ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • পৃথিবীর সেরা দশটি পৌরাণিক কাহিনি: পর্ব ৩


    দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik) (May 6, 2022)
     

    পলিনেশীয় রূপকথা
    সৃষ্টির উপাখ্যান- কেন দাদার কথা শুনতে হয়

    তারাঙ্গার পঞ্চম সন্তানের নাম ছিলো মাউই। কারোর কারোর মতে তিনি মৃত অবস্থাতেই জন্ম নিয়েছিলেন, আবার কেউ কেউ বলেন অপরিণত অবস্থায় অকালে তার জন্ম। বিশ্বাস করা হত, তিনি দুর্ভাগ্যের ধারক। তাই তাঁর মা তাঁকে নিজের খোঁপা থেকে ছিঁড়ে নেওয়া এক গোছা চুলে মুড়ে সমুদ্রে ফেলে দেন। 

    সমুদ্রের দেবতারা শিশুটিকে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করেন, এবং সামুদ্রিক আগাছায় মুড়ে আকাশ-পিতা ঈশ্বর রাঙ্গির হাতে তুলে দেন। রাঙ্গি তাঁকে স্বর্গরাজ্যে নিয়ে যান এবং বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত তাঁর লালন-পালন করেন। 

    একদিন মাউই তাঁর মায়ের সেই চুলের গোছা খুঁজে পেলেন, এবং সেটা চিনতে পেরে ঠিক করলেন, স্বর্গরাজ্যে পালকপিতার দুনিয়া ত্যাগ করে মানুষের মর্ত্যরাজ্যে মায়ের খোঁজ করবেন। কিন্তু মা তারাঙ্গার বিশ্ব এবং পালকপিতা রাঙ্গির জগত, এই দুই স্থানেই তিনি ছিলেন খানিকটা ব্রাত্য। মাউই বুঝতে পারলেন, পৃথিবীতে দিনের দৈর্ঘ্য বড্ড কম, এত কম সময়ে তিনি কার্যসিদ্ধি করতে পারবেন না। ভাইদের সাহায্যে তিনি একটি ফাঁসের দড়ি দিয়ে সূর্যটাকে পাকড়াও করলেন, তারপর চোয়ালের হাড়ের তৈরি একটি মুগুর দিয়ে সূর্যকে বেধড়ক পিটিয়ে তার কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করলেন, এর পর থেকে সে আকাশপথে আরো আস্তে আস্তে বিচরণ করবে। 

    এর পরে মাউই নিজের নাক থেকে পড়া রক্তকে টোপ হিসেবে ব্যাবহার করে একটি বিরাট দ্বীপকে জলের নীচ থেকে ছিপে টেনে তুললেন; এতদিন সে সমুদ্রের নীচে মাছের ছদ্মবেশে লুকিয়ে থাকতো। জল থেকে দ্বীপটির উঠে আসার পর মাউই তাঁর ভাইদের জিম্মায় তাকে রেখে দিয়ে চলে গেলেন পুরোহিতের সন্ধানে, যাতে বিধিসম্মত যাগযজ্ঞ এবং প্রার্থনা করা যায়। কিন্তু ভাইয়েরা তাঁর ফেরার অপেক্ষা না করেই মাছটিকে কাটতে শুরু করলেন। ফলে তীব্র যন্ত্রণায় সে ছটফট কতে উঠল, তার শরীর খণ্ড খণ্ড হয়ে জন্ম দিল পাহাড়, টিলা, উপত্যকার। ভাইয়েরা যদি মাউইয়ের কথা শুনতেন, তবে গোটা দ্বীপটা একটা সমতল ভূমি হতো, তার উপর দিয়ে মানুষ অনেক সহজে যাতায়াত করতে পারতেন। 

    মিশরীয় রূপকথা
    প্রকৃত উত্তরাধিকারী- ভ্রাতৃদ্বন্দের এবং বিশ্বাসঘাতকতার এক প্রাচীন কাহিনি

    একেবারে প্রথমে পৃথিবীতে কিছুই ছিল না, কেবল থৈ থৈ করতো নু-য়ের জল। তার থেকে একদিন মাথা তুলে দাঁড়াল পিরামিডের আকারে প্রথম জমি, ঠিক যেমন নীল নদে ভাঁটা পড়লে নীচের মাটি দেখা যায়৷ এই জমির উপর দাঁড়ালেন আটুম, তাঁর থেকে সৃষ্টি হল পবাতাসের দেবতা শু এবং আর্দ্রতার দেবী টেফনুটের। আবার তাঁদের মিলনে জন্ম নিলেন পৃথিবীর দেবতা গেব এবং আকাশের দেবী নুট। এঁদের থেকেই আবার সৃষ্টি হল আইসিস এবং ওসাইরিসের, যাঁরা মানবসভ্যতার সর্বপ্রথম রাজা ও রানি। আটুমকে প্রায়শই পুরুষরূপে কল্পনা করা হয়, কারণ তিনি আত্মমৈথুন করে তাঁর পুরুষ এবং নারী সন্তানদের জন্ম দিয়েছিলেন। তবে অন্যত্র তাঁকে “মহান নারী-পুরুষ” বলেও সম্বোধন করা হয়, এতে স্বীকৃতি দেওয়া হয় দু’টি লিঙ্গের সৃষ্টির আগে জীবনের নারী-পুরুষ মেশানো চরিত্রকে। 

    ওসাইরিস হয়ে উঠলেন নীল উপত্যকার প্রথম রাজা, একটি বিরাট রাজ্য প্রতিষ্ঠা করলেন তিনি। কিন্তু তাঁর ভাই, মরুভূমির অধীশ্বর সেট তাঁর প্রতি হিংসায় কাতর হয়ে উঠলেন। তিনি দাদাকে ভোজের আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁকে একটি সিন্দুক দেখিয়ে নিষ্পাপ স্বরে প্রশ্ন করলেন, “বলো তো, এই সিন্দুকটা তোমার থেকে ছোট, না বড়?” ওসাইরিস জানতেন না, তাই সেট তাঁকে বললেন সিন্দুকে শুয়ে যাচাই করে নিতে। ওসাইরিস কিছু সন্দেহ না করে সিন্দুকে ঢুকে পড়লেন। সঙ্গে সঙ্গে সেট সিন্দুকটি বন্ধ করে দিয়ে ওসাইরিসকে জ্যান্ত কবর দিয়ে দিলেন। তারপরে তাঁর শরীরটি টুকরো টুকরো করে কেটে ভাসিয়ে দিলেন নীল নদের জলে। 

    আইসিস সারা পৃথিবী থেকে স্বামীর দেহের টুকরোগুলো খুঁজে এনে জোড়া লাগালেন। তারপর তাঁর জাদুশক্তির বলে স্বামীকে আবার কিছুক্ষণের জন্য বাঁচিয়ে তুললেন, অন্তত তাঁর গর্ভে একটি সন্তান দেবার মত সময়ের জন্য। এই শিশুর নামই হোরাস, ওসাইরিসের প্রকৃত উত্তরাধিকারি সে নিজেই। তবে সেটকে পরাস্ত করে নিজের শাসন কায়েম করতে হোরাসকে অনেক লড়তে হয়েছিল। 

    ইনুইট/এস্কিমো রূপকথা
    সমুদ্রের জীবেরা- সমুদ্রের প্রাণ সৃষ্টির বীভৎস ইতিহাস

    সেডনা নামে এক পরমাসুন্দরী তরুণী ছিল। তার বিপত্নীক বাবা তার বিয়ে দেবার প্রাণপণ চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু সেডনা এ বিষয়ে একেবারেই গররাজি। একের পর এক পাত্র তাকে বিয়ে করতে আসে, আর তাদের সবাইকে সে এক এক করে খারিজ করে দেয়। একদিন সমুদ্রের এক পাখি এসে তাকে কথা দিলো, সে সেডনাকে তার “চমৎকার, বিলাসবহুল” ঘরে নিয়ে গিয়ে রাখবে। ঝোঁকের বশে সেডনা পাখির সঙ্গে পালালো বটে, তবে গিয়ে দেখলো এই “চমৎকার, বিলাসবহুল” ঘরটি আসলে এক পূতিগন্ধময়, নোংরা পাখির বাসা। তার উপরে তার এই নতুন স্বামী তার সঙ্গে ক্রীতদাসের মত ব্যাবহার করতে শুরু করল। সেডনা আকুল হয়ে বাবাকে অনুরোধ করলো তাকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যেতে, এবং বাবা রাজি হলেন।

    কিন্তু সমুদ্রের উপর দিয়ে যখন তারা জলপথে চলেছে, তখন ঝাঁকে ঝাঁকে সমুদ্রের পাখি এসে নৌকা ঘিরে ফেলল। তাদের ডানার ঝাপটায় সৃষ্টি হল এক ভয়ানক ঝড়ের, তার দাপটে এপাশ থেকে ওপাশ দুলতে লাগলো নৌকা।  নিজের প্রাণ বাঁচাতে সেডনার বাবা মেয়েকে সমুদ্রে ফেলে দিলেন, যাতে তুষ্ট হয়ে পাখিরা তাঁকে ছেড়ে দেয়। সেডনা আবার নৌকায় উঠতে চেষ্টা করায় বাবা তার আঙুলগুলো কেটে দিলেন। রক্তাক্ত ছিন্নভিন্ন হাতেই সে আবার সে ওঠার চেষ্টা করায় এবার বাবা কেটে দিলেন তার হাত দুটোই, এবং মেয়েকে তার ছিন্নভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সমেত আবার ফেলে দিলেন জলে। সেডনা যখন সমুদ্রের অতলে ডুবে গেলো, তখন তার কাটা হাত থেকেই জন্ম নিলো মাছ, সীল, তিমি এবং অন্যন্য সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীরা। 

    ব্যাবিলনীয় রূপকথা
    মাতৃহত্যা- পৃথিবী, আকাশ ও মানবজাতি সৃষ্টি করার লীলায় একাধিক প্রজন্মের রক্তোন্মাদ কাহিনী

    তিয়ামাত ছিলেন সকল দেবদেবীদের মা, তাঁর শরীরেই অধিষ্ঠান করতেন বাকি দেবতারা। সবই ভালো চলছিল, কিন্তু এক সময়ে এই শিশুরা এত গোলমাল চেঁচামেচি করতে শুরু করল, যে প্রাচীন দেবতারা বললেন, এই নবীন দেবতাদের ধ্বংস করে ফেলতে হবে। প্রথমবার এমন হওয়ায় তিয়ামাত তাঁর সন্তানদের সাবধান করে ছেড়ে দিলেন। দ্বিতীয়বার যখন একই জিনিস হল, তখন তিয়ামাত তাঁর স্বামীকে নির্দেশ দিলেম, এই নবীন দেবতাদের বিনাশ কর। নতুন দেবতারাও সহজে হারবেন না, তাঁরা মার্ডুককে অগ্রগামী করে রুখে দাঁড়ালেন।

    এক ভয়ানক যুদ্ধের পরে অবশেষে তিয়ামাত, তাঁর স্বামী, এবং তাঁদের পক্ষের সমস্ত দেবতাদের পরাজিত করলেন মার্ডুক। এই তিয়ামাতের শরীর থেকে মার্ডুক সৃষ্টি করলেন নীচে পৃথিবী, উপরে আকাশ। তিয়ামাতের চোখের জলে সৃষ্টি হল টাইগ্রিস ও ইউফ্রাটিস নদীর। লাল মাটির সঙ্গে তাঁর স্বামীর রক্ত মিশিয়ে জন্ম হল মানবজাতির। প্রাচীন দেবতাদের থেকে জন্ম নিয়েছে বলে মানবজাতিকে আজীবন নবীন দেবতাদের সেবা করতে হয়। সেবায় ত্রুটি হলেই ঝড় আসে, বন্যা আসে। এনুমা এলিশে এ কাহিনী বর্ণিত আছে।

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook