ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • বিনিদ্র: পর্ব ৪২

    বিমল মিত্র (December 17, 2021)
     

    পর্ব ৪১

    যে সন্দেহ একবার মাথার মধ্যে জেগে ওঠে, সে-সন্দেহ সাপের মতন। সেই সাপ সুযোগ পেলেই ছোবল মারার চেষ্টা করে— আর ছোবল মারার সঙ্গে-সঙ্গে মানুষ সর্বাঙ্গে শিথিল হয়ে পড়ে। গুরুরও তাই হল।

    শুধু তো সন্দেহ নয়। মনে পড়ে গেল কলকাতার আউটডোর শুটিং-এর কথা। সেই এক রাত্রি গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলের মধ্যে রাত-যাপন। ওয়াহিদা রেহমানের আশ্চর্য হওয়া মুখখানা।

    ওয়াহিদা সেদিন জিজ্ঞেস করেছিল— আপনি আমাকে এমনভাবে কেন ডেকে আনলেন? তাতে গীতাজি কি মনে করবেন?

    গুরু বলেছিল— গীতার কথা আমাকে বোলো না। আমি আজ থেকে তাকে ভুলে যাব—

    ওয়াহিদা বলেছিল— কিন্তু আপনি যে তাকে বিয়ে করেছেন! আপনার যে ছেলে আছে, আপনার যে সংসার আছে—

    —মিথ্যে কথা! গীতাই আমাকে বুঝিয়েছে যে আমার ছেলে নেই, আমার সংসার নেই, আমি নিজেও আর নিজের মতো নেই। আমি আজ থেকে বদলে যাব—

    সেদিন ওয়াহিদা গুরুর কথা শুনে কি মনে করেছিল কে জানে! গুরুর কথাগুলো বিশ্বাস করেছিল কিনা তাও কেউ জানে না। কিন্তু তারপর থেকেই কেমন যেন দুজনেই বদলে গেল। হায়দ্রাবাদের সামান্য মেয়ে যেন কেমন অসামান্য হয়ে উঠল আর গুরুও কেমন সাবালক হয়ে উঠল শিল্পী হিসেবে। লোকে বলতে লাগল, গুরু দত্ত একজন শিল্পী। শুধু শিল্পী নয়, মহৎ শিল্পী। ছবির গুরু দত্ত তখন মানুষ গুরু দত্তকে হারিয়ে দিলে!

    তারপর কোনও কথা নয়। সোজা ছুটে গেল ওয়াহিদা রেহমানের বাড়িতে। ওয়াহিদা বললে— এ কী গুরুজী, আপনি? এই অসময়ে?

    গুরু দত্ত চিঠিখানা পকেট থেকে বার করে দেখালে।

    জিজ্ঞেস করলে— তুমি এই চিঠি লিখেছ? এতা তোমার হাতের লেখা?

    ওয়াহিদার মুখের ভাব দেখেই গুরু বুঝতে পারলে সব। তাড়াতাড়ি চিঠিটা পকেতে পুরে উঠল। উঠে রাস্তায় গাড়িতে উঠতে যেতেই ওয়াহিদা জিজ্ঞেস করলে— আপনি এখনি চললেন?

    গুরু বললে— হ্যাঁ— স্টুডিওতে আবার দেখা হবে—

    বলে আর দাঁড়াল না গুরু। তার তখন সময় নেই আর। পালি হিলের বাড়িতে পৌঁছবার জন্য তখন আর তার তর সইছে না।

    সেদিন ওয়াহিদা গুরুর কথা শুনে কি মনে করেছিল কে জানে! গুরুর কথাগুলো বিশ্বাস করেছিল কিনা তাও কেউ জানে না। কিন্তু তারপর থেকেই কেমন যেন দুজনেই বদলে গেল। হায়দ্রাবাদের সামান্য মেয়ে যেন কেমন অসামান্য হয়ে উঠল আর গুরুও কেমন সাবালক হয়ে উঠল শিল্পী হিসেবে। লোকে বলতে লাগল, গুরু দত্ত একজন শিল্পী। শুধু শিল্পী নয়, মহৎ শিল্পী। ছবির গুরু দত্ত তখন মানুষ গুরু দত্তকে হারিয়ে দিলে!

    মাথার ভেতর তখন সব গোলমাল হয়ে গেছে গুরুর। তিরিশ-চল্লিশ-পঞ্চাশ-ষাট সত্তর মাইল বেগে তার ফিয়াটখানা ছুটে চলেছে। যদি এমনই জোরেই না চলবে তো জীবনে বেঁচে থেকে আনন্দটা কি? সব ধুলো-কাদা-কালি বাঁচিয়ে বেঁচে থাকা তো সহজ কাজ। সে তো সবাই পারে। তার চেয়ে যে কটা দিন বাচি এমনই করেই বাঁচব। এমনি ঝড়ের গতিতে জীবনটাকে শেষ করে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেব পরমায়ু।

    একদিন ছোটবেলায় অনেক সাধই তো ছিল। যেমন সাধ থাকে সকলের। একখানা বাড়ি, একখানা গাড়ি, আর একটা নিরিবিলি সংসার। অনেকেই তো তা পায় না। কিন্তু যে মষ্টিমেয় কজন তা পায়, তারাই কি সুখ পায়? যদি সুখ না পায় তো কেন পায় না? কোন্‌ অদৃশ্য বিশ্ব-বিধাতার অভিশাপে মানুষ সব পেয়েও সব থেকে বঞ্চিত হয়? সে কি তার এ-জন্মের না পূর্ব-জন্মের অভিশাপ? নতুন ছবি করতে হবে, তার কথাও মনে পড়ল।

    ‘চৌধবী-কা-চাঁদ’ ছবির শেষটা পছন্দ হয়নি। শেষটা বদলাতে হবে। গল্পে আছে গুরু দত্ত আত্মহত্যা করবে। অর্থাৎ ছবির নায়ক। কিন্তু সেটা বদলে দিতে ইচ্ছা হল। আসলে রেহমান আত্মহত্যা করলেই গল্পটা মানায় ভালো। রেহমান করবে উপনায়িকার ভূমিকায়। সে আত্মহত্যা করুক, আমি বাঁচব। বেঁচে থেকে আমি দেখব বেঁচে থাকার হিসেব-নিকেশ। ডেবিট-ক্রেডিট করে যাব জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত। তারপর হাসতে হাসতে এই পৃথিবীর থেকে বিদায় নেব। নেবার সময় বলে যাব— আমার হিসেব ভুল নেই, আমি অঙ্কে রাইট। মরে গিয়ে উঁচু গলায় বলে যাব— আমি জিতেছি—

    এঁকে-বেঁকে পালি হিলে বাড়িটার সামনে আসতেই লালা টের পেয়েছে ইঞ্জিনের শব্দ পেয়ে। সে সাহেবের গাড়ির চাকার শব্দ মুখস্থ করেছে।

    সেলাম করে লালা একপাশে সরে দাঁড়াল দরজা খুলে। গাড়িটা ভেতরে ঢুকে পেছন দিকে থামল। সেখান থেকে দৌড়তে দৌড়তে ওপরে উঠল গুরু। বাড়িটার বারান্দার ওপর উঠল। কুকুরটাও সাহেবকে দেখে লেজ নেড়ে সেলাম করল।

    কিন্তু তখন সেদিকে গুরুর নজর নেই। তারপর একেবারে বেডরুম। শোবার ঘর ফাঁকা। সেখান থেকে হলঘর। হলঘরও ফাঁকা। এ পাশের ও সে পাশের ঘর। কোথাও নেই গীতা। কেউ কোথাও নেই।

    জোরে ডাকলে—কৃষ্ণা—কৃষ্ণা—

    কৃষ্ণা চাকর সামনে আসতেই গুরু জিজ্ঞেস করলে— দিদি কোথায়?

    কৃষ্ণা বললে— দিদি চলা গিয়া—

    —কোথায় চলে গেছে?

    কৃষ্ণা মুখ কালো করে বললে— মালুম নেই মুঝে—

    পুনঃপ্রকাশ
    মূল বানান অপরিবর্তিত

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook