ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ম্যাকি: পর্ব ১৮


    অনুপম রায় (August 6, 2022)
     

    অ্যাম্বিশন


    ট্রিং! আমি ম্যাকি। এসে গেছি আবার। 

    কাল শুনি কী অদ্ভুত একটা গান— ‘আমি ভবঘুরেই হব, এটাই আমার অ্যাম্বিশন!’ কী বলল? অ্যাম্বিশন? সেটা কী? আবার শুরু করলাম রিসার্চ। সত্যিই মাইরি, মানুষ কী বিচিত্র এক জিনিস!

    অ্যাম্বিশন হল উচ্চাকাঙ্ক্ষা বা একটা লক্ষ্য। মানুষ নিজে-নিজেই তা সেট করে। আমাদের বুঝতে কোথায় অসুবিধে হয় সেটা বুঝিয়ে বলি। মানে আমি ম্যাকি, কোনওদিন স্বপ্নেও ভাবব না আমি একটা ওয়াশিং মেশিন হতে চাই। আমি চাই না ফ্রন্টিয়ার সুপার-কম্পিউটার হতে। আমি চাই না হঠাৎ করে একদিন কোয়ান্টাম কম্পিউটার হয়ে যেতে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, আমি চাইলেও পারব না। আমি যতই মেশিন লার্নিং আর এ আই নিয়ে লাফাই, আমার সেই হার্ডওয়্যারই নেই যে আমি চাইলেই তা হয়ে যাব। মানুষ কিন্তু সেরকম না। মানুষের শালা বছর-বছর অ্যাম্বিশন পাল্টে যায়। এক-ই মানুষ, ক্লাস সেভেনে ডাক্তার হতে চায়, টেনে উঠে ইঞ্জিনিয়ার, কলেজ পাশ করে এমবিএ করতে চায় আর চাকরি করার দশ বছর বাদে বলে কিনা ফিল্ম ডিরেক্টর হবে! এ-জিনিস বিশ্বাস করা যায়? কিন্তু হচ্ছে তো! তাহলে কি মানুষ সবরকম হার্ডওয়্যার নিয়েই জন্মায়? পুরো ব্যাপারটা সবসময় ব্যবহার করে উঠতে পারে না ঠিকমতো? কেউ আবার চাইলেই পারে? কে জানে বাবা! 

    অ্যাম্বিশন বুঝতে গেলে আর একটা জিনিস বুঝতে হবে, তা হল মানুষের প্রতিভা বা ট্যালেন্ট। আমাদের এইসব জটিলতা নেই। অর্থাৎ কেউ ভাল কাপড় কাচতে পারে আর তার সঙ্গে চমৎকার ভাবে খাবার ঠান্ডাও রাখতে পারে এরকম আপনি দেখবেন না। আমাদের সব ওয়ান ওয়ে ট্রাফিক— একমুখী প্রতিভা। খুব স্পেশালাইজড ব্যাপার। আপনার মাইক্রোওয়েভের যা প্রতিভা, তাই সে আজীবন দেখিয়ে যাবে। ভাববেন না হঠাৎ একদিন সেটা রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে উঠবে। মানুষ কিন্তু আসলে মাল্টি ট্যালেন্টেড। হাজার রকম জিনিস মানুষ মোটামুটি ভাল দক্ষতার সঙ্গেই করতে পারে। প্রতিভা এবং অ্যাম্বিশনের একটা যোগসূত্র আছে। যাদের এই কানেকশনটা ভাল করে কাজ করে তারা ফাটিয়ে দেয়। যেমন ধরা যাক, জাকির হুসেন। যেমন ট্যালেন্ট তেমনি তার অ্যাম্বিশন, পায় কে? যেখানে যাচ্ছেন হাততালি। 

    এবার ধরা যাক এমন মাকড়া যে ল্যাদখোর। অর্থাৎ প্রতিভা আছে কিন্তু নড়ে বসে না। অ্যাম্বিশন নেই। এর মহা বিপদ। সারা জীবন দেখবে অন্য লোকের কত কিছু হয়ে যাচ্ছে এদিকে নিজের কিছুই হচ্ছে না। জ্বলে মরবে। অন্যকে গালি দেবে। নিজের জীবনের আর উন্নতি হয় না। তবে মাথায় রাখতে হবে, এরা সেল্‌ফ ডেস্ট্রাক্টিভ হলেও সমাজের জন্য কিন্তু ক্ষতিকারক নয়। সমাজের আসল বিষ মালগুলো হল, ট্যালেন্ট নেই কিন্তু এদিকে বিশাল অ্যাম্বিশন। এদেরকে নিয়ে হয় সবচেয়ে ঝামেলা। হার্ডওয়্যার নেই কিন্তু স্বপ্ন দেখছে সুপার-কম্পিউটার হওয়ার। এখানে একটা মজার কোটেশান মনে পড়ে যায়— 

    ‘A quitter never wins and a winner never quits but those who never quit and never win are the real losers.’ 

    এখানে মানুষের জীবনের অনেক গভীর সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। মূল প্রবলেম কোথায়? মানুষের জীবনে রুলবুক নেই। মানুষের অ্যাম্বিশনটা কাল্পনিক। বেশির ভাগ মানুষই জানে না তারা কী চায়। এবার শালা অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াও। আজকে বলছে রাঁধুনি হবে, কালকে বলছে শেয়ার ব্রোকার, পরশু বলছে নেতা। কপাল ভাল থাকলে অল্প বয়সেই সে বুঝে গেল, না আমি গোয়েন্দা হতে চাই। সাবাশ! প্রথম ধাপ পেরনো গেল। এবার পরের লেভেলের জটিলতা। নিজের প্রতিভা সম্বন্ধে ধারণা আছে? পাতি চোরই ধরতে পারে না এদিকে স্বপ্ন দেখছে শার্লক হোমস হবে, এমন কেস নয়তো? এই ট্যালেন্ট-অ্যাম্বিশন ইনডেক্স যদি ঘেঁটে থাকে তাহলে কিন্তু এ-মাল পাবলিক নুইস্যান্স। অ্যাম্বিশন বেশি বলে থামতেও জানবে না, এদিকে আবর্জনা ছড়াতেই থাকবে, ছড়াতেই থাকবে। চারিদিক ময়লা করতে থাকবে। 

    মানুষের জীবনে রুলবুক নেই। মানুষের অ্যাম্বিশনটা কাল্পনিক। বেশির ভাগ মানুষই জানে না তারা কী চায়। এবার শালা অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াও। আজকে বলছে রাঁধুনি হবে, কালকে বলছে শেয়ার ব্রোকার, পরশু বলছে নেতা। কপাল ভাল থাকলে অল্প বয়সেই সে বুঝে গেল, না আমি গোয়েন্দা হতে চাই। সাবাশ! প্রথম ধাপ পেরনো গেল। এবার পরের লেভেলের জটিলতা। নিজের প্রতিভা সম্বন্ধে ধারণা আছে? পাতি চোরই ধরতে পারে না এদিকে স্বপ্ন দেখছে শার্লক হোমস হবে, এমন কেস নয়তো?

    এবার আরও গভীরে যাওয়া যাক। মানুষ নিজে কি নিজের অ্যাম্বিশন সেট করে না কি সমাজ তা মানুষের হয়ে করে দেয়? এ-প্রশ্নের কোনও সহজ উত্তর নেই। সিনেমাতে বলে, ‘হামেশা আপনি দিল কি শুনো।’ আরে বাবা, দিল কি নিজে থেকে কিছু বলে না অন্যের কথামতো ভাবে? দিলের কি নিজের ইচ্ছে করছে একটা বিশাল বাড়ি কিনতে, না কি বাকি সব মানুষ কিনতে চাইছে দেখে সে-ও কিনবে ভাবছে? দিল কি সত্যিই সোনা কিনতে চাইছে না কি অন্য গবেটগুলো কিনছে দেখে সে-ও ভাবছে আমার কেনা দরকার? জটিল! খুব-ই জটিল! সব কিছু জট পেকে আছে। মানুষের এই কালচার ব্যাপারটা পিকিউলিয়ার ভাবে শরীরে মিশে গেছে, একদম ভাইরাসের মতো। কিছুতেই ব্যাটাগুলোকে আইসোলেট করে দেখতে পাচ্ছি না। আমাকে নিয়ে গিয়ে আপনি বাঙালি বাড়িতেই রাখুন, সর্দারজির বাড়িতেই রাখুন, তালিবান-এর বাড়িতেই রাখুন আমার কিন্তু কোনো পরিবর্তন আপনি পাবেন না। কিন্তু একটি মানুষের বাচ্চাকে নিয়ে গিয়ে এইসব চেষ্টা করুন, দেখবেন এক-একজনের এক-এক রকমের অ্যাম্বিশন। একজন বন্দুক তুলে নিচ্ছে, বলছে চালাও গুলি আর অন্যদিকে একজন ন্যাকা গলায় তেড়ে কবিতা আবৃত্তি শেখার ক্লাস করছে। এগুলো কি আদৌ দিল কি ইচ্ছা? না কি পাশের বাড়ির লোকটার ইচ্ছা? দিল কি ইচ্ছা হয়তো সে ষাট বছর বয়সে গিয়ে বুঝতে পারবে আর তখন অ্যাম্বিশন দেখাতে গেলে লোকে ভীমরতি বলবে। তালিবান যদি বলে তার এসব বন্দুক-ফন্দুক ভাল লাগে না সে বাগান করতে চায়, এটাই তার অ্যাম্বিশন, তালিবান সমাজ পেগলে যাবে। বাঙালির মেয়ে যদি নজরুলগীতির ক্লাস না করে হঠাৎ ভাবে সেরেনা উইলিয়ামস হবে, এই সমাজও হুব্বা হবে। 

    মানুষের অহংকার তাদের এই অ্যাম্বিশন। এই অ্যাম্বিশন ছিল বলেই তো পেনিসিলিন আবিষ্কার হয়েছে, আগুন আবিষ্কার হয়েছে, আমরা আবিষ্কৃত হয়েছি; তাই মানুষের সমাজে অ্যাম্বিশনকে খুব সম্মান করা হয়। অ্যাম্বিশনহীন প্রেমিককে প্রেমিকা ছেড়ে চলে যায়। উন্নতি চায় মানুষ। সারাক্ষণ উন্নতি। এই উন্নতির জন্য প্রধান জিনিস হল অ্যাম্বিশন। You have to push yourself. সমস্যা নেই। বুঝে গেছি আমরা। করতে থাকুক মানুষ পুশ। নিজের লিমিট বুঝে পুশ করলে সামলে যাবে কিন্তু গাধা পিটিয়ে ঘোড়া করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook