ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • অরণ্যের দিন অরণ্যের রাত


    শর্মিলা ঠাকুর (Sharmila Tagore) (August 28, 2021)
     

    অরণ্যের দিনরাত্রি’ ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৬৯ সালে। সে সময় হিন্দি ছবির কাজ নিয়ে আমি রাতদিন ব্যস্ত। এ রকমই এক দুপুরে লাঞ্চ ব্রেক-এর সময় আমার সহকারী দৌড়ে এল। ‘সত্যজিৎ রায় আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন’। সেটা ছিল ফিল্মিস্তান স্টুডিও। বেশ অনেকটা হেঁটে গেলে অফিস, সেখানেই ফোনটা রাখা। মোবাইল ফোনের অনেক দশক আগের কথা সেটা। মানিকদা ধৈর্য ধরে ফোনের অন্যপ্রান্তে অপেক্ষা করছিলেন। যা বললেন, তাতে আমার মনটা আনন্দে নেচে উঠল। তাঁর নতুন ছবিতে আমার জন্য একটা পার্ট উনি ভেবেছেন। আমি কি রাজি? সেক্ষেত্রে, শুটিং-এর ডেটটা আগে থেকেই তৈরি করে রাখতে হবে, কারণ অনেকে মিলে অভিনয় করছেন ছবিটিতে। আরও একটা ব্যাপার, বর্ষা আসার আগে একটি মাসই সময় পাওয়া যাবে। তার মধ্যে কাজ সারতে হবে। কারণ গোটা ছবিটির শুটিং হবে রাঁচি থেকে বহু মাইল দূরে ছিপাদহর অরণ্যে।

    বুকের ধুকপুকুনিটা একটু শান্ত হওয়ার পর মনে হল, আরে! ঠিক ওই একই ডেট তো দিয়ে রেখেছি শক্তি সামন্তকে, দার্জিলিং-এ ‘আরাধনা’-র একটা গানের শুটের জন্য। সেই হিসাবে উনি রাজেশ খান্নার সময় নিয়ে রেখেছেন, যা বদলানো প্রায় দুঃস্বপ্নের মতো। আর উনিও চাইছেন বর্ষা আসার আগে কাজ সারতে। যা বুঝলাম, ঘোর সমস্যা। কিন্তু নিজের মনকে বললাম, যেভাবে হোক এর সমাধান করতেই হবে।   

    আজ আর মনে নেই পরপর কী ঘটেছিল, কিন্তু এটা অবশ্যই ঠিক যে আমার কূটবুদ্ধি আর মন জয় করার ক্ষমতার এক পরীক্ষাই বুঝি ছিল সেটা! শক্তিজী রাজি হয়ে গেলেন পরে স্টুডিওতে আমার ক্লোজআপ নিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’র আউটডোর শুটিং-এ যেতে আমাকে ছাড়পত্রও দিয়ে দিলেন। আজ মনে হয়, অত্যন্ত উদারতার পরিচয়ই দিয়েছিলেন তিনি। বুঝেছিলেন, মানিকদার সঙ্গে কাজ করা আমার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, আর সে কারণেই খোলা মনে আমার অনুরোধ মেনে নিয়েছিলেন। ঘটনা হল, ‘আরাধনা’ বক্স অফিসের সব রেকর্ড ভেঙে দেয়। ফলে শক্তিজী যদি সে সময় সামান্য মনঃক্ষুণ্ণ হয়েও থাকেন, পরে আর তার কোনও রেশ থাকেনি।

    ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’র শুটিং করে যে আনন্দ পেয়েছি, তার আর কখনও পাইনি। অসামান্য লোকেশন। এপ্রিলের দাবদাহে, পালামৌয়ের অরণ্যে গাছেদের কঙ্কালসার দেহ, ঝকঝকে আকাশের তলায় ঝরা পাতার স্তুপ ছড়িয়ে রয়েছে— সব মিলিয়ে যেন এক জাদুবাস্তব। আমার সহ-অভিনেতা সৌমিত্র, রবিদা আমার প্রিয় বন্ধু, শুভেন্দু, শমিত— দুজনেই দুর্দান্ত অভিনেতা। আমরা একসঙ্গে ছিলাম একটা সাময়িক আস্তানায়। কাবেরীদি আর সিমি ছিল কিছুটা দূরে একটা ডাকবাংলোয়। কাবেরীদি দীর্ঘদিনের ব্যবধানে সেই আবার কাজ করছিলেন।

    সিমি গারেওয়াল ও শমিত ভঞ্জের সেই ঘনিষ্ঠ দৃশ্য ফ্রেমবন্দি করছেন সত্যজিৎ রায়

    ওই অরণ্যের আউটডোরের স্মৃতি আমার মনে স্থায়ীভাবে রয়ে গিয়েছে। একটা মাস আমরা কাটিয়েছিলাম জঙ্গলের মধ্যে। এপ্রিল মাসে সেখানে দিনের তাপমাত্রা উঠে যায় ৪৮ ডিগ্রিতে। আমরা খুব ভোরে উঠে তিনঘণ্টা কাজ করতাম, আবার সন্ধ্যা হওয়ার আগে তিনঘণ্টা। বাকি সময়টা নিছক আড্ডা। মানিকদা মাঝে মাঝে যোগ দিতেন, তবে একটা সমযের পর বুঝেছিলেন সবাই সিগারেট লুকোনোর চেষ্টা করছে, সম্মান দেখাতে গিয়ে আড়ষ্ট হয়ে পড়ছে! রবিদা সবার নামের আগে একটা করে বিশেষণ জুড়ে দিয়েছিলেন! রবিপোড়া, শমিতভাপা, শুভেন্দুভাজা— এইসব! আমিই একমাত্র যার ঘরে একটা কুলার ছিল, মহিলা হিসাবে এই বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল।            

    পূর্ণিমা এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে গোটা অরণ্যটা মায়াবী হয়ে উঠত। দূর থেকে ভেসে আসত মাদলের বোল, হাতির ডাক। একবার মনে আছে, খেয়ালের বশে সাঁওতালদের সঙ্গে গিয়ে প্রায় শেষরাত পর্যন্ত নেচেছিলাম। মানিকদা এসব টের পাননি! এক সন্ধ্যায়, যেখানে থাকতাম তার সামনে এসে কিছু গুন্ডা প্রকৃতির লোক গন্ডগোল পাকিয়েছিল। পুলিশ চৌকি থেকে বহুদূরে ছিল আমাদের বাসস্থান। আর সে যুগে দেহরক্ষী রাখার প্রশ্নই ছিল না। তবে সৌমিত্র আর অন্যান্য ছেলেরা এসে ওদের ধাওয়া করে, তারাও পালিয়ে যায়। ব্যাপারটা খুব সহজ ছিল না। আমি জানতাম যে যাঁদের সঙ্গে রয়েছি, তাঁরা গভীরভাবে আমার শুভানুধ্যায়ী। আমার কোনও ক্ষতি তাঁরা হতে দেবেন না।

    প্রখ্যাত কবি এবং লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’। সেই সময়ের যুবামনকে বোঝার, তাকে তুলে ধরার সূচনা ছিল সত্যজিৎ রায়ের। ওঁর চিত্রনাট্য, মূল উপন্যাসের থেকে অনেকটাই বদলে যায়, যা লেখকের পছন্দ ছিল না। যেমন মূল চরিত্রগুলির শ্রেণি অবস্থান বদলে দিয়েছিলেন মানিকদা। সুনীলের উপন্যাসে বেকার যুবকেরা বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়ে বসেছিল। কিন্তু ছবিতে দেখা গিয়েছে চারজন মধ্যবিত্ত একটি গাড়ি করে জঙ্গলে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে তিনজনেরই কাজ রয়েছে, একজনের তো গাড়িও রয়েছে।

    অরণ্য শাসনের খেয়ালে…

    সম্ভবত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির (যা তিনি নিজেও এবং যাদের তিনি ভাল বুঝতেন) ভিতরের ফাঁপা দিকটাকে সত্যজিৎ রায় তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে যাঁদের কোনও তালজ্ঞানই নেই, ধারণা নেই নিজেদের কাজকর্মের প্রভাব কতদূর পর্যন্ত পড়তে পারে তাঁদের উপর, যাঁদের তাঁরা সাংস্কৃতিক এবং বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে নীচু তলার ভেবে এসেছে। এক্ষেত্রে যাঁরা এলাকার সাঁওতাল এবং চৌকিদারের পরিবার।

    এই ছবিতে সত্যজিৎ বুঝবার চেষ্টা করেছেন নতুন প্রজন্মকে যাঁরা আপাত এক শূন্যের মধ্যে রয়েছে। যাঁরা ছবি-সময়ের অনেকটাই কাটিয়ে দিচ্ছে দাড়ি কামানো আর না কামানো নিয়ে! তারা কিছু পাওয়ার চেষ্টা করছে প্রাণপনে কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হচ্ছে। বাড়ছে হতাশা। কী যে চাইছে সেটাই তারা ভাল করে জানে না, কীভাবে তা পাবে সে তো অনেক পরে কথা।

    আবার অন্য দিক থেকে দেখতে গেলে এই ছবি চারজন শিক্ষিত যুবকের এক রোম্যান্টিক কমেডি, যারা নাগরিক কোলাহল থেকে হাঁফ ছাড়তে অরণ্যে আশ্রয় নিয়েছে। অরণ্যের সেই দিনরাত্রি কীভাবে এই যুবকদের বদলে দিল, সেটাই ছবির কেন্দ্রীয় প্লট। যা শুরু হয়েছিল প্রবল উচ্ছ্বাস আর হই-হল্লার মধ্যে দিয়ে তা শেষ হল চারজনের মধ্যে তিনজনের জীবনের পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে। এই পরিবর্তনের পিছনে রয়েছেন দুজন নারী, যাঁরাও ছুটি কাটাতে ওই জঙ্গলে আসেন। ওই চার যুবকের মধ্যে অসীম নিঃসন্দেহে সবচেয়ে নিকৃষ্ট অবস্থায় রয়েছে। সে সর্বদা উচ্চম্মন্যতায় ভোগে, অধস্তনদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে, এদিকে সবচেয়ে বুদ্ধিমান এবং নিজের জীবন নিয়ে হতাশ। সর্বদাই তার মনে হয়, যে কোনও কারণেই হোক সে পিছিয়ে পড়ছে। সঞ্জয় একটু মুখচোরা, শান্ত। ফলে সমঝোতায় সদাপ্রস্তুত। মেয়েদের সঙ্গে মিশতে লজ্জা পায়। হরি একজন স্পোর্টসম্যান। অন্য দুজনের মতো তার মেধাবী সাজার কোনও ভান নেই। তার একটা বালকসুলভ সৌন্দর্য রয়েছে, যা সে তুখোড়ভাবে মেয়েদের সঙ্গে কাজ লাগায়। একটা হীনম্মন্যতা তার ভিতর রয়েছে, যাকে সে কাঁধ ঝাঁকিয়ে ঝেড়ে ফেলতে চায়। অন্যদিকে শেখর একটি আমুদে, কুছ পরোয়া নেহি ধরনের চরিত্র। সবেতেই ওস্তাদি দেখাতে চায়, পাক্কা জুয়াড়ি। এই চরিত্রটিতে অসাধারণ অভিনয় করে গিয়েছেন আমার বন্ধু রবি ঘোষ। তাঁর এবং কাবেরীদির অভিনয় বোধহয় এই ছবিতে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট।

    আমুদে, কুছ পরোয়া নেহি ধরনের চরিত্র

    এই যুবকদের সবচেয়ে বেশি যেটা আকর্ষণ করে অরণ্যের আদিমতা, যেটা তারা এতদিন বইয়ে পড়ে এসেছে। সাঁওতাল নারী-পুরুষেরা একসঙ্গে মহুয়া পান করছে, তাদের খাটো পোশাক দেখে উত্তেজিত হয় যুবকেরা। এক সমালোচকের কথায়,সত্যজিৎ রায়ের এই ছবিতে নারীদের নির্মাণ করা হয়েছে এক উঁচু মাপের নৈতিক সংবেদনশীলতার প্রেক্ষিতে। আর পুরুষেরা যেন অসহায় শিশু। ‘নায়ক’-এর মতোই এই ছবিতেও আমি যেন বিবেকের ভূমিকায়। সাধারণভাবে সমস্ত মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে অসীম তুখোড় আত্মবিশ্বাসী হলেও, এই শহুরে মেয়েটি অর্থাৎ আমার চরিত্র অপর্ণার মন তাতে গলছে না। কোনও কিছুতেই আগ বাড়িয়ে বিচার না করার মানসিকতা, সাধারণ জ্ঞান এবং অসীমের চরিত্রের ভাল দিকগুলিকে ছুঁতে পারার ক্ষমতা— অপর্ণার এই সব গুণের সামনে অসীম বোকা বনে যায়। অপর্ণার মাধ্যমে সে নিজের মানবিক সত্তাকে আবিষ্কার করে।

    অপর্ণার ব্যক্তিত্বের সামনে অসীম বোকা বনে যায়

    অন্য স্তর থেকে দেখলে এই ছবি শহুরে শ্রেণির দেউলিয়াপনা এবং বিষণ্ণতাকে চিহ্নিত করেছে। সাম্রাজ্যবাদের সাংস্কৃতিক দুর্ভাগ্য যেন তাদের উপর বর্তেছে। নাগরিক জীবনযাত্রা কীভাবে আমাদের প্রকৃতির থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়, আমাদের নৈতিকতায় ঠুলি পরিয়ে দেয়— এই ছবিতে সে কথাও বলা হয়েছে। যারা একটি অরণ্য অথবা সূর্যাস্তের দৃশ্যকে পশ্চিমের তুলনা ছাড়া প্রশংসা করতে পারে না, তারাই আবার নিজেদের সাংস্কৃতিক দিক থেকে নিজেদের উচ্চম্মন্য ভাবে। পাশাপাশি দেখা যায় স্থানীয় আদিবাসীদের টোল না পড়া এক সৌন্দর্য-বিভা। বুঝতে অসুবিধা হয় না শহরের মানুষেরা কতটাই না কৃত্রিম।

    এই গোটা বিচ্ছিন্নতার ধারণাটি আমাদের দেশের থেকেও পশ্চিমের দর্শক ভাল বুঝেছিলেন। প্যারিস এবং নিউ ইয়র্কে ঠাসা দর্শকের মধ্যে ছবিটি চলেছে। ওঁরা রবিদার কাজে মুগ্ধ হন। যতবার তাঁকে পর্দায় দেখা গিয়েছে, দর্শকেরা ফেটে পড়েছেন হর্ষে।

    ছবির শেষটিও একবারে মানানসই। চারজনই ফিরে যাচ্ছে. কিন্তু প্রত্যেকে ফিরছে নতুন মানুষ হিসাবে, অনেক মানবিক বোধ নিয়ে। কেবলমাত্র যে-কে-সেই রয়ে গিয়েছে শেখর।

    আরও একটি সূক্ষ্ম কিন্তু ভয়ের ইঙ্গিত দেওয়া রয়েছে ছবিতে। খুব বেশিদিন এই অরণ্যও আর আগের মতো থাকবে না। আজ আমরা দেখি এই আদিবাসী বলয়ের অধিকাংশ জায়গাতেই অশান্তি। এই অশান্তি তৈরির পিছনে অত্যন্ত লোভী শহুরে মানুষের নিশ্চয়ই একটি ভূমিকা রয়েছে। চৌকিদারকে ঘুষ দেওয়ার পর অসীম তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলেছিল, ভাগ্যিস দুর্নীতি ছিল। ওই কথাগুলো আজও যেন ক্ষত তৈরি করে। এত বছর পর আজ দেখি আমাদের জঙ্গলগুলো আর আগের মতো শান্ত স্বর্গাদপি নেই। বহু বছর পর গৌতম ঘোষের ওই একই চরিত্রগুলিকে নিয়ে তৈরি করা ‘আবার অরণ্যে’ ছবিটিতে দেখানো হয়েছে, হিংসা গোটা জীবনযাপনকেই কীভাবে বদলে দিয়েছে।              

    চার অভিনেতাকে কিছু নির্দেশ দিচ্ছেন পরিচালক সত্যজিৎ

    এখানে আরও একটি বিষয়, উল্লেখের দাবি রাখে। সেটি হল সঞ্জয় এবং জয়ার ওই দৃশ্য। যদিও অতি সূক্ষ্মতার সঙ্গে তার একাকীত্মকে বোঝানো হয়েছে, কিন্তু গোটা ছবি জুড়ে জয়া মূলত হাসিখুশি, অতিথিপরায়ণ। ফলে হঠাৎ করে তার আবেগের বিস্ফোরণ যেন দর্শককে অবাক করে দেয়। তার অতৃপ্ত বাসনা এবং মরিয়া হয়ে ওঠাকেই ফুটিয়ে তোলে। কিন্তু সঞ্জয় এতটাই ছাপোষা ও লাজুক, যে সে জয়াকে শান্ত করতে পারে না। মুহূর্ত পার হয়ে যায়, জয়া ফিরিয়ে নেয় তার চোখের জল। ছবির সবচেয়ে গভীর দৃশ্য এটি এবং কাবেরীদিও অসাধারণ কাজ করেছেন।

    এই ছবি নিয়েও আরও একটি বলার মতো কথা হল, সেই প্রথম মানিকদা নিজে ক্যামেরা চালিয়েছিলেন। সুব্রত মিত্র আর ইউনিটে ছিলেন না। যে মুন্সিয়ানায় মানিকদা মেমরি গেম-এর দৃশ্যটি তুলেছিলেন তা এক জিনিয়াসের কাজ। একটি মুখ থেকে অন্য মুখে ক্যামেরা সরে সরে যাচ্ছে, বড় ক্লোজআপ শট নিয়ে আবার পিছিয়ে যাচ্ছে— ট্রলিতে ক্যামেরা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ছিল খুবই চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে ক্যামেরা ছিল অ্যারিফ্লেক্স-এর। সেটার মুভমেন্ট করা হলে, স্পষ্ট ছবি না আসার সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু মানিকদার হাত কাঁপেনি একবারও, অসাধারণ টাইমিং তো ছিলই। কোনও রিটেক করতে হয়নি। আলো চলে যাওয়ার আগে আমাদের হাতে কয়েক ঘণ্টাই মাত্র ছিল শুট-এর জন্য। তবে মানিকদা এবং আমরা প্রস্তুত ছিলাম, সময়ের মধ্যেই কাজ গুটিয়ে যায়। দৃশ্যটি তো আজ কিংবদন্তি হয়ে গিযেছে।

    জঙ্গলের মাঝখানে মেমরি গেম খেলার সেই বিখ্যাত দৃশ্য

    বড়ই মনস্তাপের বিষয় যে ছবির কতজন অভিনেতা এবং কলাকুশলী আজ আর নেই। কাবেরীদি, শুভেন্দু, শমিত, বংশীদা, মানিকদা এবং এবার সৌমিত্র। দিগন্তবিস্তৃত আকাশের নীচে ছিপাদহরের সেই প্রাচীন অরণ্যের বুকে যে আনন্দ উল্লাসময় দিনরাত্রি আমরা একসঙ্গে কাটিয়েছিলাম, তার স্মৃতিচারণের জন্য প্রায় কেউই আর রইল না। এক বোতল মহুয়া নিয়ে এসেছিলাম স্মৃতি হিসাবে। কিন্তু তার গন্ধের চোটে বাড়ির অন্য বাসিন্দারা নাজেহাল। শেষপর্যন্ত আমাকেও সেটা ফেলে দিতে হয়েছিল।

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook