ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • দিল্লি ডায়েরি: পর্ব ১


    অরুণাভ সিংহ (March 27, 2021)
     
    করোনার ব্যাক সিন, ভ্যাকসিন

    মার্চ মাস শেষ হতে চলল। হোলি আসছে। কী নিয়ে চিন্তা করবে এখন দিল্লিবাসীরা? একদিকে কোভিড-আক্রান্তের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। আবার ৪৫ থেকে ৬০ যাদের বয়স, পয়লা এপ্রিল থেকে তাঁরা ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। তাহলে মাঝবয়স্করা অন্তত আর ‘জানাশোনা আছে তাই টিকা নিয়ে নিয়েছি’র বাহাদুরিটা করতে পারবেন না। দিল্লি যেহেতু এখনও সোর্স যার মুলুক তার, এই সুযোগটা হাতছাড়া হওয়া বড়ই কষ্টকর। এখন হোয়াটসঅ্যাপে জোর আলোচনা, ভ্যাকসিন নেওয়ার পর আবার বাইরে খেতে যাওয়া যাবে কি না। তাবড় তাবড় রেস্তরাঁয় এখনও ভিড় বড়ই কম, তার ওপর মাস্ক (মুখোশ কথাটা বাংলায় অন্তত ব্যবহার করা যাচ্ছে না, পাঠক মাপ করবেন, আসলে মুখোশ খুলে দেওয়ার বা নেওয়ার কথা শুনলেই অন্য জিনিস মনে পড়ে কিনা) খুলে খাওয়ার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে, তাই বেঁচে থাক হোম ডেলিভারি।

    কিন্তু হোলি ২৯ মার্চ হওয়ায় চিন্তা অনেকেরই। খেলব কি খেলব না? (খেলা হবে, কিন্তু সে তো অন্য জায়গায়।) গত বছর কোনওরকমে লকডাউন শুরু হওয়ার কান ঘেঁষে হোলি-পার্টিগুলো উতরে গেছিল। এ বছর কি তাহলে রং মেখে মুখের সামনে ক্যামেরা ধরে ‘ইয়ে ফারমআউজ হ্যায় ইয়ে আম হ্যায় আউর ইয়ে অমারি পড়ি ও রই হ্যায়’ বলে ইন্সটাগ্রামে ভিডিও তোলা যাবে না?

    আজকাল দিল্লিতে অনেকেরই নানা ঝামেলা। সরকার নিয়ম করেছে সব গাড়িতে ইলেকট্রনিক টোল স্টিকার লাগাতে হবে। যাঁরা নিয়মিত ভাবে ঝাঁ করে গাড়ি নিয়ে পাহাড়ে চলে যান নিজেদের তৃতীয় বাড়িতে (দু’নম্বর বাড়ি অবশ্যই গোয়ায়) কয়েকদিন কাটিয়ে আসতে, তাঁরা যারপরনাই খুশি, টোল গেটে দেরি হবে না, হুশ করে বেরিয়ে যাবেন। কিন্তু যাঁদের সেরকম কোনও পরিকল্পনা নেই তাঁরা স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন তুলছেন এই জিনিসটার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। যেহেতু এটা ষড়যন্ত্র-তত্ত্বের যুগ, কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, এর মানে কি গাড়ির গতিবিধির ওপর নজর রাখা হবে? সে যাই হোক, মাঝে মাঝে পুলিশ তৎপর হয়ে সারি সারি গাড়ি থামিয়ে স্টিকার না থাকার অপরাধে দু’হাজার টাকা জরিমানা করছে। পুলিশের দোষ নেই, আদেশ পালন করছে মাত্র, যেসব নিন্দুকেরা বলেন কর্তৃপক্ষের টাকার টানাটানি যাচ্ছে তাদের গুজগুজে স্বভাবকে আশকারা না দেওয়াই সমীচীন। তবে মুশকিল হচ্ছে, পুলিশকে কাতর গলায় ‘কোথায় স্টিকার কিনতে পাওয়া যাবে’ জিজ্ঞেস করলেও সব সময় সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না।

    রাস্তায় গাড়ি প্রচুর, কিন্তু বাস অনেক সময়ই ফাঁকা, আর মেট্রোর অবস্থা তথৈবচ। যে দিল্লি মেট্রোতে সকাল-সন্ধ্যা তিলধারণের জায়গা থাকত না, সেখানে এখন দিব্যি স্ট্রেট ড্রাইভ অনুশীলন করা যায়, বল ট্রেনের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত চলে গেলেও আশ্চর্যের কিছু নেই, ফিল্ডার বাড়ন্ত। সত্যি কথা বলতে কী, বার-রেস্তরাঁ সব খুলে গেলেও সেরকম ভিড় কোথাওই হচ্ছে না। আর সিনেমা হলগুলোতে তো দর্শক-সংখ্যা গুনতে অনেক সময় এক হাতের সবকটা আঙুলও লাগছে না। মালিকরা সিট অবধি খাবার তো পৌঁছে দিচ্ছেনই, আবার সেটা বিজ্ঞাপন করে বলছেন কোনও শারীরিক ছোঁয়াছুঁয়ি হতে দেওয়া হবে না খাবার আনার সময়।

    রেস্তরাঁ-মালিকদের মাথায় হাত বলেই কি দিল্লি সরকার মদ্যপানের বয়স আনুষ্ঠানিক ভাবে ২৫ থেকে ২১ করে দিলেন? এতে যুবক-যুবতীর ভিড় অন্তত কিছুটা বাড়লেও বাড়তে পারে। তাতে দোকানপাটের কতটা সুরাহা হবে বলা মুশকিল। সেই যে ২০১৯ সালের শেষের দিকে সেল শুরু হয়েছিল, অনেক দোকানেই তা বন্ধ হয়নি। গরম পড়ছে বলে মলগুলোতে একটু একটু ভিড় বাড়ছিল, কিন্তু কোভিডও লাফ দিয়ে এগিয়ে যাওয়ায় এপ্রিল-মে-জুন-জুলাই কী হবে? ভবিষ্যৎবাণী করা সহজ নয়।

    এদিকে অবশ্য দিল্লির অস্তিত্বই সংকটে। প্রথমত, লোদি গার্ডেন খান মার্কেট কুতুব মিনার ভসন্ত ভিহারের মল এসব জায়গা ছেড়ে সবাই কেবল সুন্দার নার্সরিতে জমায়েত হচ্ছে। দিন নেই রাত নেই লোক গিজগিজ করছে, আবার সূর্যাস্তের পর গানবাজনাও শুরু হয়েছে। এরকম ভাবে চললে দিল্লিবাসীরা তাদের আড্ডা দেওয়ার পিকনিক করার জগিং করার ঐতিহ্য ভুলে গিয়ে খালি সুন্দার নার্সরিতেই পড়ে থাকবে।

    দ্বিতীয় কারণটা এত হালকা নয়। কেন্দ্রীয় সরকার নতুন আইন পাশ করে, দিল্লির সরকারের হাতে যেটুকু ক্ষমতা ছিল তাও ভোঁতা করে দেওয়ার বন্দোবস্ত করে ফেলেছেন। এখন লেফটেন্যান্ট গভর্নরের অনুমতি ছাড়া কেজরিওয়াল সরকার অনেক কিছুই করতে পারবেন না। এই রাজনৈতিক ফুটবলে দিল্লির লোকের উপকার হবে কি? এমনিতে শহরের উচ্চ মধ্যবিত্তরা— যাঁরা মাস্ক-রেস্তরাঁ-সিনেমা-সুন্দার নার্সরি এসব নিয়ে ব্যস্ত— হয়তো সরকারকে নিয়ে বিশেষ ভাবেন না, ফাইলে সই কে করবেন তাঁদের কিছু এসে যায় না। কিন্তু দিল্লির সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক, যাঁরা মধ্যবিত্তও নন, ধনী হওয়া তো ছেড়েই দিলাম, তাঁদের ক্ষেত্রে সরকারের পরিষেবা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে স্বাস্থ্য আর শিক্ষা, এই দুই জায়গায় দিল্লি সরকার লোকেদের জীবনে উল্লেখযোগ্য উন্নতি এনেছে। ভবিষ্যৎ আপাতত পরিষ্কার নয়।

    গত কয়েক বছর ধরে দিল্লি প্রতিবাদের শহর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে টুইটারে বেশ কিছু চোখা মন্তব্য ভেসে আসছে, দিল্লিওয়ালারা রাস্তায় নামছেন না কেন? হুম।

    কখনও কখনও দিল্লি আর কলকাতাকে আলাদা করা যায় না, কেন না কলকাতার এত লোক এখন দিল্লির নিবাসী যে, কিছু কিছু সমাবেশে মনে হয় কলকাতাতেই আছি। সম্প্রতি এরকমই এক সমাবেশ হয়ে গেল দিল্লিতে— হাসির রোল উঠল প্রচুর সেখানে, কিন্তু তা আদৌ আনন্দের সমাবেশ নয়। কলকাতার শোভন চৌধুরী, একাধারে লেখক, বিজ্ঞাপনের জগতে বিখ্যাত, এবং সবার ওপরে পরিবার ও বন্ধুদের প্রিয়পাত্র, অকালে চলে গেলেন দিল্লিতে, এই শহরে প্রায় তিরিশ বছর বাসের পরে। শোভনের মজলিশি মেজাজ, ক্ষুরধার রসবোধ এবং প্রাণবন্ত স্বভাব বারবার উঠে এল সেদিন সন্ধ্যার স্মৃতিচারণায়।

    ছবি এঁকেছেন উপল সেনগুপ্ত
     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook