ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • নজর যার, মুলুক তার


    মালবিকা ব্যানার্জি (Malavika Banerjee) (August 14, 2021)
     

    সমালোচনা— চলচ্চিত্র: ‘দ্য ক্যুরিয়র’
    মুখ্য চরিত্রে— বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ
    , মেরাব নিনিদজে, ব়্যাচেল ব্রসনাহান
    , জেসি বাকলি, অ্যাংগাস রাইট
    পরিচালক—
    ডমিনিক কুক

    একগুচ্ছ প্রতিভাবান, সুদর্শন ইংরেজ অভিনেতা যখন জেমস বন্ড-এর চরিত্রটি পাওয়ার জন্য একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা করছেন, তখন বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ নিজেকে এই দৌড় থেকে দূরে রেখেছেন। বরং তিনি তখন ‘দ্য় ক্যুরিয়র’ সিনেমায় গ্রেভিল উইন, একজন নিতান্ত সাধারণ ব্যবসায়ীর ভূমিকায় অভিনয় করে ০০৭-কে সাত গোল দিচ্ছেন। গ্রেভিল আদতে একজন ইংরেজ ব্যবসায়ী, কিন্তু ব্রিটিশ গুপ্তচর হিসেবে ১৯৬০-এর সোভিয়েত রাশিয়ায় প্রবেশ করে, এবং ধীরে ধীরে সোভিয়েত রাশিয়ার পারমাণবিক গুপ্ত-নথি নিজের ব্রিফকেসে ভরে সিআইএ এবং এমআই১৬-এর হাতে তুলে দেয়। 

    ডমিনিক কুক-এর পরিচালনায় ‘দ্য ক্যুরিয়র’ সিনেমাটি ষাটের দশকের ঠান্ডা লড়াইয়ের পুরনো সেই আমেজটা ফিরিয়ে দেয়। চারদিকে সন্দিগ্ধ চোখ, লুকনো ক্যামেরা, ‘দেওয়ালের কান আছে’-এই বিশ্বাসে জড়ানো সিনেমাটা বিখ্য়াত স্পাই-নভেল লেখক লে কেয়্যার আর কিম ফিলবি-র (ব্রিটিশ ইনটেলিজেন্স অফিসার, যিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করতেন) কথা মনে করিয়ে দেয়। সিনেমাটা খুব জটিল ভাবে গল্পটা বলে না, এর সম্পদ হল  অসাধারণ অভিনয়, আর এমন সাউন্ডট্র্যাক, যা ১৯৬০-এর দশকের গোড়ার দিকের ছবিগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়। 

    সিনেমাটি শুরু হয় লেনিন-এর একটি মূর্তির ঠান্ডা দৃষ্টি নিয়ে, একটি বড় থিয়েটার হলে, যেখানে নিকিতা ক্রুশ্চেভ সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব ও ক্ষমতার আস্ফালন শানিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন তাঁর মিলিটারি অফিসার এবং অনুগত আধিকারিকদের সামনে। অন্য দিকে, লৌহ-পর্দার থেকে বহু বহু মাইল দূরে লন্ডনে উইন, ব্যবসাসূত্রে বহু দেশে যাতায়াত করা লোক, তার কথার জালে মক্কেলকে মোহিত করে ব্যবসা ধরার চেষ্টা করে।  গ্রেভিল উইন-এর ‘ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতা’ হল আকন্ঠ পান করে চলার ক্ষমতা। গ্রেভিল-এর চেহারা বেশ মোটাসোটা, তার স্ত্রী এবং ছেলে তাকে বিশেষ পাত্তা দেয় না, এমনকী সে নিজেও নিজেকে তেমন গুরুত্ব দেয় না। ফলে এমন অত্যন্ত সাধারণ এবং তৎক্ষণাৎ ভুলে যাওয়ার মতো একটি চরিত্র  সিআইএ এবং এমআই৬-এর কাছে ওলেগ পেনকভস্কির-র সঙ্গে যোগাযোগ রাখার আদর্শ লোক হয়ে ওঠে। ওলেগ পেনকভস্কি, সোভিয়েত ইউনিয়নের একজন মিলিটারি ইনটেলিজেন্স অফিসার, নিজের জীবন এবং পরিবারের জীবন বিপন্ন করে, কারণ সে ভয় পায়, বেপরোয়া ক্রুশ্চেভের আঙুল নিউক্লিয়ার সুইচটার ওপর থাকলে পৃথিবীই বিপন্ন। 

    ওলেগ পেনকভস্কির ভূমিকায় মেরাব নিনিদজে (সামনে, বাঁ-দিকে) এবং সিআইএ অফিসার এমিলি ডনোভান-এর ভূমিকায় ব়্যাচেল ব্রসনাহান (সামনে, ডানদিকে)

    অধিকাংশ দর্শক তো জানেনই কাম্বারব্যাচ কত বড় অভিনেতা, ‘দ্য ইমিটেশন গেম’-এর মতো ছবিতে তো তার স্বাক্ষর আছেই, কিন্তু এই ছবির আবিষ্কার হলেন জর্জিয়ান অভিনেতা মেরাব নিনিদজে, যিনি তাঁর পেনকভস্কির চরিত্রের বহিরঙ্গের নির্বিকার ভাবের আড়ালে একটা অদ্ভুত মানুষিকতার উষ্ণতা চারিয়ে দেন। চরিত্রটি একটি দমবন্ধ জীবনে শৃঙ্খলিত, কিন্তু স্বপ্ন দ্যাখে, মন্টানা-য় গিয়ে অন্য জীবন কাটাবার। যে দৃশ্যে সে অপেরায় ক্রুশ্চেভের দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকায়, এবং যে দৃশ্যে লন্ডনের একটি পাব-এ চাবি চেকার্স-এর  ‘লেটস টুইস্ট আগেন’-এর সঙ্গে বাঁধনছাড়া নাচে, তা দর্শকের মনে থেকে যায়। আর কাম্বারব্যাচের সঙ্গে মেরাবের রসায়নটাও চমৎকার। গল্পটা ভর করেই আছে এই দুজনের সম্পর্কের টানাপড়েনের ওপর, যে দুই চরিত্র নিজেদের চেয়ে অনেক বড় মাপের ঘটনাবলির স্রোতে পরস্পরের কাছে আসতে বাধ্য হয়েছে। দুই অভিনেতাই খুব ভাল অভিনয় করেছেন, বিশেষত ‘সোয়ান লেক’-এর পারফর্ম্যান্সের সময় দুজনেরই অভিনয় একেবারে তুঙ্গে ওঠে। কুক একটা অসামান্য দৃশ্য নির্মাণ করেন, যা ব্যালে নাচের মাধ্যমে দুই চরিত্রের সমস্যাটাকে প্রতিফলিত করে।

    গ্রেভিল উইনের ভূমিকায় বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ এবং শিলা উইনের ভূমিকায় জেসি বাকলি

    দুটো ছোট ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বিখ্যাত ব়্যাচেল ব্রসনাহান ও অ্যাংগাস রাইট, যথাক্রমে সিআইএ এবং এমআই সিক্স এজেন্টের ভূমিকায়। আর কাস্টিং টিম-কে বিশেষ নম্বর দিতেই হবে, কারণ তাঁরা এমন একজনকে খুঁজে বার করেছেন, যিনি আশ্চর্যভাবে, প্রায় অস্বস্তিকর ভাবে, অবিকল ক্রুশ্চেভের মতো দেখতে।

    সত্য়ি ঘটনা অবলম্বনে সিনেমা দেখার একটা মজা হল, ইন্টারনেট ঘেঁটে মূল চরিত্রদের সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে চেষ্টা করা। সৌভাগ্যের বিষয়, ‘বে অফ পিগস’ মিসাইল সঙ্কট নিয়ে অনেক কিছুই খুঁজে পাওয়া যাবে, পেনকভস্কি ও উইন বিষয়েও। এই চরিত্র দুটো ফুটিয়ে তোলার জন্য অভিনেতাদের কয়েকটা অন্য়রকম অস্ত্র ব্যবহার করতে হয়েছে। কাম্বারব্যাচ নিজেকে বদলে ফেলেছেন শাররীরিক ভাবে, একবার তিনি খুব মোটা, আবার একবার খুব জীর্ণশীর্ণ, বিশেষত দ্বিতীয়ার্ধে তাঁর অপমানের অনুভূতিটা বোঝাতে। নিনিদজে তাঁর নিজের গভীরে হাতড়ে তুলে এনেছেন ভয়, ঘৃণা ও জয়ের অনুভূতি, সূক্ষ্ম আঁচড়ের অদলবদলে।

    পরিচালক কুককে অভিনন্দন জানাতে হয়, তিনি সত্যিকারের মস্কো ও লন্ডনকে তুলে এনেছেন। জন এফ কেনেডির সত্যিকারের বক্তৃতার ফুটেজ ও রাষ্ট্রপুঞ্জের আর্কাইভ থেকে সত্যিকারের ফুটেজের ব্যবহার ছবিটাকে ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত দিয়েছে। 

    ‘দ্য কুরিয়ার’-এর সঙ্গেই দেখা যেতে পারে ‘দ্য ডেথ অফ স্টালিন’ ছবি, যা একটা বিদ্রুপাত্মক ডার্ক কমেডি, রিলিজ করেছিল কয়েক বছর আগে নেটফ্লিক্সে, আর ‘চের্নোবিল’ সিরিজ, রিলিজ করেছিল হটস্টারে। সোভিয়েত ইতিহাস নিয়ে সিনেমা মাধ্যমটির আকর্ষণ কমার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবে সোভিয়েতকে ‘চের্নোবিল’-এর মতো অতটা অন্ধকার ও বীভৎস হিসেবে দেখায় না এই কুরিয়ার। আর, এই ছবিটাতে রাশিয়ান সংলাপ ব্যবহার করার মধ্যে এই ইঙ্গিত থাকে, বিশ্বচলচ্চিত্র ওই সময়টার আরও বাস্তবানুগ চিত্রায়নের দিকে চলেছে।   

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook