ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • একাকিত্ব ব্যবসা হতে পারে


    প্রতীতি গণত্র (Pratiti Ganatra) (June 11, 2021)
     

    ইংরেজিতে আমার যা অসফলতা এবং যা সফলতা, আমার মনে হয় ইতালিয়ান ভাষায় লিখে আমি একাধারে দু’টোর হাত থেকেই রেহাই পাচ্ছি। ইতালিয়ান ভাষা আমাকে একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন সাহিত্যিক পথের সন্ধান দিচ্ছে। লেখক হিসেবে নিজেকে ভাঙতে পারছি, নতুন করে গড়তে পারছি, কারওর কাছে এ ভাষার ভাষাবিশেষজ্ঞ না সেজে কথার পিঠে কথা জুড়তে বা বাক্য সাজাতে পারছি।” নিউ ইয়র্ক টাইমসে ২০১৫ সালে প্রকাশিত তাঁর “নিজেকে ইতালিয়ান শেখান” প্রবন্ধে এমনটাই লিখছেন ঝুম্পা লাহিড়ি।  তা হলে তিনি যখন তাঁর দোভে মি রোভো (২০১৮) নামের ইতালিয়ান উপন্যাসটি নিজেই ইংরেজিতে অনুবাদ করছেন, তখন কি আমরা তাঁকে ভাষাবিশেষজ্ঞ মনে করব?  না কি নিজের ইতালিয়ান লেখাকে অনুবাদ করে তাঁর অনুবাদের হাতেখড়ি— একজন ইতালিয়ান লেখকের নিজের লেখার ইংরেজি অনুবাদ? না কি তাঁকে দেখব ইংরেজি ভাষার এক পুরস্কার বিজয়ী লেখক হিসেবে, যে ভাষায় তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত লেখাগুলোর সৃষ্টি— ইন্টারপ্রেটার অফ ম্যালাডিজ, দ্যা নেমসেক, আন্যাকাস্টমড আর্থ, দ্য লোল্যান্ড?

    যে ভাষার উপর সাবলীল এবং নিখুঁত দখল লেখককে পুলিৎজার পুরস্কার এনে দিয়েছে, লেখকের পক্ষে সেই ভাষাটিকে পুরোপুরি ছেড়ে সম্পূর্ণ অন্য একটি ভাষায় রচনা করা নিঃসন্দেহে সাহসী সিদ্ধান্ত। এই সাহসী সিদ্ধান্ত থেকে থেকেই তাঁর ভাষা ডানা মেলে উড়তে সক্ষম হয়েছে, আবার বাঁধা গতের গড্ডলিকায় আটকেও গিয়েছে মাঝেমধ্যে।

    আমেরিকার অভিবাসীদের, বিশেষভাবে বাঙালি অভিবাসীদের যে অভিজ্ঞতা, সেই বিষয়ে লেখালিখির সুবাদে ঝুম্পা লাহিড়ির যে লেখকসত্তা গড়ে উঠেছে, ওয়্যার‍্যাবাউটস উপন্যাসে তার থেকে ইচ্ছে করেই তিনি অনেকটা সরে এসেছেন। এ গল্পে তাঁর মূল চরিত্র বা বক্তা একজন নাম-না-জানা মধ্যবয়সী মহিলা, একটি নাম-না-জানা শহরে তাঁর বাস। এ শহরটি যে ইতালিতে, তাঁর একমাত্র ঈঙ্গিত আমরা পাই শহরে ত্রাতোরিয়া-র উপস্থিতির কথা পড়ে। বেশ স্বল্প দৈর্ঘ্যের এই রম্যসাহিত্যের গঠনে লেখক ক্ষণস্থায়ী কিছু দৃশ্যপট বা ভিনেটের মত ৪৬টি চ্যাপটার ব্যবহার করেছেন। প্রত্যেকটি চ্যাপটারের শিরোনাম বর্ণনা দিচ্ছে বক্তার জীবন বা তাঁর শহরের কোনও বিশেষ একটি আঙ্গিকের। “পিয়াজ্জাতে,” “বইয়ের দোকানে,” বা “টিকিট কাউন্টার” নামে চ্যাপটারগুলো খেপে খেপে বক্তার সাদামাটা দৈনন্দিন অস্তিত্বের সংক্ষিপ্ত ছবি আঁকে।

    ঝুম্পা লাহিড়ির লেখায় যে সাবলীলতা অনেকে প্রত্যাশা করেন তা না থাকলেও এ লেখা কেমন যেন ভয় দেখায়, কেমন আচ্ছন্ন করে রাখে। বক্তা যে শহরকে সারা জীবন তাঁর নিজের ঘর বলে চিনে এসেছেন, সেই শহর ছেড়ে যাবার যে যাত্রা, মিলেনিয়াল প্রজন্মের বেশিরভাগ মানুষই তার সঙ্গে ভীষণভাবে নিজেকে মিলিয়ে নিতে পারেন।

    এই দৈনন্দিন জীবনে বক্তার সঙ্গে তাঁর যে ক’জন বন্ধু-বান্ধব, পরিচিত ব্যক্তি, বা অচেনা মানুষের দেখাদেখি হয়, তাঁদের কারওর নাম উপন্যাসে বলা হয়নি। বক্তার চোখে তাঁদের ভাবগতিক বা বৈশিষ্ট্যগুলো যেভাবে ধরা পড়েছে, কেবল সেগুলোই তুলে ধরা হয়েছে পাঠকের জন্য। একজন প্রবীণ ভদ্রমহিলা যিনি খুঁড়িয়ে হাঁটেন, একটু দূরে ওই রাস্তার মোড়ের ওদিকেই যে দম্পতি থাকে, যে মহিলা নিজের বসার ঘরের মত যত্ন করে রোজ পিয়াজ্জায় ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করেন ইত্যাদি। কিন্তু যতবার বক্তার জীবনের যোগসূত্রে এই মানুষগুলোর জীবনের কথা আমরা তলিয়ে দেখতে যাই, আচমকাই তা আটকে যায়। এই মানুষগুলোর ব্যক্তিচরিত্রের অনুসন্ধান লেখক তলিয়ে করেন না বললেই চলে—তারাও বক্তার খুব কাছাকাছি এসে উঠতে পারে না, কেমন যেন প্রান্তবাসী হয়ে থেকে যায়। 

    গল্পে মরসুম পাল্টায়, তার পাশাপাশি পাল্টায় বক্তার মেজাজ। “বসন্তে আমি কষ্ট পাই। এ মরসুম আমাকে উজ্জীবিত করে না, আমার এটাকে ক্ষয়ের মরসুম মনে হয়।” কিন্তু অগস্ট মাসে, “এই মাসটির আমি অনুরাগী নই বটে, আবার ঘৃণাও করি না।” আবার শীতকালে যখন এক বন্ধু এবং তাঁর সন্তানদের সঙ্গে একটি প্রাসাদে ঘুরতে যাবার নিমন্ত্রণ বক্তা গ্রহণ করেন, তখন “কয়েকটা ফাটলের মধ্যে দিয়ে চুঁইয়ে ঢুকছে শীতের সূর্যাস্ত। অসাধারণ! মনে হচ্ছে যেন আমরা একটা গুহার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি, মাছের মতো এদিকে ওদিকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে আলো।” প্রকৃতির সঙ্গে বক্তার আত্মীয়তা বার বার ফুটে ওঠে- বিশেষ করে যখন একজন সহকর্মীর মেয়ের ব্যাপটিজমে রেস্তোঁরার পাশে অশান্ত সমুদ্রকে “চমৎকার” বলে বর্ণনা করে সেই সমুদ্রের রূপ তাঁকে ভাবুক করে তোলে। “বাইরে ঢেউ ভাঙার আর জোর হাওয়ার এক ভয়ানক শব্দ ভেসে আসছে; এক অন্তবিহীন আন্দোলন, বজ্রনিনাদের মত এক সর্বগ্রাসী শব্দ। এ জিনিস আমাদের এত আশ্বস্ত করে কেন, তাই ভাবি।”

    মূল চরিত্র যদিও সম্পূর্ণ একলা বা অন্যদের থেকে পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন নন, তবু তাঁর চরিত্রায়নে নিঃসঙ্গতার একটা ভাব রয়েছে। না কি মধ্যবয়সী মহিলা মাত্রই স্বামী এবং সন্তানদের সঙ্গে যুক্ত করে ভাবার সামাজিক রীতিটা এতই প্রবল, যে পাঠকের মনে তাঁকে একা দেখেই নিঃসঙ্গ বলে ধরে নেবার একটা প্রবণতা দেখা দিচ্ছে? “একাকিত্ব হয়ে উঠেছে আমার ব্যবসা। যেহেতু তাতে একটু সংযম এবং নিষ্ঠার প্রয়োজন, আমি চেষ্টা করছি এই অবস্থানটিকে নিখুঁত করে তোলার। কিন্তু তবুও এ জিনিস আমাকে পীড়া দেয়…” এই অসঙ্গতি নিয়ে মাঝে মধ্যেই বক্তাকে যুঝতে দেখা যায়।

    যে কোনও ভাষাতেই যে কোনও আবেগের বর্ণনা দেওয়া কঠিন। কিন্তু যা ভাষা নিজের নয়, সেই ভাষায় এ বর্ণনা করে তারপরে আবার যে ভাষায় নিজের লেখালিখি সবচেয়ে সমাদর পেয়েছে তাতে মূল লেখার অনুবাদ করা— এ কীর্তিকে কিঞ্চিৎ সেলাম না জানিয়ে পারা যায় না। আর ঝুম্পা লাহিড়ির লেখায় যে সাবলীলতা অনেকে প্রত্যাশা করেন তা না থাকলেও এ লেখা কেমন যেন ভয় দেখায়, কেমন আচ্ছন্ন করে রাখে। বক্তা যে শহরকে সারা জীবন তাঁর নিজের ঘর বলে চিনে এসেছেন, সেই শহর ছেড়ে যাবার যে যাত্রা, মিলেনিয়াল প্রজন্মের বেশিরভাগ মানুষই তার সঙ্গে ভীষণভাবে নিজেকে মিলিয়ে নিতে পারেন। নিজের মা এবং প্রয়াত বাবার সঙ্গে বক্তার পরিশ্রান্ত এবং জটিল সম্পর্ক তাঁর কাছে প্রায়ই ভয় এবং দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে ওঠে। এই বৈশিষ্ট্যটির সঙ্গেও আমরা অনেকেই নিজেদের চেতনা-অভিজ্ঞতার মিল পেতে পারি। 

    ঝুম্পা লাহিড়ির পূর্ববর্তী লেখাগুলোর থেকে ওয়্যার‍্যাবাউটস বেশ আলাদা, এ কথা ঠিক। তবে একবার পড়ে উঠতে পারলে এ লেখা চট করে ভুলে যাবারও নয়। এ উপন্যাস সঙ্গে থাকে, নতুন শহরে বক্তার যাত্রার বিষয়ে ভাবতে বাধ্য করে। তারপরে মাঝে মাঝে মনের ভিতর ফিরে আসতে থাকে, খেপে খেপে— ঠিক উপন্যাসের ওই ছোট্ট চ্যাপটারগুলোর মতই। 

    ওয়্যার‍্যাবাউটস
    ঝুম্পা লাহিড়ি
    হামিশ হ্যামিল্টন, পেঙ্গুইন র‍্যান্ডম হাউস, ৪৯৯/-

    কভারের ছবি সৌজন্যে: প্রতীতি গণত্র

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook