক সেকেন্ড আগে পোল্যান্ড গোল করে দেয় এবং ভারতের মূলপর্বে যাওয়ার সুযোগ শেষ হয়ে যায়। 

    হরমনপ্রীত সিং বর্তমানে বিশ্ব হকিতে একজন সেরা ‘ড্র্যাগ-ফ্লিক’ স্পেশালিস্ট

    ভারতের হকির কৃতিত্ব সবসময় অলিম্পিক্সের সাফল্য বা ব্যর্থতা দিয়েই মাপা হয়, এবং এটা শেষ চার দশকে অনেকটা বেদনার জন্ম দিয়েছে। এ-বছর মনপ্রীত সিং-এর অধিনায়কত্বে সেই ভাগ্যটা পাল্টাবে, আশা করি। এই মিডফিল্ডার এই নিয়ে তৃতীয়বার অলিম্পিকে খেলছেন। হরমনপ্রীত সিং একজন সেরা ‘ড্র্যাগ-ফ্লিক’ স্পেশালিস্ট, আর দলটায় প্রতিভা ও তারুণ্যের একটা চমৎকার মিশেল রয়েছে। গত বিশ্বকাপে ভারত কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল, আর অতিমারীর আগে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে উঁচু ব়্যাংকিং-এর বেশ কিছু দলকে হারিয়েওছে। সেই স্তরের খেলা টোকিওতে খেলতে পারলে, একটা পদক পাওয়া আশ্চর্য কিছু নয়। এবার ভারতীয় হকির অনুরাগীরা স্বপ্ন দেখার সাহস করতেই পারেন।

    (জাফর ইকবাল ভারতীয় হকি দলের অধিনায়ক ছিলেন। ১৯৮০ সালে মস্কো অলিম্পিক্সে স্বর্ণপদক-জয়ী হকি দলে খেলেছেন।)

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook