ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • মুখঋত: পর্ব ৮

    ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় (June 18, 2021)
     

    উল্টো-পড়া

    শিক্ষাদান একটা একতরফা প্রক্রিয়া হতে পারে না। একদিক থেকে শুধুই আসছে, আর একদিক শুধুই গিলছে, এই ক্রিয়ার মাধ্যমে সার্বিক ভাবে শিক্ষাগ্রহণ ও তার প্রতিফলন এবং গঠনমূলক পরিণতি কতটা সফল, তা নিয়ে বেশ সন্দেহ আছে। একজন শিক্ষার্থী জানবেন, প্রশ্ন করবেন, নিজের কিছু দৃষ্টিভঙ্গি একইসঙ্গে তুলে ধরবেন, এটাই বাস্তব জগতের আলোর দিকে নিয়ে যায়। তবে আমাদের ভারতীয় আচার-নিয়মের চাপে এই ধরনের পারস্পরিক আদান-প্রদান খুবই কম। সাধরণত এক পক্ষ অপর পক্ষের রায়কে নস্যাৎ করে, জয়-পরাজয়ের নিরিখে তা বিচার করে। সুস্থ ‘ডিসকোর্স’ সেখানে সম্ভব নয়। 

    মূলত, অনুজদের কাছ থেকে শুনতে অনেক অগ্রজদের আপত্তি আছে। আবার উল্টোটাও সত্যি। সুস্থতা তখনই সম্ভব, যখন দুই পক্ষই অন্যদের যুক্তি শুনতে রাজি, তা বুঝতে সক্ষম। আমাদের সমাজব্যবস্থায় তাই অনেক সময় ছোটদের কথাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না, তাদের কর্মকাণ্ডকে সিরিয়াস ভাবে দেখা হয় না। কিন্তু অগ্রজদের বুঝতে হবে, উল্টে ফেলার সময় এসেছে। অর্থাৎ উল্টো দিকের যুক্তিটাও শুনতে হবে, তাদের কার্যালয়ে ঢুকে তাদের মনন খতিয়ে দেখতে হবে। 

    একতরফা ভাবে যে যুবসম্প্রদায়কে স্বার্থান্বেষী বলে একরকম ঘোষণা করা হয়েছিল, বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক বাতাবরণে সেই একদল মানুষই এগিয়ে এসে এই ঘোষণার বিপরীত কাণ্ড ঘটিয়ে দেখাল। অতিমারীতে যখন বহু ভারসাম্য ভেঙে পড়ল, তখন এই যুবশক্তি এক নতুন উদাহরণ তৈরি করল। তাহলে এবার প্রচলিত ব্যবস্থাকে উল্টে, ছোটদের থেকেও শিখতে হবে। কী শিখবেন? 

    যুবসমাজের এক অংশকে যখন বলা হল ‘গোল্লায় গেছে’, তারাই এগিয়ে এল প্রাণের ভয় না করে। তৈরি করল নিজেদের ‘নেটওয়ার্ক’। তৈরি হল কমিউনিটি কিচেন, শ্রমজীবী ক্যান্টিন, মেডিক্যাল ক্যাম্প, স্বাস্থ্য শিবির ও পরস্পরকে সাহায্য করার বিপুল পরিকাঠামো। এই মানুষগুলোর কাছে অর্থ খুবই কম, তাদের ক্ষমতাও স্বল্প ও কাজের শেষে সুখ্যাতি পাওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। তাও তারা কাজ করে গেল। নিজেদের চেনা-অচেনা বন্ধুদের হাত ধরে সারা দেশ জুড়ে কাজ করে চলল। কখনও অসুস্থ মানুষের শুশ্রূষার জন্য, কখনও নিরুপায় মানুষের পেটে দু’বেলা ভাত জোগানোর তাগিদে তারা রাস্তায় নামল, জাত, ধর্ম, রাজনৈতিক মতবাদ ভুলে। এই নির্ভয় প্রাণশক্তি শিখতে হবে। 

    দ্বিতীয়ত, যাদের কাছে ক্ষমতার আধিপত্য আর শক্তির দণ্ড, সেই মস্ত মাথারা এই অশ্রুতপূর্ব প্রয়োজনের সময় তাঁদের ব্যর্থতা দেখালেন, জনসম্মুখে হতাশা জানালেন। কিন্তু এঁদেরই তো প্রস্তুত থাকার কথা ছিল। যে ছাত্রযুবর প্রশ্ন করার গলাকে দমবন্ধ করে হত্যা করেন এঁরা, সেই যুবর কাছেই হার মানল তাঁদের সাংগঠনিক কাঠামো, বহুল পরিমাণের অর্থ ইত্যাদি। নিজেদের অভাব ও বিচ্ছিন্নতার মধ্যে থেকেই এমন সাংগঠনিক শক্তি দেখাল আমার চেনা-অচেনা বন্ধুরা, ইতিহাসে স্থান দিতেই হবে এই দৃষ্টান্তকে। 

    তৃতীয়ত, আমাদের চারদিকে শিক্ষা মানেই মূলত ‘সিলেবাস’, অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মডেল। সেখানে বই পড়া, ক্লাস করা আছে। তবে এবার যুবসমাজ যে-কাজটা করেছে, যেভাবে সময়ের ডাকে এগিয়ে এসেছে, সেই শিক্ষার কোনও চ্যাপ্টার পড়ার বইতে পাওয়া যায় না। ছাত্রছাত্রীদের, কিশোর-কিশোরীদের কেউ সমাজকল্যাণ বা জনসেবার প্রশিক্ষণ বা পাঠ দেয়নি, কিন্তু তারা নিজেরাই তাদের অর্জিত পুঁথিগত শিক্ষা থেকে ‘বোধ’ বার করে এনে প্রয়োগ করে দেখাল। এই একই প্রজন্মকেই কিন্তু শুনতে হয়েছে, রোজ শুনতে হয় এবং ভবিষ্যতেও শুনতে হবে: তারা ‘বখে গেছে’ কিংবা তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবলই নেশা করে আর রাজনীতি নিয়ে বৃথা চর্চা করে। অনবরত মুখ-ঝামটানির সামনে দাঁড়িয়েই তারা নিজেদের পড়া বই, শোনা কথা, গুনগুন করা গান, সৃষ্টি হওয়া শিল্প আর সহজ বুদ্ধি ও আন্তরিক সহানুভূতি থেকে একটা মঞ্চ তৈরি করল, নতুন করে শেখাল ‘শিক্ষা’র মানে। 

    তাই, প্রাপ্তবয়স্ক মানেই ‘প্রাপ্ত-মনস্ক’ নয়। মানুষকে সম্মান করতে বয়স দেখতে হয় না, তার কাজ দেখলেই হয়। শিখতে বয়স লাগে না, জ্ঞান, বোধ আর যোগ্যতা লাগে। তাই এবার ক্লাসরুমের উল্টোদিকে বসে, অগ্রজদেরও শিখতে হবে।

    ছবি এঁকেছেন সায়ন চক্রবর্তী

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook